About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Tuesday, January 2, 2018

নামহীন

 কাল একটা সিনেমা দেখলাম। সিনেমার নাম আফটার ইমেজ। পোলিশ সিনেমা। অ্যাশেস অ্যান্ড ডায়মন্ড খ্যাত আন্দ্রে ওয়াজদার শেষ কাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পোল্যান্ডে যখন কমিউনিস্ট শাসন, সেই সময়ে একজন শিল্পীর স্বাধীন চেতনাকে কিভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির সাথে এক ছকে বেঁধে ফেলার জন্য চাপ দেওয়া হয়, এবং সেই শিল্পী রাষ্ট্রীয় নীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে অস্বীকার করলে কিভাবে তাকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়া হয় তা নিয়ে গল্প। চেনা গল্প হলেও পরিচালনার গুণে বেশ ভালো লাগল দেখতে। তবে আজকে সিনেমার গল্প লিখতে বসিনি। বরং সিনেমাটা যে রেকমেন্ড করেছে তার কথা লিখি।

বাবা রিটায়ার করেছিল আমার প্রথম চাকরী পাওয়ার ঠিক একমাস আগে ২০০২-র মে মাসে। মা পাক্কা দশ বছরের ছোট। ২০১৩-র জানুয়ারীতে চাকরী জীবন থেকে মুক্তি মিলল। রিটায়ার করার পর কি করবে তা নিয়ে বাবা-মাকে কখনই আমাদের সামনে বা অন্য কারোর সামনে কোন পরিকল্পনা করতে শুনিনি। তারা দুজনেই বেড়াতে ভালোবাসে। ভারতের গ্রাম-গঞ্জ আমি যেটুকু চিনি সে তাদেরই দান। রিটায়ারমেন্টের পর আরো একটু বেশি বেড়াতে পারবে এটাই ভেবেছিলাম। অবাক হয়ে গেলাম যখন শুনলাম তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সে যোগ দেওয়ার জন্য ফর্ম তুলেছে। প্রতিবছর জুলাই-অগাস্ট মাসে এই কোর্স অফার করা হয়। রীতিমত সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া মেনে ছাত্র নেওয়া হয়। ২০১৩-এ আমার বাবা-মা যখন ফর্ম তুলল, তখন তাদের পাঁচটি ফিল্মের ওপর সংক্ষিপ্ত সমালোচনা লিখে পাঠাতে হয়েছিল। ফিল্মগুলো যে যার নিজের ইচ্ছামত বেছে নিতে পারে। বাবা কি ফিল্ম বেছেছিল আমার মনে নেই। মায়ের বাছা তিনটে ফিল্ম মনে আছে, কারন সেই তিনটেই আমি মাকে দেখিয়েছিলাম। বছর তিনেক আগে মা-বাবা যখন আমেরিকায় আমার কাছে ছিল, তখন আমরা মাঝে মাঝেই ফিল্ম দেখতাম একসাথে। লা স্ট্রাডা (ফেলিনি), চিলড্রেন অফ হেভেন (মাজিদ মাজিদি), আর ড্রিমস (কুরোসাওয়া) - এই তিনটে ছবি মায়ের খুব ভালো লেগেছিল। মা লিখেছিল এদের নিয়ে। বাবা অল্প বয়েসে নাটক ও ফিল্মের চর্চা করেছে। মায়ের এসব করার সুযোগই হয়নি কখ্নও। কিন্তু লিখতে পারে ভালো। দুজনেই নির্বাচিত হল। দেড়মাসের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সে রোজ সময়্মত গিয়ে সারাদিন থেকে অনেক কিছু শিখে এল। সহপাঠীরা, কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাও বয়সে অনেক ছোট। কিন্তু সেটা শিক্ষায় বাধা হবে এমনটা ভাবতেই পারেনি তারা। বাবা কোনকালেই গল্পগাছা করে না। মনে পড়ে, ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে সেদিন যে সিনেমা দেখানো হল তার কথা বলত মা। অনেক সময়েই সেই সিনেমা হয়ত আমাদের দেখা। আবার অদেখা সিনেমাও থাকত। তখন আমরা কাজাখ্স্তানে থাকি। টরেন্টে সিনেমা নামানোর স্বর্ণভূমি। অদেখা সিনেমার কথা জানতে পারলে নামিয়ে দেখে নিতাম। তারপর তা নিয়ে আলোচনা হত। মোটে দেড়মাসের কোর্স, কিন্তু ব্যাপ্তিতে অনেক। সিনেমা দেখা, আলোচনা, রিভিউ লেখা। রোজ বাড়ি ফিরে হোমওয়ার্ক নিয়ে বসত এই দুই রিটায়ার্ড শিক্ষক। ইতিমধ্যে মনোজ মিত্র একদিন মাকে আলাদা করে বললেন, আপনি বেশ লেখেন কিন্তু (এইটে প্রকাশ্যে না আনলেও চলত, কিন্তু লেখার লোভও সামলাতে পারলাম না)।
তারপর থেকে প্রতি বছরেই দুজনে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে নিয়ম করে। মাঝে এক বছর মায়ের পায়ের ব্যথাটা খুব বাড়ল। ভেলোরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হল। বাবা ফেস্টিভ্যালে একটা দুটো ফিল্ম দেখে ফিরে এল। বুঝতেই পারি একা দেখে আনন্দ পাচ্ছে না। এবছর আবার যেতে পেরেছে দুজন একসাথে। প্রতিদিন ফিরে এসে কি কি সিনেমা ভালো লেগেছে লিখে পাঠিয়েছে আমাদের। যে সিনেমার কথা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম সেটা এই রেকমেন্ডেড সিনেমার একটা। অধিকাংশই গত দু-তিনবছরের সিনেমা। বিদেশী ভাষার নতুন সিনেমা এই দেশে বসে যোগাড় করা চাপ। এই সিনেমাটা অ্যামাজনে কিনতে পাওয়া গেল, তাই দেখা হল। বাকিগুলো কি হবে জানি না। একসময় মাকে সিনেমা দেখাতাম, এখন মা আমাকে সিনেমা রেকমেন্ড করছে। এসব ভেবেই মনটা খুশী খুশী লাগছে।
"আনন্দাৎ জায়তে বিশ্ব, আনন্দাৎ পল্যতে তথা, আনন্দাৎ লীয়তে বিশ্ব, আনন্দ পরিপুরতঃ"

No comments:

Post a Comment