কাল অয়দিপাউসকে নিয়ে আঁতলামী করে ডায়েরী লিখলাম। সেটা পড়ে রাজাদাদা আমাকে এই গানটা দিল।
"এই যে হেরিলে চোখে অপরূপ ছবি
অরুণ গগনতলে প্রভাতের রবি
এই তো পরম দান, সফল করিল প্রান,
সত্যের আনন্দরূপ, এই তো জাগিছে
ক্ষত যত, ক্ষতি যত মিছে হতে মিছে,
নিমেষের কুশাঙ্কুর পড়ে রবে পিছে"
এই গানটা ভাবতে ভাবতে আমার ষোলো বছর আগের একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমি প্রথম বড়দের বই পড়ছি। বাড়িতে লুকিয়ে, অন্য বই-এর ভাঁজে – বুদ্ধদেব গুহ-র ‘সবিনয় নিবেদন’। মানুষের স্মৃতি কি অদ্ভুত! নিষিদ্ধ জগতে প্রথম পা রাখার সেই গোপন উত্তেজনা এখন আর কিচ্ছু মনে নেই। কেমন ছিল গল্প, কি হয়েছিল – সেসব কিচ্ছু না। শুধু কি করে জানি মনে থেকে গেছে – কোন একটা সময়ে মেয়েটা খুব বিভ্রান্ত ছিল, তখন লোকটা ওকে চিঠিতে লিখেছিল – মনে মনে এই দুটো লাইন বার বার গাইবে, গাইতেই থাকবে যতক্ষণ না বাকি সব ভুলে যাও –
“হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাই
সংসারে যা দিবে মানিব তাই
হৃদয়ে তোমায় যেন পাই”
ষোলো বছর আগে এই গানের মানে নিশ্চয়ই বুঝি নি। তখন যাবতীয় ‘মেনে নেওয়া’র প্রতি তীব্র বিদ্রোহ। আর দয়া! সে অনুভূতির সাথে পরিচয় সাদা-কালো টিভির পর্দায় বিদ্যাসাগর-রূপী পাহাড়ী সান্যালেই সীমাবদ্ধ। নিষিদ্ধ ফল চাখতে ব্যস্ত কৌতূহলী মন সেদিন গানটাকে মুখস্থ করে নিয়েছিল। আজ কেমন একবার মনে করতেই ধোয়া-মোছা ন্যাপথলিনে মোড়া স্মৃতিটাকে আমায় ফিরিয়ে দিল!
আমরা ভারী ভাগ্যবান – আমাদের দেশে একটা মানুষ জন্মেছিলেন যিনি দেড়শো বছর ধরে একটা জাতের ইমোশনাল ক্রাইসিস একা হাতে সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে, age-এ cage-এ rage-এ ও মঙ্গলে – এমন বন্ধু আর কে আছে, তোমার মত মিস্টার!
ন’বছর আগের কথা মনে পড়ে। তখন আমি বম্বে আই আই টি তে। জীবনে প্রথম একটা টেপ রেকর্ডার পেয়েছি। তাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গোটা চারেক ক্যাসেট শুনি। মাঝে মাঝেই মাঝ রাত্তিরে ল্যাব থেকে ফিরে লো ভলিউমে চালাতাম
“আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনই লীলা তব
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব”
কি বলব মশাই! অদ্ভুত বল পেতাম। অদ্ভুত! আমার একটু তারা দেখা বাতিক আছে তা তো জানেনই। সেই সব রাত্তিরে মনে হত, আমার জানলার ফাঁক দিয়ে ধরা দেওয়া এক চিলতে আকাশটায় বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে। যেন সব কটা আলোর কণা পাগলের মত পাক খাচ্ছে। সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত আর শান্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপর সেই শান্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একে একে সবকটি তারা আবার জ্বলে উঠত। সক্কলে মিলে বলত – এই তো আমরা! ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছি, জীবন নব নব!
আরও ছ’বছর পর জেনেছিলাম, সেই ছবিটার নাম Starry Night. আর তার আকাশে সব চেয়ে উজ্জ্বল যে তারাটা – তিনিই আমার রবি ঠাকুর।
গান শোনা যাবে এখানে
হৃদয়ে তোমার দয়া যেন পাইঃ http://www.in.com/music/search.php?type=song&search_data=Hridaye+Tomar+Daya+Jeno+Paai+Ashok
আমারে তুমি অশেষ করেছঃ http://www.in.com/music/search.php?type=song&search_data=Amare+Tumi+Asesh+Korechho
খন্ডিতাদের যাপিত জীবন
2 years ago
সারফিং করতে-করতে হঠাৎ এই সাইটটা দেখতে পেলুম । লেখাগুলো কাল থেকে পড়ছি । বেশ ভালো লাগল ।
ReplyDeleteমলয় রায়চৌধুরী
মুম্বাই
osadharon to :)
ReplyDeleteআপনি হয়তো জানেন না, "দেড়শো বছর ধরে একটা জাতের ইমোশনাল ক্রাইসিস একা হাতে সামাল" না দিলেও কারোর কারোর মনকে ইন্টেলেকচুয়ালি একটিভ করে দেবার ক্ষমতা আপনার লেখার মধ্যেও যথেষ্টই আছে।
ReplyDeleteaNdharer gaye gaye parosh tabo/sara raat foNtak tara nabo nabo/
ReplyDeletenayoner drishti hote guchbe kalo/ jekhanei porbe setha dekhbe aalo//