About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Thursday, March 5, 2020

৮ই মার্চের গল্প

 ৮ই মার্চের গল্প (আজ সময় পেয়েছি, তাই আজকেই)

১৯৮৯র মে মাসে আমি চারুশীলা বসু বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেবছর আমার সাথে যারা ক্লাস ফাইভে বসতো তাদের সবার বয়েস এখন চল্লিশ। এদের মধ্যে দুইজন এবং আরও একজনকে নিয়ে আজকের গল্প।
আমি ছিলাম ফাইভের বি সেকশনে। পুজোর ছুটি পড়ার দিনে স্কুলের সব ক্লাসের সব সেকশনে কিছু না কিছু প্রোগ্রাম হত। নাচ, গান, নাটক - যা খুশি। সেবারে ছুটির পড়ার দিনেই শোনা যেতে লাগলো ফাইভের এ সেকশনের একটা মেয়ে ফাটিয়ে অভিনয় করেছে। এমন নাকি দেখা যায় না সহজে। সিক্সে সি সেকশনে জায়গা হল। কি সৌভাগ্য! সেই গুণের পাহাড় মেয়েটা সেবছর আমার সাথে একই সেকশনে। সেবারে আমাদের সিক্স সি-র ছোট্ট ঘরে টিচাররা, উঁচু ক্লাসের দিদিরা ভীড় করে পুজোর ছুটির প্রোগ্রাম দেখতে এলেন। তুষার কন্যা আর সাত বামনের গল্প নিয়ে নাটক হয়েছিল। হিংসুটে রাণীর চরিত্রে আবারও চমকে দিয়েছিল তিন্নি। '৯৫ সালে স্কুল ছাড়ি। ততদিন পর্যন্ত প্রতি বছরেই কালচারাল প্রোগ্রাম এই মেয়েটাকে ছাড়া ভাবা যেত না। '৯৫ এর পর ২০১৭। বাইশ বছরের ব্যবধানে আবার যোগাযোগ নিয়মিত হল। ততদিনে তিন্নি গিন্নী হয়েছে। একটা টুসটুসে অসোগোল্লাও এসে গেছে পৃথিবীতে। ২০১৮তে স্কুলের কয়েকজন বন্ধু একসাথে ছুটি কাটাতে গেলাম কলকাতার কাছেই এক টুকরো ছোট্ট সবুজে। তিন্নির থেকে জানলাম ওর কেকশপের স্বপ্নের কথা। তখনও স্বপ্নই। রান্না করতে ভালোবাসে। বাড়ির লোকজন, বন্ধুদের জন্য তো দুহাত ভরে করেই। শখটাকে যদি জীবিকায় রূপ দেওয়া যায়! আমি আর মিঠুন মিলে কেকশপের নামও ভেবে ফেললাম। তবে তখনও সবই ভাবনার স্তরে। কি ধাতুতে তৈরি এ মেয়ে কে জানে, চল্লিশে পা দিলে চালশে হওয়াই দস্তুর। কিন্তু তার বদলে চল্লিশটা জানলা যেন খুলে গেল। আত্মবিশ্বাস, কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনীক্ষমতার ঝোড়ো হাওয়ায় যাবতীয় গড়িমসী গেল কেটে। দোকান বাড়ি এখনও আয়ত্বে আসেনি। কিন্তু বাড়িতে অর্ডার নেওয়া শুরু হয়ে গেল। আমাদের ব্যাচের ছেলেগুলোও সব সোনার টুকরো। এরা চিরাচরিত রীতিতে চল্লিশে পৌঁছে মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগে না। বরং জীবনসঙ্গিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তার স্বপ্নকে রূপ দিতে লেগে যায়। শ্বশুর-শাশুড়ির এনিভার্সারিতে তিন্নিকে কেক বানাতে বলেছিলাম। অফিস থেকে ফিরে সেই মধ্যমগ্রাম থেকে টালিগঞ্জে কেক দিয়ে গেল তিন্নির বর দেবাশীষ। এ বছর সে নিজের প্রোমোশন প্রত্যাখ্যান করেছে তিন্নির পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আর তিন্নিও অপরিসীম আগ্রহ আর সহজাত বুদ্ধিতে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। বাজারের কেনা ক্রিম ব্যবহার করে না। নিজে হাতে বানায়। সেই খাবারের স্বাদই আলাদা। নতুন নতুন জিনিস পরীক্ষা করতে গিয়ে ওর নিজস্ব ইনোভেশনের একটা বই তৈরি হচ্ছে ক্রমশ। সেইসব সিক্রেট রেসিপি এখানে লিখবো না। লোডশেডিংএর কল্যাণে ওভেন বন্ধ হয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কেমন একটা নতুন কেক তৈরি হয়ে গেছিল সেসব গল্প হয়ত ও নিজেই কোনো দিন করবে। শুধু এটুকু জানিয়ে যাই আমার মায়ের জন্মদিনে ব্লুবেরি চিজকেকের সাথে সেই দুর্ঘটনাজনিত আবিষ্কার বার্ণট বাটার কেকটা তিন্নি কম্পলিমেন্টারি আইটেম হিসেবে পাঠিয়েছিল। অমন জিনিস না ভারতে খেয়েছি (ভারতে অবশ্য স্বীকার করি অভিজ্ঞতা কম), না আমেরিকায়। অদ্ভুত মাদকতাময় বাটারের গন্ধযুক্ত খুব অল্প মিষ্টির সেই কেক হয়ত বা ইউরোপে পাওয়া যায়। কিন্তু সে তো বহু দূরের পথ।
চল্লিশে চাঞ্চল্য এসেছে বলছিলাম না? ঋতুপর্ণার কথা লিখি। ওর সাথে আমার কোনোদিন এক সেকশন হয় নি। স্কুলে থাকতে মুখ চিনতাম। ভাব ছিল না। ২০১৮য় বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে ঋতুর সাথে প্রথম সময় কাটালাম। ও-ই সব কিছু ব্যবস্থা করেছিল। টেন্ট বুক করা, কে কোথায় থাকবে, কে কি খাবে, কিভাবে যাওয়া-আসা হবে সমস্ত কিছু ঋতুর দায়িত্ব। আমরা গিয়ে আনন্দ করে এসেছি। তখনও ও পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অফিসের চাকরির বাইরে ও যে অন্য কিছু ভাবছে সেটা জানার সুযোগ পাই নি। অতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল না। আর বয়েসটাও ছিল উনচল্লিশ। চল্লিশ ছোঁয়ামাত্র কি কি হল বলি। ঋতু খবর দিল চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছে। আর সেই সাথে উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে একটা লাল টুকটুকে হেরিটেজ বাড়ির ছবি পাঠালো বন্ধুদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে। বাড়ির নাম বইThek। সেখানে কফি-স্যান্ডুইচ সহযোগে ঠেকবাজি তো হয়ই, সেই সাথে বইও দেখা যায় নেড়েচেড়ে। পছন্দ হলে পকেটস্থ থুড়ি ঝোলাস্থ করারও উপায় আছে। কফি খেতে বইThek এ গেলে একবার ভেতরের ঘরটাতেও উঁকি মেরে আসবেন। গদি বিছিয়ে, মোড়া পেতে সে এক বৈঠকী ব্যাপার। বইপ্রকাশের অনুষ্ঠান বা বই সংক্রান্ত আলোচনার জন্য এই ঘরটা রাখা আছে। এবারে জানুয়ারি মাসে আমাদের বন্ধুদের আড্ডা জমেছিল এই স্বপ্নের মতো বাড়িটায়। সেদিন হেল্পিং হ্যান্ডদের সবাই উপস্থিত ছিলেন না। আমাদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই ঋতু ক্ষিপ্র হাতে কাস্টমারদের জন্য ক্যাপুচিনো বানালো। বইএর ক্রেতাদের বিল কাটলো। শুনলাম আমাদের ব্যাচের আরেক সোনার টুকরো ছেলে ঋতুর বর সৌম্যও অফিস থেকে ফিরে বইThek এ ঋতুর হাতে হাতে কাজ সামলায়। এমনকি ওদের কলকলে ঝলমলে সাজুনি বুড়ি মেয়েও বিল কেটে সাহায্য করে।
