About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, February 21, 2015

আবার বছর কুড়ি পরে – ৯

 পঁচানব্বই সালে আমার চারুশীলার স্কুল জীবনে দাঁড়ি পড়ল। চুরানব্বই-এর ডিসেম্বরেই প্রিটেস্ট হয়ে গেল। তারপর আর খুব একটা স্কুলে যাইনি। মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশনে নামের বানান ভুল এসেছিল। ইলাদি আমায় নিয়ে গেলেন কলকাতায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে। স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে আবার বাড়ি এসে ফেরত দিয়ে গেলেন। চারুশীলার দিদিদের থেকে যা আদর পেয়েছি তা পরে আর কক্ষনো কোথাও পাইনি। ফিজিক্যাল এডুকেশনে খুব খারাপ করতাম। দীপিকাদি জোর করে আসন করাতেন। মায়ের সাথে একবার দেখা হয়েছিল। বলেছিলেন, ওকে স্কিপিং কিনে দেবেন আর দেখবেন রোজ যেন প্র্যাকটিস করে। সে এক প্রাণান্তকর অবস্থা। বিকেল হলেই মা ছাদে পাঠিয়ে দিত স্কিপিং করার জন্য। গল্পের বই পড়ার সময় নিয়ে টানাটানি। গীতাদির খুব চিন্তা ছিল সেলাই-এর পরীক্ষায় কিছুই পারবো না। আমার মা ছিল খুব নির্মম। কোনদিন একটা সেলাই নিজে করে দিত না, কারোর থেকে করাতেও দিত না। অনেকে প্রমাণ সাইজের সোয়েটার বানিয়েছিল। কি করে বানিয়েছিল ভেবে অবাক হই। আমি তো বাচ্চাদের সোয়েটারই শেষ করতে পারছিলাম না। অথচ মানিকে বললে একদিনে বুনে দিত। কিন্ত মা’কে এড়িয়ে সেই প্রস্তাব রাখার সাহস আমার হয়নি। এর ওপর ছিল ব্লাউজ, সায়া আর জাঙিয়া বানানো। সব হাতে সেলাই করতে হত। টেবিলক্লথের একটা কোনা বানিয়ে বাকিটা মুড়ে জমা দিয়েছিলাম। দিদি আপত্তি করেন নি। এর পরেও সব জিনিসের একটা করে ছোট স্যাম্পেল বানিয়ে খাতায় সাঁটতে হয়েছিল। ফাইনাল পরীক্ষায় এক্সটার্নাল এক্সামিনার ব্লাউজ বানাতে দিয়েছিলেন। আর কোন একটা এমব্র্য়ডারী ছিল, মনে পড়ছে না। কোন রকম কেলেঙ্কারী ছাড়াই উৎরে গেছিলাম।



তারপর হইহই করে মাধ্যমিক এসে গেল। শ্রীরামপুরের একটা স্কুলে সীট পড়েছিল। বাবার সাথে পরীক্ষা দিতে যেতাম। সেই প্রথম বাড়ি থেকে কেউ যাচ্ছিল পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা মিটে গেলে সন্দেশ-টন্দেশ খেতে পেতাম। বন্ধুদের সাথে বেশ অনেকটা বাসে করে যাওয়াও সেই প্রথম। অ্যাডিশনাল পরীক্ষার আগে চারদিন ছুটি ছিল। বাবা আমার জন্য “অপরাজিত” কিনে এনেছিল মাধ্যমিকের পর পড়ব বলে।আমি অ্যাডিশনালকে অ্যাডিশনাল হিসেবেই ধরলাম এবং ঐ চারদিন বিভূতিভূষন পড়ে কাটিয়ে দিলাম। পরীক্ষাটা ছিল দুর্ভাগ্যক্রমে ফিজিক্সের। অপুর জীবন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন এলনা। ফিজিক্স আমার যেটুকু মনে ছিল লিখে দিলাম। পরীক্ষা শেষ। নিশ্চিন্তি!



