About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, August 21, 2010

সত্যি-মিথ্যের গপ্পো

[অনুবাদ। গুগল বুকসে বই সার্চ করতে গিয়ে এই লোককথাটি পেলাম। ইংরিজি নাম "The Old Lady in the Cave" , তবে লোককথাটি কোন দেশের তার উল্লেখ ছিল না। ঈষৎ মেল-শভিনিজম আছে। কি আর করা যাবে। লোককথা এমনই হয়]

এক যে ছিল ছেলে। আর ছিল এক মেয়ে। গোলা ভরা ধান, দীঘি ভরা মাছ, অতিথ-স্বজন, ভজন-পূজন, সাত-মহলা বাড়ি – তাদের কিচ্ছুটি নেই অভাব। তবুও ছেলের বাউন্ডুলে স্বভাব। একলা বসে দীঘির পাড়ে আকাশ-পাতাল ভাবে। মনেতে নাই সুখ। দেখে মেয়ের ভয়েই কাঁপে বুক।

“আচ্ছা শুনি, ব্যাপারটা কি তোমার?”, শুধোয় মেয়ে, “সারাটা দিন আপন মনে অতই বা কি ভাবো? এমন বাড়ি, জমিদারী, লোকে মান্যি করে কত! কোথায় তোমার মন? মুখের কাছে খাবার ধরি – মাছের মুড়ো, মন্ডা-মেঠাই, গব্য ঘৃতে তপ্ত ভাজা লুচি। কিচ্ছুতে নেই রুচি! মেজাজ যেন লাট সাহেবের নাতি! গা জ্বলে যায় দেখলে এমন উলটপানা বাতিক!”

“একটি কথাই ঘুরে ফিরে আসে আমার মনে।”, বললে ছেলে, “‘সত্য’ কোথায় থাকে? তার মুখের কেমন আদল? কোন দেশেতে বসত বারোমাস? কেমন ধরন, কেমন চলন, কেমন বেশবাস? জানতে বড় সাধ হয় রে মেয়ে! কে জানে কোথায় লুকিয়ে আছে পথের বাঁকে! অথবা কোন দীঘির মায়ায়, স্তব্ধ নিবিড় হিজল ছায়ায় পাতার ফাঁকে! ছুঁতে গেলেই হারিয়ে যায় শিশিরফোঁটা! তার খোঁজেতেই আমার ছোটা।”

“মরনরোগে ধরছে তোমায় ছোঁড়া! খণ্ডাবে কে লিখন তোমার পথে পথেই ঘোরা! তবে যাওয়ার আগে হিসেব-নিকেশ চোকাও ষোলোআনা। টাকা-কড়ি, গয়না-গাঁটি, জমির মালিকানা – প্রাপ্য বুঝে নেবো। তারপরেতে যাও যেখানে খুশী। খোঁজ নেবো না মোটে। কপাল আমার! এমন মানুষ আমার ঘরেই জোটে!”

যেমন কথা, সেইমত কাজ। তালুক-তুলুক, মালুক-মুলুক – যা কিছু তার ছিল, লিখে দিয়ে মেয়ের নামে, ছেলে বেরোয় পথের টানে। কুয়াশালীন পাহাড়ি পথ, তরুণ উপত্যকা, আলো-ছায়ার মায়াবী দিন, রামধনুতে ঢাকা – পেরিয়ে গেল। তারপরেতে মস্ত শহর, ব্যাস্ত সবাই ভারী, ঝলমলানো আলোর মালা, আকাশ-ছোঁয়া বাড়ি – দেখলো তাও। তবুও ছেলে সত্য পায় না খুঁজে। পথ দেখাল সাঁঝের পিদিম, সবুজ মোড়া মখমলী গ্রাম, ছোট্ট নদী খামখেয়ালী, বেগুনী ফুল অচেনা নাম – যেইখানে যায় – সবজেটে-নীল বনের ধারে, ঝিনুক-ছেঁচা সাগরপারে, জোছনাহীন অন্ধকারে ঢেউ আছড়ায় খরস্রোতা – কোত্থাও নেই, যার খোঁজেতে এতটা পথ, সেই মেয়েটা কোত্থাও নেই!

