About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Tuesday, February 17, 2015

আবার বছর কুড়ি পরে - ৫

 ২রা জানুয়ারী ছিল চারুশীলা স্কুলের ফাউন্ডেশন ডে। আমরা বলতাম স্কুলের জন্মদিন।শীতের ছুটির পর আর সব স্কুল ২ তারিখে খুলে গেলেও আমাদের স্কুল খুলত তিন তারিখে।  ১৯৯৩ সালে স্কুলের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল। তখন আমরা ক্লাস এইট। পুজোর ছুটির আগে প্রতিবার যেমন ঘরে ঘরে অনুষ্ঠান হত এবার সে নিয়মের ব্যাতিক্রম হল।  দিদিরা বললেন ফাইভ থেকে সেভেন, এইট থেকে টেন আর ইলেভেন-টুয়েলভ এই তিন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে ছুটিপড়ার আগের দিন। যে ক্লাসের যেমন খুশি অনুষ্ঠান করতে পারবে। সময়সীমা পনেরো মিনিট। যাদের নাচ, গান, অভিনয় ভালো হবে তারা সুযোগ পাবে সুবর্ণজয়ন্তীর প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার।ক্লাস এইটের মেয়েরা তখনও ফ্রক পরলে কি হবে তাদের ঘরের অনুষ্ঠান দেখতে প্রতি বছর দিদিমনিদের আর অন্য ছাত্রীদের ভিড় হয়। বিশেষ করে যে সেকশনে তিন্নি আর কাশ্মীরা থাকে। লিপিকা খুব ভালো আবৃত্তি করতো।  সুদর্শনার গানের কথা তো আগের পর্বেই বললাম। মিঠুও খুব ভালো গাইতো। আলপনা দিত। মোট কথা ট্যালেন্টের কমতি ছিল না। রবীন্দ্রনাথের “দুর্বুদ্ধি” গল্পটাকে নাট্যরূপ দিয়ে ফেললাম।গল্পটা আমাদের সহায়ক পাঠে ছিল বলে সকলেরই পড়া ছিল। কাস্টিং, ডিরেকশান, অভিনয়ে তিন্নি আর কাশ্মীরার জুড়ি ছিল না। মেয়ে হারানো এক চাষীর ভূমিকায় শর্মিলাও ফাটিয়ে দিল। ফলস্বরূপ দেখা গেল আমাদের গ্রুপে আমরা ফার্স্ট হয়েছি।  


পুজোর ছুটির শেষে স্কুল খোলার কিছুদিনের মধ্যেই সুবর্ণজয়ন্তী প্রোগ্রামের রিহার্সাল শুরু হয়ে গেলো। পুরো অনুষ্ঠানসূচী এখন আর স্মরণে নেই। আমি, তিন্নি আর কাশ্মীরা স্থান পেলাম “তাসের দেশ” নাটকের অভিনয়ে।  যদ্দুর মনে পড়ে স্বপ্নাদি নাটক পরিচালনা করেছিলেন। গান পরিচালনা করেছিলেন লাইব্রেরিয়ান মঞ্জুদি। তবে স্বপ্নাদি আর মঞ্জুদি ছাড়াও রিহার্সালের সময় আরো অনেকে আসতেন। বলাকাদি অনেক নাচ তুলিয়ে দিয়েছিলেন। কলিকাদি,মালাদি, বাংলার মঞ্জুশ্রীদি নিয়মিত থাকতেন। মালবিকাদি, লীনাদি, জ্যোৎস্নাদি এসে দেখে যেতেন। পুরো স্কুল জুড়েই তখন উৎসব উৎসব ভাব। আমরা যারা নাটকে ছিলাম তারা মাঝেমাঝেই শেষের দুটো পিরিয়ডে ছাড় পেয়ে যেতাম। সে ছিল উপরি পাওনা।


