About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Friday, February 27, 2015

অস্থির সময়ের জার্নাল - ৩

 কাল রাতে রবীন্দ্রনাথের ১৯১৭ সালে লেখা ন্যাশনালিজম প্রবন্ধগুচ্ছ পড়ছিলাম। ১৯১৭ থেকে ২০১৬ - নিরানব্বই বছর হয়ে গেছে। দেখে গা শিরশির করে ন্যাশনালিজম নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সেদিন যে আশঙ্কার কথা লিখেছিলেন সেগুলো আজও ভীষনভাবে প্রযোজ্য। আজ এমন দিন এসেছে যখন এইটুকু পড়েই এমনকি রবীন্দ্রনাথকেও দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া যায়। সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই এই লেখা শুরু করছি। আমাদের সমস্যা হল রবীন্দ্রনাথকে আমরা ঠাকুর বানিয়ে দেরাজে তুলে রেখেছি। তাঁর বই পড়িনি, চিন্তার সাথে পরিচিত হইনি। যে মানুষেরা এই বইগুলো পড়েছেন এবং যাঁদের চিন্তায় এই উপলব্ধির ছাপ আছে তাঁদের তাই সিউডো সেকুলার, কমিউনিস্ট, দেশদ্রোহী ইত্যাদি বলে ব্রাত্য করে দেওয়া খুব সহজ হচ্ছে। দেশ জুড়ে অসংখ্য স্কলার অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন। মানুষ পাত্তা দেয়নি এবং তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেছে। এই স্কলাররাই বিদেশ থেকে দামী পুরস্কার নিয়ে এলে তাঁদের পুজো করা হবে। অথচ তাঁদের চিন্তাকে সম্মান দেওয়া হবে না।

মানুষ স্বভাবগত ভাবে আবেগপ্রবণ, পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী। এমনকি যাঁরা অব্রাহামিক ধর্মগুলোর অনুসারী তাঁরাও। অ্যাব্স্ট্রাক্ট চিন্তার ভার বহন করা খুব স্বস্তিদায়ক নয়। মানুষ তাই কোনও মূর্তিতে দেবত্ব আরোপ করে, অথবা কোনও কাঠের টুকরোয়, অথবা কোনও বইতে। এই পৃথিবীতে যতটুকু যা পাওয়া যায় আমরা কিন্তু ততটুকুই দেখি। তবে তাতে মন ওঠে না। তাই পৃথিবীর উপদানকে অপার্থিব বানানোর চেষ্টা চলে। আবারও ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রসঙ্গে আসবো। ঈশ্বর যদি সত্যিই মনের মধ্যে থাকেন তাহলে তাঁর সাথে কথা বলার জন্য মূর্তির সামনেও হাত জোড় করতে হয় না, প্রার্থনাঘরেও যেতে হয় না। যিনি সর্বভূতে আছেন এবং পরমকল্যাণময় তিনি দেশ-কাল-জাতির বিচার করে তাঁর পক্ষপাত প্রদর্শন করবেন এমন ভাবলেই বরং তাঁর অসম্মান হয়। উগ্র জাতীয়তাবাদও সেই খন্ডিত ঈশ্বরকে নিয়ে লোফালুফি খেলার একটা প্রচেষ্টা।
"ন্যাশনালিজম" প্রবন্ধ থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিই।


"India has never had a real sense of nationalism. Even though from childhood I had been taught that the idolatry of Nation is almost better than reverence for God and humanity, I believe I have outgrown that teaching, and it is my conviction that my countrymen will gain truly their India by fighting against that education which teaches them that a country is greater than the ideals of humanity."


