বাঙালীর "খারাপ মেয়ে" সুপ্রিয়া দেবী চলে গেলেন। "শুভবিবাহ", "মেঘে ঢাকা তারা", "মন নিয়ে"র মত ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের পরেও মানুষের স্মৃতিতে তিনি ছিলেন শুধু সেই মেয়ে যার জন্য মহানায়কের সুখের সংসারে ভাঙন ধরেছিল। মজার বিষয়, সেই একই সম্পর্কে জড়িত পুরুষটিকে নিয়ে মানুষ কিন্তু কোনকালেই খুব একটা ক্রিটিকাল ছিল না। বাঙালীর চোখে পুরুষটি ছিলেন এক অসহায় স্বামী যিনি একটি মেয়ের ফাঁদে পড়েছিলেন। এই সমস্ত ঘটনাই যদিও আমার জন্মেরও আগে, তবু এর আঁচ পেতে আমার প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরও অসুবিধে হয়নি কারন নারীটি আমাদের কিশোরবেলায় লিখছিলেন তাঁর আত্মজীবনী "আমার জীবন, আমার উত্তম"। তিনি কেন "আমার উত্তম" বলবেন তা নিয়ে অসন্তোষ, তাঁর "আপনাদের দাদা" বলা নিয়ে বিদ্রুপ - এসবের মধ্যে দিয়েই আমরা বড় হয়ে উঠলাম। তিনি বিবাহিত স্ত্রী হলে এসব কিছুই বলা হত না এতে আমি নিশ্চিত। শেষ পেরেকটি পুঁতে দিল "মহানায়ক" নামের টিভি সিরিয়াল। নারীটির আদলে একজন অবাস্তব খলনায়িকা তৈরী করে তারা তাঁকে মাথা মুড়িয়ে, ঘোল ঢেলে সমাজের বাইরে পাঠিয়ে দিল। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অর্ধেক তখন "সিরিয়াল দেখিনা" বলে পাশ ফিরে শুয়ে ছিলেন, বাকি অর্ধেক বোধকরি নিজেদের চাকরী বাঁচাতে ব্যস্ত। আয়রনি হল, আজ তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমিও তো তাঁর উত্তম-অধ্যায় নিয়েই লিখছি। তাঁর অভিনয় প্রতিভা নিয়ে কিছু বলা ধৃষ্টতা, তবু উত্তম পরবর্তী যুগে তাঁর পারফর্ম্যান্স দেখে সন্দেহ জাগে তিনিও হয়ত ভালো অভিনেত্রী হওয়ার চেয়ে ভালো ঘরনী হওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছিলেন। নইলে "শুভবিবাহ", "মেঘে ঢাকা তারা", এমনকি "শুন বরনারী"র পরে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের কথা ভাবতে গেলেই কেন অতিরিক্ত মেক`আপ করা, কৃত্রিম বাচনভঙ্গীর এক অভিনেত্রীকে মনে পড়ছে যার সাথে একই মানুষের আগের কাজের কোন সাযুজ্য নেই! অবিশ্বাসী তো "যেখানে গেছেন ভালো থাকুন" জাতীয় অলীক আশ্বাস দিতে পারে না; অবিশ্বাসী বরং বলছে - বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যিনি এসেছিলেন, অথচ মানুষ যাঁকে মহানায়কের অবৈধ সঙ্গিনী ও ভালো রাঁধুনীর বেশি মর্যাদা দিল না, এমনকি যিনি নিজেও নিজের ওপর বিশ্বাস বজায় রাখতে পারলেন না, পূর্বমানুষ ও সহমানুষদের এই মূঢ়তার জন্য সে ক্ষমাপ্রার্থী। অবিশ্বাসী ভাবে, আসবে কি এমনদিন যেদিন মেডুসার চুলে সাপের ফণা দেখার সংস্কৃতি থেকে মানুষ বেরোবে!
খন্ডিতাদের যাপিত জীবন
2 years ago
No comments:
Post a Comment