About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, February 21, 2015

আবার বছর কুড়ি পরে – ৮

 লিপিকা, তুই আর আমি কৃষ্ণদার রিক্সায় স্কুলে যেতাম মনে আছে? বেশির ভাগ বন্ধুই হেঁটে বা সাইকেলে যেত। আমাদের বাবা-মায়েরা বোধহয় ভয় পেল মেয়েকে একা রাস্তায় ছেড়ে দিলেই প্রেম করতে শুরু করবে! অবশ্য ভয় নেহাৎ অমূলক নয়। স্কুলে যাওয়ার রাস্তার ওপরেই আমার ছ’বছরের স্কুল জীবনের একমাত্র হার্টথ্রব থাকতো। ঐ ছ’বছরে তার সাথে একটিবারও কথা বলিনি। কিন্তু তার বাড়িটা এলেই আমার অবাধ্য ঘাড় বার বার ডান দিকে বেঁকে যেতে চাইতো। আমি জোর করে ঘাড় সামলিয়ে তোর সাথে গল্প করতাম। চোখটাকে কিছুতেই শাসন করতে পারতাম না। রিকশার ঘোমটার ফাঁক দিয়ে সে ঠিক চঞ্চল হয়ে উঠতে চাইতো। বৈদ্যবাটি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর যতবার বাড়ি গেছি, মাঝে মাঝেই দেখতাম পঞ্চানন তলার মোড়ে রিকশা স্ট্যান্ডটায় কৃষ্ণদা রেলের পাঁচিলের ওপর বসে আছে। আমাকে দেখলেই রিকশায় তুলে নিত। আমায় হয়তো দরকার নেই, হয়তো হাঁটতেই ভালো লাগছে। কিন্তু সে কিছুতেই শুনবে না। পয়সা নিতে চাইতো না। তারপর যখন বলতাম, না নিলে মা বকবে তোমায়, তখন নিতো। বছর দুয়েক আগে বাড়ি গিয়ে শুনলাম কৃষ্ণদা মারা গেছে।



পঞ্চানন তলা পার করে বাঁদিকের গলিটায় ঢুকলেই কেমন শীতশীত করতো না? সরু গলি, উঁচুউঁচু বাড়ি ছিল অনেকগুলো। রোদ ঢুকতো না। তার ওপর একটা পুকুরও ছিল। ঐ গলিতে ঢোকার মুখে ডানদিকের বাগানে একটা বিশাল বড় মৌচাক ঝুলতো মনে পড়ে? স্কুলজীবনের শেষের দিকে, তখন আমরা শাড়ি পরি, ঐ মৌচাকে আগুন দেওয়া হয়। যেদিন যেদিন কৃষ্ণদা আসতো না, আমরা হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। দুপুর শেষ হয়ে তখন বিকেল হচ্ছে, রাস্তাঘাটে লোক থাকতো না একটাও। পঞ্চানন তলার ভাঙা মন্দির, তার ফাটল ধরা চাতাল এখনও মনে পড়ে। কোন কোন বাড়িতে তখনই স্টোভে আঁচ পড়ে যেত। কেরোসিনের স্টোভে চা হওয়ার গন্ধ আমাদের বাড়ি ফেরার দুপুরগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে।



পারমিতাকে মনে পড়ে? বোধহয় কুড়ি-বাইশটা বেড়াল ছিল ওর। স্কুলের খুব কাছে আমাদের যাওয়া আসার রাস্তার ওপরেই থাকতো ও। কিন্তু বেড়াল প্রীতির জন্য কিছুতেই ওর বাড়ি যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারিনি। লিপিকার বাবা আর আমার বাবা বন্ধু। তাই লিপিকার বাড়ি যেতাম ছোটবেলা থেকেই। একবার লিপিকার বাড়ি গেছি। ব্রেণভিটা খেলা হয়ে গেছে। কাকীমার দেওয়া ম্যাগিটাও শেষ হয়েগেছে। কিছুই করার পাচ্ছি না। কর্ণকাকু বলল, লিপিকা তুই একটা গল্প বল। লিপিকা বলতে শুরু করল, এক গ্রামে একটা বড়লোক আর ছোটলোক ছিল...। মানে বলতে চেয়েছিল গরীব, কিন্তু উপযুক্ত শব্দটা হাতের কাছে খুঁজে পায়নি। ব্যাস, কর্ণকাকুই এমন প্যাক দিতে শুরু করল যে ওর আর গল্প বলা হল না।



মাঝে মাঝে বেঙ্গল বুক হাউস থেকে কিছু কেনার দরকার হত।গীতাদির পছন্দ মাফিক রুমালের কাপড়, এমব্রয়ডারীর সুতো, ভূগোলের ম্যাপ পয়েন্টিং এর পেন একমাত্র ওখানেই পাওয়া যেত। যারা বাসে ফিরত বেঙ্গল তাদের রাস্তার ওপরেই পড়ত। আমাদের যেতে গেলে উলটো দিকে আসতে হত কিছুটা। রোজকার এক ঘেয়ে পথে একটু বৈচিত্র মন্দ লাগতো না। এখানেই আমি প্রথম বেবি পিঙ্ক কথাটা শুনি। ক্লাস নাইনে টেবিল ক্লথ বানাতে হত। বটল গ্রীণ টেবিল ক্লথের সাথে কি রঙের সুতো মানানসই হবে খুঁজতে গিয়ে বেঙ্গলের কাকু বলল, বেবি পিঙ্ক নিয়ে যাও – খুব ভালো লাগবে। আমার তখন বেশি মতামত ছিলনা। তাই নিয়ে এলাম। এখন ভাবতে গিয়ে মনে পড়ছে সেই সময় সবুজের সাথে গোলাপী, বেগুনীর সাথে কমলা কন্ট্রাস্ট করার খুব রেওয়াজ উঠেছিল। এটা কি হিন্দী সিনেমা থেকে এসেছিল?



