About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Monday, February 16, 2015

আবার বছর কুড়ি পরে - ১

 স্কুলের প্রথম দিনের কথা তোদের মনে পড়ে? ফার্স্ট পিরিয়ডে ছিল বাংলা। শিখাদির ক্লাস। দিদিও তখন সদ্য জয়েন করেছেন। নতুন ছাত্রীদের প্রথম ক্লাস নতুন দিদিমনির সাথে। “ধনধান্য পুষ্পেভরা” পড়িয়েছিলেন মনে হয়। দিদির হাসিটা এত মিষ্টি ছিল! খুবভালো লেগে গেল নতুন স্কুলের নতুন দিদিমনিকে। নতুন নতুন বন্ধুও হল কয়েকজন। মৌমিতা অ্যাডমিশান টেস্টে সেকেন্ড হয়েছিল। ও এল আমাদের বি সেকশনের রোল নাম্বার ওয়ান হয়ে। তিনতলার বাঁদিকে লম্বা হলঘরটা পার্টিশান করে তিনটে ক্লাসরুম ছিল। ফাইভ বি আর সি পাশাপাশি।ফাইভ এ বসত দোতলায়। ফাইভের দুই সেকশনেরই চেঁচামেচিতে সুনাম ছিল। কিন্তু মাসিমা যখন সি সেকশনে ক্লাস নিতে আসতেন তখন গোটা তেতলায় পিন পড়লে শোনা যেত। ইতিহাস পড়াতেন বোধহয়,তাই না? আমাদের ইতিহাস নিতেন খুশিদি। খুব ভয় পেতাম খুশিদিকে। কড়া চোখে ইউনিফর্ম চেক করতেন কিনা! চারুশীলায় ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই আমার একটা নীল কেডস ছিল। স্কুলের ইউনিফর্মে যদিও সাদা কেডস লেখা আছে, তাও আমার বাবা আমাকে নীল জুতো পরিয়েই পাঠিয়ে দিল। ভাবল জুতো পরা নিয়ে তো কথা, রং যাই হোক না কেন! কিন্তু খুশিদির নজর এড়াবে কে।আমাকে মাঠে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। আমি ছিলাম ভারী বোকা। একটা কেডসের কত দাম হয় কোন ধারনা ছিল না তো! কিছুতেই বাবা-মাকে বলতে পারছি না কেডস কিনে দেওয়ার কথা। আর খুশিদির চোখকে ফাঁকি দেওয়াও অসম্ভব। রোজই নীল জুতো পরে যাই, রোজই দাঁড়িয়ে থাকি। অবশেষে আর থাকতে  না পেরে মা-কে বললাম। পরের দিনই এসে গেল সাদা কেডস। আমিও তোদের সাথে একসাথে ক্লাসে ঢুকলাম।


আমাদের ব্যাচে যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনায় সবচেয়ে ভালো ছিল তিন্নি আর কাশ্মীরা। ক্লাস ফাইভে তিন্নি এ সেকশন, কাশ্মীরা সি সেকশন। আমরা বি সেকশন কি করি! কে জানে কেন আমাদের মনে হল পুজোর ছুটি পড়ার আগেরদিন ক্লাসে ক্লাসে যে প্রোগ্রাম হয় সেখানে গাওয়ার জন্য “পুরানো সেই দিনের কথা” খুব অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হবে। চারমাস ক্লাস করেই কি এত পুরোনো কথা জমেছিল দেবা ন জানন্তি। মোটকথা গান হয়েছিল উপযুক্ত দরদ সহকারে। আর সেই সাথে কিশলয়ে পাঠ্য ছিল “পেটে খেলে পিঠে সয়” – সেটাই আমরা নামিয়ে ফেলেছিলাম ধুতি-টুতি পরে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নবনীতা (কে জানে কোথায় হারিয়ে গেলি!) ভুতুবাবু সাজল। আমরা চটপট আমাদের প্রোগ্রাম সেরে ফেলে অন্য ক্লাসে ঘুরতে গেলাম। তখনই শুনলাম – এ সেকশনে একটা মেয়ে আছে তিন্নি, সি সেকশনে একজনের নাম কাশ্মীরা – দারুন নাটক করেছে ওরা।


কি মজা আমার! পরের বছর সিক্স সি তে তিন্নি এল আমার সেকশনে। পুজোর বন্ধের আগেরদিন আমরা স্নো হোয়াইট করলাম। আমি রাজকন্যা। তিন্নি আমার সৎমা। কি দারুন অভিনয় করেছিল তিন্নি। প্রিয়াঙ্কা, তুই রাজকুমার হয়েছিলি, মনে আছে? আমি তো উত্তেজনার চোটে আপেল কামড়ে চিবিয়েও ফেলেছি। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভুলেও গেছি এই আপেল রাজকুমার এসে বার করবে আমার মুখ থেকে। বেচারা প্রিয়াঙ্কাকে আমার চেবানো আপেল বের করতে হল। সরিরে! তবে দেখ, তোকে কিন্তু আমায় কোলে তুলতে হয়নি। মুখ থেকে আপেল ফেলা মাত্র তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছিল রাজকুমারী, ঠিক কিনা?


ফাইভের গল্প যা যা মনে পড়ে সেরে নেওয়া ভালো। আরেকটু সবুর করে সিক্সে উঠব। অঙ্ক করাতেন ঝর্ণাদি। তখনও আমাদের সংখ্যাগুলো বাংলায় লিখতে হত। সিক্সে থেকে ইংরিজি সংখ্যায় অঙ্ক শুরু হয়। আজ এই গল্পগুলো কেমন প্রাগৈতিহাসিক লাগে না? কারোর বাচ্চাই বোধহয় বাংলা মিডিয়ামে পড়ে না। বাংলা সংখ্যা চেনে কেউ? অথচ আমাদের সময়ে ইংরিজি অ্যালফাবেট শেখানো হচ্ছিল ক্লাস ফাইভে। অনীতাদি নিতেন ইংরিজি ক্লাস। তারপর সিক্সে পড়াতেন ভূগোল। সেই আমার ভূগোলকে ভালোবাসার শুরু। অবশ্য আরেকজনের নাম না নিলে পাপ হবে।ফাইভ সি তে ভূগোল নিতেন কল্পনাদি। পার্টিশানের এপার থেকে কল্পনাদির গমগমে গলা শুনতে পেতাম। খুব হিংসে হত ফাইভ সি কে। কেমন গল্পের মত ভূগোল পড়তে পেত ওরা! আমাদের পড়াতেন কল্যানীদি। পরের বছর রিটায়ার করলেন। উনিও খুব ভালো ছিলেন। খুব স্নেহশীলা। এখনও মনে পড়ছে আমার ম্যাপের খাতায় কল্যানীদি নীল পেন্সিল দিয়ে ভারতের উপকূল দাগিয়ে দিচ্ছেন। নীল শিরা ওঠা রোগা ফর্সা হাত। আমার দিদার মত। নাকি দিদার মত নয়? দিদা রোগা ছিলনা অত। কিন্তু হাতের ধাঁচটা যেন দিদার মত। কল্যানময়ী? তখন তো ফটো তোলার রেওয়াজ ছিলনা। তাই বোধহয় আমাদের প্রিয় মানুষরা এমন কিছু মূহুর্ত তৈরী করে যেতেন, খুব যত্ন আর খুব ভালোবাসা দিয়ে, যাতে চোখ বুজলেই তাঁদের দেখতে পাওয়া যায়, ফটোর কোন দরকারই না পড়ে!

No comments:

Post a Comment