১২ই জুলাই, ১৯৯৫ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোয়। একাই রেজাল্ট দেখতে গেছিলাম স্কুলে। যখন বাড়ি ফিরছি দেখি আমার তুতাইয়া (মেজোপিসি) ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতে পাওয়া মাত্র চিৎকার দিল,বৌদি তিতুম এসে গেছে। মা-বাবা বাইরের ঘরে চুপ করে বসেছিল আর ঘড়ি দেখছিল। এর দুদিন পরেই ছিল আমার জন্মদিন। রেজাল্ট বেরোনো মাত্রই স্কুল-কলেজে ফর্ম দেওয়া শুরু হয়ে যেত। ১৪ তারিখে মা-বাবা দুজনে মিলে গেল কলকাতার কলেজে আমার জন্য ফর্ম তুলতে। সেই প্রথম একটা জন্মদিন এল যেদিন আমি একা একাই খাবার নিয়ে খেলাম। বড় হওয়ার প্রথম ধাপ ছিল সেটা।



বড় হওয়ার দ্বিতীয় ধাপে বিসর্জন দিলাম একটি ইচ্ছা। হয়তো কল্পনাদির পড়ানোর গুণেই আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল প্রাকৃতিক ভূগোল। বাড়ির সকলেরই ইচ্ছা ছিল আমি সায়েন্স পড়ব। আমারও সায়েন্স অপছন্দ নয়। কিন্তুআমি চেয়েছিলাম ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথের সাথে ভূগোল নিতে। বায়োলজি ভালো লাগত না। চারুশীলাতে সেই কম্বিনেশন ছিল না। কিন্তু দিদিরা আমার জন্য সেই ব্যবস্থাও করেদিলেন। তা সত্বেও চারুশীলাতে পড়া হলনা। কলকাতায় বেথুন আর ব্রেবোর্নে ফর্ম তোলা হয়েছিল। দুই জায়গাতেই চান্স পেলাম। ব্রেবোর্নের হোস্টেলের ইনচার্জ ছিলেন আমার এক দিদার বন্ধু। তাই আমাকে ব্রেবোর্ণে দেওয়াই ঠিক হল। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি-ম্যাথ এবং বায়োলজি। ভূগোল চিরকালের মত বাদ গেল কারিকুলাম থেকে। যোগাযোগ রইল শুধু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পাতায়। চারুশীলার শাড়ি এসে গেছিল। রাখী আমার শাড়িটা কিনে নিল। কমলা স্কার্ট পাড়ের শাড়ি। বড় প্রিয় রং কমলা।




“তাহার বাবা বলিল – তুমি বড্ড হাঁ করা ছেলে, যা দ্যাখো তাতেই হাঁ ক‘রে থাকো কেন অমন? জোরে হাঁটো।” 


বড় হওয়ার তৃতীয় ধাপে এসে পৌঁছলাম এমন এক জায়গায়, এমন এক পরিবেশে যেটা ছিল সম্পূর্ণ অচেনা। তিরিশ জনের ক্লাসে পাঁচটি বাংলা মিডিয়াম। বাকিদের পড়াশোনার ভাষাই তো শুধু আলাদা ছিল না। চলাফেরা, জামা-কাপড়, কথা বলার ভঙ্গি সবেতেই বিস্তর ফারাক। সেসব ডিঙিয়ে তাদের কাছে পৌঁছনো, ইংরিজি ভাষায় লেকচার শোনা ও নোট নেওয়া, উচ্চমাধ্যমিকের পাহাড়প্রমাণ সিলেবাস – যতখানি জোরে হাঁটার দরকার ছিল ততটা তো পারিনি। হাঁ করেই বেলা গেল। দ্বিপ্রহরে এসে খেয়াল হল পা চালাতে হবে। গন্তব্য তখনও বহুদূর। পথ ফুরোনোর আগেই যে সন্ধ্যা নামতে পারে এটাই বুঝলাম বড় হওয়ার তৃতীয় ধাপে। তবে সেই সাথে এটাও বোঝা গেল সব সময় পৌঁছনোটাই শেষ কথা নয়। হয়তো গন্তব্য বলে আসলেই কিছু নেই। কারন পথের যতটুকু চোখে দেখা যায় তা তো একটা খন্ডাংশমাত্র। সেই অবাঙমনসগোচর কখন কোথায় বাঁক নেবে তা কি কেউ বলতে পারে?

No comments:

Post a Comment