About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Wednesday, August 4, 2010

নেই মানুষ

আচ্ছা ধরা যাক, আমি নেই। ‘নেই’ মানে ‘নেই’ নয়। দিব্যি আছি। ভূত-টুত কিছু হই নি। খালি একটু বদলে গেছি। বলা যেতে পারে ‘নেই মানুষ’ হয়ে গেছি। হেই মানুষের জায়গায় নেই মানুষ। কালো-কোলো আধমনি চেহারার জায়গায় একটা মিষ্টি মত সবজ়ে ছায়া হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছি যে দিকে মন চায়। এই ইচ্ছে হল, রাস্তায় গড়াগড়ি খাওয়া পপি’স চিকেনের ফ্লায়ারটার সাথে এক পাক নেচে নিলাম। পরের মূহুর্তেই চড়ে বসেছি সিলভার ম্যাপেলের মগডালে। শ্রীমান কাকেশ্বরের পাশটিতে বসে গম্ভীর গলায় বলছি – ক্কঃ! আর সে ব্যাটা চমকে চিৎপাত। একরাশ হাওয়া দিল। ফুরফুরে চেরি ব্লসমের সাথে জড়িয়ে-মরিয়ে আমি সটান মাটিতে। ঘাসের বুকে শুয়ে মজাসে দেয়ালা করছি। একটা মভ রঙের ফ্রক পরা ঘোঁতন মত মেয়ে উদোল-বুদোল পায়ে আঁকাবাঁকা হাঁটতে হাঁটতে থুপুস করে পড়ল আমার ওপর। আর অমনি আমি ওর প্রজাপতি ক্লিপে আটকে গেলাম। তারপর আর কিছুতেই বেরোতে পারি না। আমাকে তো বসিয়ে দিয়েছে গাড়ীর পিছনে কার সিটে। আমিও চলেছি ওর সাথে সাথে আকাশ দেখতে দেখতে, বাতাস দেখতে দেখতে, সবুজ দেখতে দেখতে – রোদ্দুরের সাথে ছুটতে ছুটতে। একটিবারের জন্য রেস্ট এরিয়ায় দাঁড়িয়েছে গাড়ি। আর আমিও সেই সুযোগে ধাঁ! এক লাফে আকাশে উঠে গিয়ে এক টুকরো ছায়া হয়ে রোদ্দুরের বুকে লেগে রইলাম।

ওমা! শুনি লোকজনে বলাবলি করছে – কি আপদ! মেঘটাকে এখনই আসতে হল! কার্নিভালটা মাটি না হলে বাঁচি! কার্নিভাল? কোথায় কার্নিভাল? আমি কার্নিভাল দেখব! তরতর করে নেমে আসি আবার। নাগরদোলায় একটি পাক খেয়ে মাটি ছুঁই। দেখি একশো লোকের ভীড় জমেছে। মুখোস এসেছে আফ্রিকা থেকে। ইটালী থেকে ঘন বুনোটের ট্যাপেস্ট্রি। মরক্কোর চামড়ার ব্যাগ। জাপানী জলরং। অ্যাজটেক পুঁতির গয়না। সরগরম ব্যাপার একেবারে! আমি তক্কে তক্কে লেগে রইলাম এক ছবিওলার গায়ে আঠার মত। ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে সে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা ঘুরে বেড়ায় আর ছবি তোলে। কখনও সে চলে যায় জর্ডনে – শেষ সূর্যের আলো যখন পেট্রাকে গোলাপী আভায় মুড়ে দেয় তার চোখে পলক পড়ে না। চাঁদনী রাতে রাওয়ান্ডার জঙ্গলে বসে সে নীলনদের জন্মকথা শোনে। ইস্টার দ্বীপে পাহাড় সমান মানুষের মুখগুলোর নীচে দাঁড়িয়ে একমুঠি ধুলো ভরে নেয় তার চামড়ার পাউচে। রঙ-বেরঙের পাথর ছড়ানো কাসিদের বেলাভূমিতে আনমনা হাঁটে। ভারী কাজের মানুষ। এবারে যাবে দক্ষিণ আমেরিকায়। আমিও ওর সাথে ভেসে ভেসে চলি লিমা, লিমা থেকে কুজকো, কুজকো থেকে ইনকা ট্রেল ধরে হাঁটতে থাকি মাচুপিচুর দিকে। সারাদিন হাঁটি। সন্ধ্যে হলে তাঁবু খাটিয়ে জিরিয়ে নিই। অল্প অল্প চাঁদের আলো আর কুয়াশা মাখা আন্দিজ একরাশ রূপকথা বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। একদিন আমরা আকাশে পৌঁছোই। মাচুপিচুর সবুজ শিখর ধূসর নীল মেঘে ডুবে আছে। ওই ম্লান মেঘ আমায় ডাকে। আমি আমার ছবিওলার ঝোলা থেকে বেরিয়ে সেই বিষাদে মিশে যাই।