আরেকজনের কথা না বললে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এর কথা আমার আরও আগেই বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু এর জার্নি যখন শুরু হয় আমি তখন ছোট। চল্লিশের দোরগোড়ায় এসে জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করতে কতখানি সাহস ও পরিশ্রম লাগে তা আমি সেদিন বুঝতাম না। সুপর্ণাদির কথা বলছি। এই দিদির সাথে যবে থেকে আলাপ হয়েছে অর্কুটে তখন থেকেই দেখি এর অসাধ্য কিছুই নেই। এমন কোনো হাতের কাজ নেই যা জানে না। যদি কিছু না জানা থেকে থাকে সেটাও শিখে নেয় দশ মিনিটে। তারপর সেই শেখাটাকে প্রোফেশনাল লেভেলে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত থামতেই পারে না। এর চরিত্রে এই একটাই খুঁত। এ বড় পারফেকশনিস্ট। এখনকার মত ঘরে ঘরে বুটিকের ব্যবসা তখনো শুরু হয় নি। ২০১০ বা ১১ হবে। পেপার কুইলিং জুয়েলারি বানাতে শুরু করল। পুজোতে টুকটাক অর্ডার নিত। নিজের হাউসিংএর মধ্যেই। তারপর কুইলিং ছেড়ে কি জানি কি বিচিত্র উপায়ে দেখি কাগজ দিয়ে ঝুমকো দুল বানাচ্ছে, পেন্ডেন্ট বানাচ্ছে। দেখে মনে হয় জার্মান সিলভার বা পিতল। ঝুমকোর দৈর্ঘ্য দেখে ভয় হতে পারে কান ছিঁড়ে পরবে বুঝি। আসলে সব কাগজে বানানো। পালকের মতো হালকা। তার ওপরে কাগজ দিয়েই কুন্দনের নকশা। ভাবলাম মেটাল ফিনিশেই থামলো বুঝি। এনে ফেলল গ্লাস ফিনিশ। তার ওপর নিজের হাতেই এঁকে দিল মধুবনী নকশা। অন্য কেউ হলে ভাবতো যথেষ্ট হয়েছে। এগুলোই আবার করি। কিন্তু এর যাবতীয় তৃপ্তি নতুন কিছু শেখার মধ্যে। এবার শিখল বিডিং। সূক্ষ্ম সেসব নকশার নমুনা রইল কিছু। আজকাল পুজোর দুমাস আগে থেকে দেখি এর রাত জাগা শুরু হয়। আমি থাকি পৃথিবীর অন্য পিঠে। বিকেল বেলা হয়ত কখনো বলি, এখনো শুলে না? অন্যদিক থেকে উত্তর আসবে, এটা বানানোর পর বুঝলাম একটা ডিফেক্ট থেকে গেছে রে। আবার নতুন করে বানাচ্ছি। হলফ করে বলতে পারি, ঐ ডিফেক্ট আপনার আমার কারোর চোখে ধরা পড়ত না। কিন্তু এর যে স্বভাব খারাপ। পারফেকশনিস্ট!
চল্লিশে পৌঁছে অভ্যস্ত জীবনের নিশ্চয়তা থেকে বেরিয়ে নতুন কাজে ঝাঁপ দেওয়া একসময় অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল আমাদের দেশের মেয়েদের কাছে। দিন বদলাচ্ছে। বিশাল কিছু হয়ত নয়, নেহাৎ একটা ছোট পদক্ষেপ। অনেকখানি আত্মবিশ্বাস - আমি পারি, আমিও পারি।

No comments:

Post a Comment