About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Sunday, July 25, 2010

তাওবাদের তত্ত্ব-তলাশ

একটা কাজে নর্থ ক্যারোলাইনা গেছিলাম। ফেরার পথে র‌্যালে এয়ারপোর্টে একটা পুরোনো বই-এর দোকান আবিষ্কার করলাম। বেশ অনেক বই। চার-পাঁচ ডলার করে দাম। অ্যান আরবরে সেন্ট্রাল ক্যাম্পাসের রাস্তায় এক বুড়ো লোক যেমন পুরোনো বই নিয়ে টেবিল সাজিয়ে বসতেন তারই একটা বড়সড় সংস্করণ। তো সেই দোকানে এটা সেটা বই-এর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা বই হাতে উঠে এল – “দ্য তাও অফ পুহ”। লেখক বেঞ্জামিন হফ। পেঙ্গুইনের পাবলিকেশন। নেড়ে চেড়ে বুঝলাম সেটা তাওইজমের একটা বিশ্লেষণ। আর সেই বিশ্লেষণের কাজে উইনি দ্য পুহ-কে ব্যবহার করা হয়েছে একটা মডেল চরিত্র হিসেবে। আমার নানা রকমের ধর্মমত সম্পর্কে জানতে বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থগুলো এত গুরুপাক হয় যে কখনো শেষ পর্যন্ত পড়ে উঠতে পারি না। এই বইটার প্রচ্ছদে ঘুড়ি ওড়ানো উইনি দ্য পুহ-র ছবি দেখে মনে হল একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

“তাও” কথার মানে “দ্য ওয়ে” – পথ। কিসের পথ? বাড়ির সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে – যেখান দিয়ে রোজ ঘুম চোখে আপিস যাই, নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরি – আমার পথ চেনা বলতে সেটুকুই – আর শুনতে পাই হাজার হাজার মানুষ হাজার রকম ভাবে তারই কোটিখানেক ব্যাখ্যা ফেঁদেছেন! এই বইটাই যেমন শুরু হচ্ছে কনফুসিয়াস, বুদ্ধ আর লাও সুহ-র (তাওবাদী দার্শনিক) তুলনামূলক আলোচনা দিয়ে। তিন প্রৌঢ়কে এক চামচ করে ভিনিগার খেতে দেওয়া হয়েছে। ভিনিগার খেয়ে কনফুসিয়াসের মুখ সদ্য বউল ধরা আমের মত যখ্যি টক। জীবনের টকভাব সরাতে কনফুসিয়াস দাওয়াই দিলেন – “চল নিয়ম মতে, চল সমান পথে”। পুহ-র বয়েই গেছে অত নিয়মকানুন মেনে চলতে! সে বুদ্ধের মুখের দিকে তাকালো। তাঁর মুখ তেঁতো বিষ – জীবন ভারী দুঃখময়, মায়ার প্রলোভনে ভরা – নির্বাণেই মিলবে মুক্তি, বুঝলে ছোকরা! এসব কঠিন কথা পুহ-র এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গেলো। লাও সুহ-র দিকে তাকিয়ে দেখলো, তিনি হাসছেন আর আপনমনে গুনগুন করছেন - “এই তো ভালো লেগেছিল, আলোর নাচন পাতায় পাতায়, শালের বনের খ্যাপা হাওয়া এই তো আমার মনকে মাতায়... ওদের আছে অনেক আশা, ওরা করুক অনেক জড়ো, আমি কেবল গেয়ে বেড়াই, চাই না হতে আরো বড়”। পুহ নেচে উঠলো। বাহ! এতক্ষণে কেউ একজন নাচ-গানের কথা বলেছে। পুহ-র তো সেটাই কাজ। সকালে উঠে ফুরফুরে মেজাজে সে তার বন্ধু পিগলেট-কে বলে – ‘আহা অলম্বুশ! আজকে আমার মেজাজ বড়ই খুশ!’ চলো একটু ঘুরে আসা যাক! তারপর পুহ আর পিগলেট দুজনে মিলে নেচে-কুঁদে মধু খুঁজতে বেরোয়। পুহ-র বাকি বন্ধুরা অবিশ্যি ঠিক এইরকম নয়। খরগোশ যেমন ভারী চালাক-চতুর। সারা দুনিয়ার খবর তার নখদর্পণে। অন্য কেউ তার চেয়েও বেশী বুদ্ধিমান হয়ে যাবে এই তার বড় ভয়। আবার প্যাঁচাকে দেখো। সারাদিন ধরে সে প্রচুর পড়ে যাচ্ছে। জ্ঞানের পাহাড়। পৃথিবীতে কিছু আছে, আর প্যাঁচা সেটা জানে না – সে ভারী লজ্জা! ইয়র, মানে ওই ভুরু কোঁচকানো, সব সময় গুম হয়ে থাকা গাধাটা আবার আরেক রকম। সেও বিস্তর পড়াশোনা করে রেখেছে – আর সব কিছুতেই খুঁত ধরে যাচ্ছে। কিছুই ঠিক মনের মত হয় না তার।

বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে
– কি হে পুহ? কাজকর্ম নেই?
- নাহ! কাজ কি! দিনটা ভারী খাসা!
- তো?
- এমন খাসা দিনকে নষ্ট করার মানে হয়?
- সে কি হে! কোন জরুরী কাজে তো লাগাতে পারতে এমন পরিস্কার দিনটাকে!
- জরুরী কাজই তো করছি!
- কি রকম?
- শুনছি।
- কি শুনছো?
- পাখীদের গান শুনছি। তারপর দেখো, ঐখানে একটা কাঠবেড়ালী কেমন কিচিরমিচির করছে! ওর কথাও শুনছি।
- কি বলছে ওরা?
- ওরা বলছে – শোনো ভাই, তাক ধিনা ধিন তা! খাসা বটে আজকের দিনটা!
- এ আর নতুন কথা কি! এতো তুমি জানতেই!
- হুঁ, জানতাম। কিন্তু অন্য কেউও আমার মতই ভাবছে জানলে মনটা খুশী লাগে, ঠিক কিনা?
- তা হবে! তবে তুমি কিন্তু ভাই দিনটাকে অন্যভাবেও কাটাতে পারতে। এই ধরো রেডিওতে খবর শুনলে একটু! কত কিছু জানা যায় বলতো!
- রেডিও?
- হ্যাঁ, রেডিও। না’হলে জানবে কি করে বাইরে কি হচ্ছে?
- কেন? বাইরে বেরোলেই তো জানা যায়। এই যেমন আমি বেরিয়েছি এখন। পাখীরা বলছে – শোনো ভাই, তাক ধিনা ধিন তা! খাসা বটে আজকের দিনটা!


পুহ-র দিনগুলো এমনি ভাবেই কাটে। তাওবাদী দার্শনিকরা যার গালভরা নাম দেন – “the state of Uncarved Block” – আঁচড় কাটা হয় নি এমন পাথর। মন যখন এমন অবস্থায় থাকে তখন সত্য আসে সহজ ভাবে, শান্ত পায়ে, অনায়াসে – “জীবনপ্রান্তে হে নীরবনাথ, শান্ত চরণে এসো”। পুহ অবশ্য এত ভাবনাচিন্তার ধার ধারে না। পিগলেট-টা প্যাংলা আর কুচোমত হলে কি হবে, ভারী সুন্দর কথা বলেছে একখানা – “পুহ-টার বুদ্ধি-সুদ্ধি বিশেষ নেই, কিন্তু ও কারোর ক্ষতি করবে না কখনো। মাঝে মাঝেই বোকা বোকা কাজ করে ফেলে বটে, কিন্ত কি করে যেন সেই কাজগুলোই ঠিক-ঠাক সময়ে ঠিক-ঠাক কাজে এসে যায়।”