আমার প্রধান সমস্যা ছিল আমি হিন্দী সিনেমা দেখতাম না। বাড়ি থেকে তো বারন করতোই। আমি নিজেও লুকিয়ে চুরিয়ে দু-একটা যা দেখেছিলাম ভালো লাগেনি। তখন অচেনা কোন সমবয়েসীর প্রথম আলাপেই সে জিজ্ঞেস করতো, তোমার কাকে ভালো লাগে? আমীর না সলমন? (শাহরুখ কি তখন অত পপুলার হয়েছিল?) ভালো লাগা তো দূরের কথা, আমি তো এদের চিনতামই না। হাম আপকে হ্যায় কৌন যখন এল রাখীর থেকে গল্পটা শুনে নিলাম। কুকুর এসে বিয়ের মীমাংসা করছে শুনে এমন ব্যোমকে গেলাম যে পরের কুড়ি বছরেও ঐ সিনেমা দেখার সাহস করে উঠতে পারলাম না। তখন নচিকেতা চক্রবর্তী আস্তে আস্তে পপুলার হচ্ছিল। মৌমিতা প্রথম ক্যাসেটের সব কটা গান মুখস্থ করে ফেলেছিল। আমি ওর থেকেই শিখেছিলাম। ঐ সময়েই রিলিজ করল রোজা। “দিল হ্যায় ছোটাসা”, “ইয়ে খুলা আসমান”, “রোজা জানেমন” তখন সর্বত্র বাজছে। আর ডি বর্মনের শেষ কাজ “১৯৪২ লাভ স্টোরি”ও কাছাকাছি সময়েই এল। “এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা”, “রিমঝিম রিমঝিম রুমঝুম রুমঝুম” “কুছ না কহো” – সবকটাই নব্বইয়ের প্রথম ভাগের মেলোডির চেয়ে অন্য রকমের ছিল। পুজো প্যান্ডেলে যে গানগুলো বাজে সেগুলো আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করছিল। এফেম চ্যানেলগুলোও ঐ সময়ে পপুলার হতে থাকে। আমার রেডিও ছিলনা। মৌমিতা ক্লাসে গল্প করতো। স্কুল জীবনের শেষের দিকে যা কিছু সাংস্কৃতিক চর্চা তার বেশির ভাগই হয়েছে দোতলায় নাইন এ-র সেই ঘরটাতে। আমরা চার মাথা ঘন হয়ে আছি – আমি, রাখী, মৌমিতা, শর্মিলা।



ক্লাস নাইনে আমরা সরস্বতী পুজোর দায়িত্ব নিলাম। আমি খুব একটা কাজ করেছিলাম মনে পড়ে না। গৃহস্থালীর ক্লাসে আমি তখনও একেবারেই ঢ্যাঁড়শ।  নাইন এ থেকে একটা দেওয়াল পত্রিকা বেরোল। নাম দেওয়া হল “সারণা” – সরস্বতীর বীণা। ছোটগল্প, কবিতা, ছবি, ভ্রমণকাহিনী – সাধারণত যা থাকে সে সবই ছিল। সব থেকে বড় সাইজের যে আর্টপেপারটা পাওয়া যেত সেটা ভরাট করা হয়েছিল হাতে লিখে।  ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লেখা হত। অনেক সময় বাড়িতেও নিয়ে আসা হয়েছে। রাখীর হাতের লেখা ভালো ছিল। রাখী লিখেছিলি কি? নাইন বি থেকে আর্ট এক্সিবিশন করেছিল। পুজোর দিন দেখতে এসেছিল সবাই। 



চুরানব্বইতে হইহই করে বিশ্বকাপফুটবল এসে গেল। প্রায় সারা ক্লাস ব্রাজিলের সাপোর্টার। রোজই রোমারিও আর বেবেতো নতুন স্টাইলে নাচে। আনন্দবাজারের ছবিটা ভালো, নাকি আজকালের তাই নিয়ে গবেষনা চলে। ওদিকে আমি আর জয়শ্রী এমন বিচ্ছিরি ভাবে বাজ্জিও’র প্রেমে পড়েছি যে দুই পিরিয়ডের ফাঁকে বা টিফিন পিরিয়ডে যেটুকু সময় পাওয়া যায় তার সবটাই ব্যয় হয় সেই সবুজ চোখের পনিটেলের আলোচনায়। সে বছর ভূগোলের সিলেবাসে যদি ইটালী থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে রেকর্ড মার্কস পেতাম। নীল রং গায়ে দিয়েও তখন কি সুখ! ফাইনালে আমাদের স্বপ্নের পুরুষ পেনাল্টি মিস করল। পরের দিন স্কুলে এসে আমি আর জয়শ্রী গলা জড়িয়ে কাঁদলাম।


চেনা দুঃখ, চেনা সুখ, চেনা চেনা হাসি মুখ

চেনা আলো, চেনা অন্ধকার...

চেনা মাটি, চেনা পাড়া, চেনা পথে কড়া নাড়া

চেনা রাতে চেনা চিৎকার...

No comments:

Post a Comment