নাচে তো অনেকেই। কিন্তু ক্লাস নাইনের রূপাঞ্জলীদি ভালো নাচিয়েদের মধ্যেও ছিল স্বতন্ত্র। নাচের ব্যাকরণ কিছুই বুঝি না। তবু বলতে পারি রূপাঞ্জলীদির নাচে যে স্বতঃস্ফুর্ততা ছিল, যে মুক্তি ফুটতো তা ছিল দুর্লভ। রূপাঞ্জলীদিকে রাজপুত্রের চরিত্র দিয়ে স্বপ্নাদি একটুও ভুল করেন নি। “যাবই আমি যাবই, ওগো বাণিজ্যেতে যাবই” – রূপাঞ্জলীদির নাচ আমার এখনও চোখে লেগে আছে। নায়ক-নায়িকা রুইতন আর হরতনীর পার্ট করেছিল রাখীদি আরঝুমুরদি। এরা দুজনেই তখন ইলেভেনে পড়ে। ভীষন ভালো নাচে। নাটকের রিহার্সাল দিতে দিতেই আমি রাখীদির ফ্যান হয়ে গেলাম। রাখীদি স্কুল ছাড়ার পরেও যোগাযোগ ছিল। তারপর আস্তে আস্তে সুতো ছিঁড়ে গেল। ( কোথায় হারিয়ে গেলে রাখীদি?) আমি ইস্কাবনীর পার্ট পেয়েছিলাম। একদম নাচতে পারতাম না। আমাকে তাস বংশের জাতীয় সঙ্গীত “চিঁড়েতন হরতন ইস্কাবন”-এর নাচ তোলাতে তোলাতেই দিদিদের ঘাম ছুটে গেল। স্বপ্নাদি বললেন, তোকে আর “বল সখী বল তার নাম আমার কানে কানে”র সাথে নাচতে হবে না। তুই মেঝেতে বসে প্রসাধন করবি,পারমিতা (টেক্কানী) তোর চারপাশে ঘুরে নাচবে। আমিও বাঁচলাম, দিদিরাও বাঁচলেন। এমনকি অনুষ্ঠানের দিন পারফর্মান্সের পর স্বপ্নাদির থেকে প্রশংসাও পেয়ে গেলাম। কাশ্মীরা আর ইলেভেনের একটা দিদি ছক্কা- পঞ্জা করেছিল। তিন্নি বোধহয় দহলানী করেছিলি, তাই না রে?


সে সময় থুতনির নিচে ডানদিক ঘেঁসে তিলকে সৌন্দর্জের পরাকাষ্ঠা মানা হত। আমরা বলতাম বিউটি স্পট। প্রোগ্রামের দিন মেকআপের সময় যারা মেয়ের রোল করছি তারা প্রায় সকলেই একটা করে বিউটি স্পটের বায়না ধরলাম। একসাথে অতগুলো একই জায়গায় তিলযুক্ত মেয়ে সম্ভবত তার আগে কেউ দেখেনি। তিনদিনের প্রোগ্রাম ছিল। তাসের দেশ অভিনয় হল প্রথমদিনেই। বাবা-মায়েরা দেখতে এল। অনেক প্রশংসা কুড়োলাম। দ্বিতীয়দিনে এসেছিল রুমা গুহঠাকুরতার ক্যালকাটা ইউথ কয়ার। তার আগে এই রকম কোন গোষ্ঠীর প্রোগ্রাম দেখার সুযোগ হয়নি। নচিকেতা চক্রবর্তী তখনও নীলাঞ্জনা গান নি। সুমন চাটুজ্যে শুরু করেছেন বটে, কিন্তু মফস্বলে তাঁর আবেদনছিল সীমিত। সেদিন রুমা গুহঠাকুরতা যে গানগুলো গেয়েছিলেন তেমন গান আমি এর আগে শুনিনি। আস্তে আস্তে টের পাচ্ছিলাম একটা অন্য বাতাস বইছে। অচেনা হাওয়ার ঝাপটা লাগছে চোখেমুখে।


No comments:

Post a Comment