বাংলা দেশে তখনও আলো ফোটে নি। গুমোট রাতের শেষে আমি আকাশ ভরা কেদার হয়ে বাজতে থাকি। পায়ের তলায় পুরোনো শহর। আমার ফেলে আসা সব কিছু। কিছুটা চেনা, কিছুটা অচেনা। আমি অবিশ্রাম বৃষ্টি হয়ে ঝরতে থাকি আমার আধোচেনা অতীতে। মা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে বেরোতে গিয়ে দেখে থই থই করছে জল। সাবধানে শাড়ী বাঁচিয়ে রেললাইনের ধার দিয়ে হাঁটে মা। আমি মায়ের শাড়ীর আঁচলে লেগে থাকি। মায়ের পিঠে ছিটে ছিটে জলের কণা হয়ে জড়িয়ে থাকি মা-কে। ভিজে মাটির গন্ধ হয়ে মায়ের নাকে ভাসি। জলে ভিজে মায়ের অল্প অল্প সর্দি হয়। আমি এক টুকরো ব্যাথা হয়ে সারাদিন ঝুলতে থাকি আমার মায়ের গলা ধরে।

6 comments:

  1. :-) "amari chetonar ronge panna holo sobuj, chuni uthlo rnaga hoe..." ...daruuuuuuuuun hoechhe lekhata

    ReplyDelete
  2. কি মিষ্টি লেখা :) আমারও ইচ্ছে করছে 'নেই মানুষ' হতে৷

    ReplyDelete
  3. "ইচ্ছে ! –ইচ্ছে !
    সেই তো ভাঙছে, সেই তো গড়ছে,
    সেই তো দিচ্ছে নিচ্ছে।।
    সেই তো আঘাত করছে তলায়, সেই তো বাঁধন ছিঁড়ে পালায়–
    বাঁধন পরতে সেই তো আবার ফিরছে।। "

    ReplyDelete
  4. ei ..
    ami tibro protibad korchi. eirokom hoy na.
    e abar ki kotha ! nei manush !! :o :o

    ReplyDelete
  5. veeson veeson veeson sundor hoyechhe re...pray rupkathar moto lagchhe

    ReplyDelete
  6. আমাদের মতো যারা মুখ্যু-সুখ্যু মানুষ, তারা যখন ভাবে সেই ভাবনাটাকে লিখে শেয়ার করতে পারেনা, আর যখন চেষ্টা-চরিত্র করে দু-চার লাইন লিখেও ফেলে তাতে ভাবনার ছোঁয়া থাকেনা!

    আপনি ভাবতেও পারেন, আর সেই ভাবনাটা এমন অসাধারন সহজ ভাবে লিখে শেয়ার-ও করতে পারেন।

    যদি কোনোদিন উচিৎ মনে করেন, বাংলার ছোটদের আর কিশোর-কিশোরিদের কথা ভেবে লিখে বই আকারে বের করুন। বোধহয় ওদের কথা আজকালকার কবি-সাহিত্যিকরা ভাবতে ভুলে গেছেন।

    ReplyDelete