এই জায়গাটা পড়ে বেশ স্বস্তি লাগে কারন আমিও ছোট থেকে দেশপ্রেমকে খুব উঁচু জায়গায় বসিয়েছি। দেশকে ভালোবাসি এই কথা স্বীকার করতে আজও আমার কোন কুণ্ঠা নেই। কিন্তু দেশ নামের মূর্তিটার পুজো করতে গিয়ে আমি কোথাও দেশের হৃদয়ের অবমাননা করে ফেলছি না তো? সেটা দেখা খুব জরুরী। ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখলাম কাল। ভিডিওর নাম "Kaun Afzal Guru? The Best Reply from Indian Soldier to the Anti Nationalists of #JNU"। ভিডিওতে দুটি সৈন্যকে দেখা যায় যারা সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে। এমন সময় কিছু গোলযোগ কানে আসে। একটি সৈন্য তার বন্দুকের নল ঘোরায় সেই গোলযোগের দিকে। অন্যজন বলে - ওদিকে বন্দুক ঘোরাচ্ছিস কেন? ঐদিকে তো আমাদেরই দেশ। যাদের দিকে বন্দুক তাক করছিস তারা তো আমাদেরই ভাই। অন্য সৈন্যটি উত্তর দেয় - "জিসনে হামারে মা কো দিল সে নিকাল দিয়া, উসকে সাথ সারে রিশতে খতম"। এই কথাগুলোর সাথে একজন ধর্মীয় মৌলবাদীর কোনও তফাৎ নেই। "দেশ-মা"য়ের জায়্গায় স্থানীয় ঈশ্বরদের বসিয়ে দিতে হবে শুধু। আরো একবার রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো দেখি ... "it is my conviction that my countrymen will gain truly their India by fighting against that education which teaches them that a country is greater than the ideals of humanity." খুবই দুঃখের কথা এই যে মানবতাকে আমরা এখনও দেশপ্রতিমার ওপরে বসাতে পারলাম না।


যাঁরা দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে JNUতে অ্যান্টিন্যাশনাল শিকার উৎসবে মেতেছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন "রোজা", "মিশন কাশ্মীর", "বর্ডার", "হায়দার" - এই সিনেমাগুলোর বাইরে কাশ্মীর নিয়ে একটুও পড়াশোনা করেছেন? বই কিন্তু আছে। এই দেশে এখনও কিছু কিছু স্কলার আছেন যাঁরা দেশটার ইতিহাসের চর্চা করেন। খুঁত ধরার জন্য নয়। ভালোবেসে। আপনি যেমন আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে চান, তার ভালো-মন্দ সব জানতে চান - কতকটা সেইরকম আগ্রহে ও ভালোবাসায়। এই মানুষগুলোকে দেশদ্রোহী বলে কাঠগড়ায় তুললে যে গুটিকয় মানুষ দেশটাকে বোঝার চেষ্টা করেছিল তাদেরও আপনি হারাবেন।


কাশ্মীর সমস্যা এমন কোন সমস্যা নয় যাতে যে কোন একপক্ষের মানুষকে আপনি কাঠগড়ায় তুলতে পারেন। পার্টিশানেরও অনেক আগে থেকে এই উপত্যকায় হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে। কখনও মুসলিম শাসক এসেছে, কখনও হিন্দু। এবং যখনই যে এসেছে অন্য সম্প্রদায়কে ছেড়ে কথা বলেনি। পার্টিশানের অব্যবহিত পরে গণভোট হওয়ার কথা ছিল। সেই ভোট বারবার ভেস্তে গেছে। কাশ্মীর সমস্যায় অবশ্যই বিদেশী মদত আছে। কিন্তু ভারত সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবিমৃশ্যকারীতা সেই সমস্যা জিইয়ে রাখতে অক্লান্তভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে। আশীর দশকের শেষ থেকে এই উপত্যকায় মিলিটারী শাসন চলে। এখানে বেড়ে ওঠা একটা শিশুর ছেলেবেলা আর ভারতের মূল ভূখন্ডে বেড়ে ওঠা আরেকটি শিশুর ছেলেবেলায় আকাশপাতাল তফাৎ। সেই তফাৎকে না জেনে, না বুঝে তাকে দমিয়ে রাখলে যে দানবের সৃষ্টি হয় তার পরিচয় আমরা পেয়েছি। শুধু আমাদের দেশে কেন, সারা পৃথিবীতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যুদ্ধ দিয়ে, অন্যায় ভোট দিয়ে, স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক লাভের আশায় তড়িঘড়ি কায়েম করা কোন সিদ্ধান্ত দিয়ে কোন সমস্যার সমাধান হয়না। দেশের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ তুললেই তার গলা টিপে মারা দেশপ্রেম নয়। আওয়াজ কেন উঠল সেটা খতিয়ে দেখা, তার সমাধানের চেষ্টা করা একজন সত্যিকারের প্রেমিকের কাজ। আপনার নিজের জীবনেই ভেবে দেখুন না। বাড়িতে আপনার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই কি আপনি তাকে খুন করতে যান? নাকি তার সাথে আলোচনায় বসেন?

No comments:

Post a Comment