ইয়রের জন্মদিনের কথাই ধরা যাক। ইয়রের জন্মদিনের দিন পুহ আর পিগলেট ভাবলো ইয়র-কে কিছু দেওয়া যাক। পুহ-র মনে পড়লো এক শিশি মধু রাখা আছে ঘরে – সেটাই তো দেওয়া যেতে পারে ইয়র-কে। সে মধু আনতে গেলো। আর পিগলেট ভেবেচিন্তে বার করলো – জন্মদিনে ইয়রকে যদি একখানা বেলুন দেওয়া যায় ইয়র কি খুশীই না হবে! পিগলেট গেলো বেলুন নিয়ে আসতে। পুহ মধু নিয়ে ফিরছে আর শুনছে পাখীরা গাইছে – শোনো ভাই, তাক ধিনা ধিন তা! খাসা বটে আজকের দিনটা! ফুর্তির চোটে সে ভুলেই গেলো কোথায় যাচ্ছিল। হাতে মধুর শিশি, এমন খাসা দিন, একটু একটু খিদেও পাচ্ছে – সে মধুর শিশি খালি করে ফেললো। তারপরেই মাথায় বজ্রাঘাত – যাহ! মধু তো নেই! ইয়রের জন্মদিনের কি হবে এখন! যাই হোক, মধু নেই তো কি, মধুর শিশিটা তো আছে! সে শিশিটা নিয়ে প্যাঁচার কাছে গিয়ে বললো – এটাতে সুন্দর করে হ্যাপি বার্থ ডে লিখে দাও দিকি! প্যাঁচা অবিশ্যি লিখে দিলো খুশী মনেই। পুহ তখন খালি শিশি নিয়েই চললো ইয়রের বাড়ি। ওদিকে পিগলেট বেলুন নিয়ে ছুটতে ছুটতে আসছিল – আহা, যদি কোনক্রমে পুহ-র আগে পৌঁছে যেতে পারি তাহলে আমিই প্রথম ইয়রকে হ্যাপি বার্থ ডে বলতে পারবো – ফার্স্ট হওয়ার মজাই আলাদা! ভাবতে ভাবতেই ধপাস। পথে গর্ত ছিলো খেয়াল করে নি। বেচারা পিগলেট তো আছাড় খেলোই, বেলুনটাও ফুস করে ফুটো হয়ে গেলো। গুটলি পাকিয়ে যাওয়া রবারের টুকরোটা নিয়েই ও পৌঁছালো ইয়রের বাড়ি।
- ইয়র, তোমার জন্য একটা বেলুন এনেছিলাম হে!
- বেলুন? মানে ঐ বিশাল ফোলা ফোলা রঙীন বলগুলো? ট্রা লা লা লা! ট্রা লা লা লা! কই? কই? কই?
- ইয়ে মানে... বেলুনটা ফেটে গেছে। আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম ইয়র। আর তখনই বেলুনটা ফেটে গেলো।
- ফেটে গেলো? আমার বেলুনটা ফেটে গেলো? আমার জন্মদিনের বেলুনটা??
- হ্যাঁ, ইয়র।
এই বলে ফোঁপাতে ফোঁপাতে পিগলেট চুপসে যাওয়া রবারের টুকরোটা ইয়রের হাতে তুলে দিয়ে বলে – হ্যাপি বার্থ ডে ইয়র! ঠিক তখনই পুহ এসে ঢোকে।
- এই দেখো ইয়র, আমি তোমার জন্য কি এনেছি। কি সুন্দর শিশি দেখো! আবার তার ওপর হ্যাপি বার্থ ডেও লিখিয়ে এনেছি। পছন্দ নয়?
ইয়রের একহাতে খালি মধুর শিশি, অন্য হাতে চুপসে যাওয়া বেলুন। দুই বন্ধুর দেওয়া বার্থ ডে প্রেজেন্ট।
- আরে, দেখো দেখো! বেলুনের টুকরোটা শিশির মধ্যে ঢোকানো যাচ্ছে!
- বাহ রে! তাই তো! দেখেছো ইয়র, আমি কেমন তোমাকে একটা শিশি এনে দিলাম, যাতে তুমি পছন্দ মত জিনিস এনে রাখবে।
- আর আমার জিনিসটাও দেখো ইয়র, আমিও কেমন তোমাকে একটা প্রেজেন্ট দিলাম যেটা তুমি পুহ-র শিশিটার মধ্যে ভরে রাখতে পারবে।
ঠিকই তো! বেলুনটা যদি না ফাটতো, তাহলে কি সেটা শিশির মধ্যে ঢোকানো যেত! ভারী খুশী হয় ইয়র তার জন্মদিনের উপহারে। সে বারবার বেলুনটা শিশির মধ্যে ঢোকাতে আর বার করতে থাকে। কেমন কাজের শিশি যাতে ইচ্ছেমত জিনিস রাখা যায়! আর কেমন কাজের বেলুন যেটা ইচ্ছেমত শিশির মধ্যে ঢোকানো যায়!

এটাই তাওবাদ। জীবনকে তারই মত স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে মেনে নেওয়া। আগলি ডাকলিং-এর গল্পটা মনে আছে? আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা রাজহাঁস থাকে। সেটাকে শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু দুর্বলতা আছে, কিছু ত্রুটি আছে, কিছু না পাওয়া আছে। আবার একটা রাজহাঁসও তো আছে – যেটা আমাদের “Inner Nature”। তাতে বিশ্বাস রাখা। মরীয়া হয়ে কিছু বদলানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতেই পরিবর্তন আসবে – হঠাৎ করে একদিন পুকুরের জলে নিজের ছায়া দেখে চমকে উঠতে হবে – আরে! ‘এইটুকুনি মানুষগুলো এততো বড় কেমন করে হয়?’ তাও জানো না – বলবে পুহ – ‘তালুক-তুলুক-মালুক-মুলুক যত, চেংলি পাহাড়, গুম্ফি আরো কত, সব দেখেছি,’ গান গেয়েছি জোরে, জীবন জুড়ে সুর নিয়েছি ভরে। এবার জিরোই খানিক। যেইদিকে চাই, শুধুই দেখি মানিক। ভুল যা কিছু ছিলো, চৈতি রাতের মাদল নাচে কোথায় উড়ে গেলো! এইভাবেতেই থাকি। খড়-কুটো সব ধুলো-বালি বয়াম ভরে রাখি!

2 comments:

  1. এই যে এত সহজ স্টাইলে একটা অসাধারন বর্ননা আপনি দিলেন, সেটা কি মনের ভিতর থেকে খুঁজে নিতে হল না এই স্টাইলটা আপনার জীবনে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই এসেছে ?

    ReplyDelete
  2. pray bachhor 15 age narayan sanyaler lekha 'nakshatrloker devata'porar par tui 1paragraph er akta matamat likhechhili.eta pore setari anek anek parinato form bole mone hochchhe.sahoj chhandota asadharon hoyechhe

    ReplyDelete