দিনের পর দিন কাটে। মাসের পর মাস। পথের পর পথ বয়ে যায়। ছেলের মলিন বেশবাস। এইভাবেতে অনেক দিনের, অনেক পথের শেষে, সন্ধ্যা যখন তারার আলোয় মেশে, ক্লান্ত ছেলে থামল এসে পাহাড়চুড়োয়। একলা সে দেশ নিথর কালো আকাশ ছোঁয়া। পাথর ঘেরা অপরিসর ছোট্ট গুহা। সেই গুহাতে বাস করে এক বুড়ি। ফোকলা বুড়ি, একখানি দাঁত মোটে। শনের নুড়ি চুলের গুছি পিঠ ছাপানো, জোলো হাওয়ায় উড়ছে এলোমেলো। হাড় ক’খানি চামড়া দিয়ে ঢাকা, তীক্ষ্ণ সে মুখ – ছেলে দেখতে পেল। কে এই বুড়ি! কুদর্শনা, দৃষ্টি কেমনতর! ভাবছে ছেলে। এমন সময় বাড়িয়ে হাত, শীর্ণ আঙুল, হলদেটে নখ দীর্ঘ অতি – বুড়ি তাকে ডাকছে ইশারাতে। ছেলেও তখন বেভুল কেমন, চলছে বুড়ির পিছু পিছু, গুহার পথে। আনমুনি গান গাইছে বুড়ি, অবাক সে সুর, শোনেনি কেউ কোথাও। বলছে কথা ছেলের সাথে, গলার আওয়াজ নদীর স্বরের মত, নিখাদ নিটোল, জগতে যা কিছু খাঁটি, বুড়ির গলায় পড়ছে ঝরে, অটুট পরিপাটি। একেই খুঁজতে আসা – বুঝল ছেলে। পাহাড়-নদী-অরন্যপথ, অথই সাগর, নীল জনপদ – অনেক ঘোরার পরে, এবার পেলাম দেখা। ‘সত্য’ বলেই চিনছি তাকে। নিখুঁত স্বরলেখা।

ছেলে ক’দিন সেইখানেতেই থাকে। প্রশ্ন যত জমাট ছিল মনে, চলা-ফেরায় আনা-গোনায় একলা ঘরের কোণে, শুধোয় তাকে। সত্য-বুড়ি যত্ন করে বোঝায়। ছেলের মনে পোষ মেনেছে ঝড়, শুনে কাঁচের মত স্বচ্ছতোয়া, অপূর্ব সে স্বর। দিন কেটে যায়, মাস কেটে যায়। বছর ঘোরার পরে, ভাবছে ছেলে, এবার বাড়ি টানে, ফিরব দেশে। বিদায় নিতে বুড়ির কাছে আসে।

“অনেক কিছু শিখেছি তোমার কাছে”, বলছে ছেলে, “এবার ঘরে ফেরা। ফেরার আগে আমায় বল বুড়ি, যদি কোন ইচ্ছে থাকে তোমার, যদি কোন কাজে লাগতে পারি?”

ফোকলা বুড়ি ঘাড় বেঁকিয়ে ভাবে। প্রাচীন নখের ইশারাতে আবার তাকে ডাকে। “শোনো হে ছেলে, ফিরবে যবে ঘরে, বলবে যখন আমার কথা বন্ধু-স্বজনেরে, সেসব কথা কেমন হবে বুঝতে ভালোই পারি। আমার কেমন মুখের গড়ন, চামড়া কোমল কিনা, হাসলে পরে মুক্তো ঝরে নাকি, এসব নিয়ে চলবে বাড়াবাড়ি। দোহাই ছেলে, এই কথাটি রেখো”, সত্য-বুড়ি কাতর হেসে বলে, তীক্ষ্ণ চোখে আবেশ জড়ায় ভারী, জানায় মনের ইচ্ছে গভীর গোপন, “বোলো তাদের, সত্য হল চিকন, সুদর্শনা লাবণ্যময় যুবতী এক নারী।”

6 comments:

  1. নেটে কি হাততালী দেওয়া যায়? গল্পটা শেষ হবার পর সেই ইচ্ছেই হচ্ছিল।

    ReplyDelete
  2. darun ekta kaj korechhis to... :) ... khub bhalo hoechhe

    ReplyDelete
  3. galpota porar por asadharan laglo.ki sundar lekho tumi...aro aro likhte theko.bhalo theko.

    ReplyDelete
  4. সদ্যই খোঁজ পেলাম তোমার ব্লগের। পছন্দও হয়ে গেল খুব। এ'রম লোককথা আরো চাই।

    ReplyDelete
  5. গল্প না কবিতা? কেমন যেন ছন্দ গন্ধ/মিল!
    যাকগে, কথাটা হলো, অর্দ্ধসত্য সুন্দরী।

    ReplyDelete
  6. সব-সময় এমন হয় না।

    ReplyDelete