About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Monday, February 16, 2015

আবার বছর কুড়ি পরে – ২

 আচ্ছা আরেকটু লেখা যাক। মাসীমার কথা লিখি? বেশি তো লেখার নেই। আমরা যখন সিক্সে পড়ি রিটায়ার করলেন। খুব বেশি চেনার সুযোগ হয়নি। তবে ছিল বটে ম্যাগনেটিক পার্সোনালিটি।এক কথায় মাসীমা বনমালা দেবী – আমাদের বড়দি ছিলেন চারুশীলা স্কুলের ইন্দিরা গান্ধী।মস্ত বড় চশমা, ঘোমটায় ঢাকা মুখ। ওনাকে যে কেমন দেখতে ছিল একদম মনে নেই। গলার আওয়াজে খুব জোর ছিল এমনও নয়। তবুও বারান্দার এক প্রান্তে ওনার সাদা শাড়ীর পাড়টুকু দেখা গেলেও ছমছমে নৈঃশব্দ নেমে আসতো। টিফিনের সময় দোতলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেন।নিচের মাঠে মেয়েদের খেলা থামতো না, তবে খেলা হত সামলেসুমলে। তখনও শারীরিক কষ্ট করে পড়াশোনা করাকে গৌরবের বিষয় ধরা হত। শীতকালে সব ঘরে পাখা বন্ধ থাকত। গরম পড়ার পরেও সে পাখা সহজে চলত না। কতটা গরম সহ্য করা যায় তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা বেশ মজারই ছিল।শুধু আমরা তো নই, দিদিদের ঘরেও পাখা চলত না, মাসীমার ঘরেও না। তারপর মাসীমা একদিন পাখা ছাড়ার অনুমতি দিতেন। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচতাম।


সিক্সে আমার পাশে বসত রীনা। রীনার দিদি নন্দিনীদি, প্রিয়াঙ্কার দিদি পাপিয়াদি, সুচিরার দিদি রুচিরাদি তখন হায়ার সেকেন্ডারী দেবে। আমাদের দুনিয়াতে তখন টুয়েলভের ওপরে ক্লাস নেই,হায়ার সেকেন্ডারীর ওপরে ডিগ্রী নেই, আর এই কমলাপাড় শাড়ী পরা দিদিদের চেয়ে জ্ঞানী মানুষ কোত্থাও নেই।  একদিন নবনীতার সাথে ভারী তর্কহল রবীন্দ্রনাথ কতগুলো কবিতা লিখেছেন তা নিয়ে। টিফিন পিরিয়ডে রুচিরাদির শরণ নেওয়া ছাড়াগতি কি! রুচিরাদি বলে দিল তিন হাজার, আমিও নাচতে নাচতে ঘরে ফিরলাম। কোন জটিল এরর অ্যানালিসিসে আমার উত্তরটা রুচিরাদির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছিল।


বাংলা পড়াতেন মঞ্জুশ্রীদি। বড্ড ভালো পড়াতেন। দিদির ছোট মেয়ে পরমাদি সেবার হায়ারসেকেন্ডারী দিয়েছে আমাদের স্কুল থেকেই। সেবারে স্কুলের ম্যাগাজিনে পরমাদি একটা ভ্রমণকাহিনী লিখেছিল। কোন জায়গার গল্প ছিল সেসব কিচ্ছু মনে নেই। এটা ভেবে খুব অবাক হয়েছিলাম যে স্কুলের দিদিরাও বাড়িতে আমাদের মায়েদের মতই। মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যান, বকেন, রান্নাকরেন, এমন কি দরদাম করে জিনিসও কেনেন! আমার মা-ও অন্য একটা স্কুলের দিদিমনি। তাও আমি কেন এমন অবাক হয়েছিলাম কে জানে! আসলে সেই বয়েসটাই ছিল অবাক হওয়ার বয়েস। লীনাাদি ইতিহাস পড়াতেন।  তাপসী আর জয়তী খুব গড়গড় করে ইতিহাস পারত।  মহেঞ্জোদরোর কথা বলতেন দিদি, সুমেরীয় সভ্যতার কথা বলতেন। আনন্দমেলাতে মাঝে মাঝে সেসব নিয়ে লেখা বেরোতো। তখন তো আর জানা ছিল না চাইলে এসব নিয়েও পড়াশোনা করা যায়। ভালো কেরিয়ার মানে তখন শুধু ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার। ভালো রেজাল্ট মানে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ দেওয়া। অন্য কিছু যে হওয়া যায় তা জানাই ছিল না।


সঙ্ঘমিত্রাদি বায়োলজির টিচার হয়ে এলেন সিক্সেই। ক্লাস টেস্টের খাতায় মটরশুঁটি বা পদ্মফুল বা রুইমাছ বা অন্য কোন কিছু একটা এঁকে আমি দিদির প্রিয়পাত্রী হয়ে গেলাম। স্কুলের শেষ দিন পর্জন্ত খুব ভালোবেসেছেন আমায়। সেই সঙ্ঘমিত্রাদির ক্লাসে একবার এক কান্ড ঘটল। সিক্স সি র একজনের দাদা ক্লাস নাইনের এক দিদির জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল। সেই চিঠি ধরা পড়ে এবং ফলস্বরূপ সঙ্ঘমিত্রাদির বকুনি। সেসব দিন মোটেই আজকালের মত ছিল না। “প্রেম” একটা নিষিদ্ধ শব্দ ছিল, প্রেম করার কথা তো কল্পনায় আনা যায় না। খুব পাকা মেয়েরা ওসব কথা বলে, ওসব কাজ করে। কাজেই সঙ্ঘমিত্রাদি যা কিছু বকুনি দিলেন তার সবটাই সান্ধ্যভাষায়। উনিও “প্রেম” কথাটা উচ্চারণ করলেন না, আমরাও “কিচ্ছু বুঝিনি” ভালো মেয়ের অভিনয় করলাম। শুধু ক্লাসের শেষে সৌজন্যা মুখ টিপে হেসে বলল – আমি ব্যাপারটা বুঝেছি। 


অথচ দেখ, ফাইভে পড়ার সময়েই আমাদের এ সেকশনের একজনের বিয়ে হয়ে গেছিল। তার নাকি কিসব কুষ্ঠির দোষ ছিল, তাই তার তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কি রকম আয়রনি না?

No comments:

Post a Comment