About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, February 23, 2019

ভেরিনাগঃ হে মোর দুর্ভাগা দেশ

||১||

কাশ্মীরে "নাগ" শব্দটি ব্যবহার হয় জলের উৎস বোঝাতে। শ্রীনগরের দক্ষিণে অনন্তনাগ জেলা, গণনাতীত স্রোতস্বিনীর উৎসসমৃদ্ধ ভুখণ্ড। সেই অসংখ্য নদীরাজির মধ্যে শ্রেষ্ঠতমা ঝিলম, কাশ্মীর উপত্যকার প্রাণধারা, ঋগ্বেদে যিনি বর্ণিত হয়েছেন বিতস্তা নামে। স্বপ্নবিলাসী ভারতীয় কবি তাঁকে কল্পনা করেছেন আদিশক্তি পার্বতীরূপে। শিব বিশ্রাম নিচ্ছিলেন নীলকুণ্ডে। অভিমানিনী বিতস্তা আপাত উদাসীনতায় নীলকুণ্ড ছেড়ে মাইলখানেক উত্তরপশ্চিমে বিতস্তত্রে প্রকট হলেন। বিরহাতুর মহাকালের স্মরণে নীলকুণ্ডের নাম হল বিরহ-নাগ, অভিশ্রুতিতে ভেরনাগ বা ভেরিনাগ। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীর ভেরিনাগের ইতস্তত বিক্ষিপ্ত প্রস্রবণগুলোকে একত্রিত করে পাথর দিয়ে ঘিরে দিলেন। অঙ্গুরীয়স্থিত নীলকান্তমণির মত সেই অষ্টভুজাকৃতি জলাধারের ছবি দেখামাত্রই বুঝে গেলাম এর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে না পারলে আমার মাথা থেকে বেরোবে না।

কাশ্মীর ভ্রমণের প্রধান পরামর্শদাতা রজতকে যখন বললাম ভেরিনাগ যেতে চাই, প্রথমে খুব একটা উৎসাহ দিতে পারে নি। অনন্তনাগ জেলা সব সময়েই উত্তপ্ত হয়ে আছে। ভেরিনাগ এককালে জনপ্রিয় টুরিস্টস্পট ছিল। জম্মু-কাশ্মীর ট্যুরিজমের একগুচ্ছ চমৎকার বাংলো এখনও আছে। কিন্তু সময় ক্রমশ কঠিন হয়েছে। দুর্ভাগা সেই দেশ যেখানে শৈশবকে সন্দেহ-পরায়ণতার পাঠ নিতে হয়, যৌবনকে ধ্বংসের অনুরাগী হতে হয়। বুরহান ওয়ানি নামে এক বাইশ বছরের সদ্য যুবক ২০১৬র জুলাইয়ে রাষ্ট্রের সাথে এনকাউন্টারে মারা যায়। ভারতরাষ্ট্রর চোখে সে নাশকতাবাদী জঙ্গী। কাশ্মীরের মানুষের কাছে তার পরিচয় সে স্বাধীনতা সংগ্রামী। শোনা যায় কোনো নিরাপত্তারক্ষীর কাছে মার খেয়ে ২০১০ সালে বুরহান ঘর ছাড়ে। তখন তার পনেরো বছর বয়েস। ভেরিনাগ থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে তার বাড়ী, ত্রাল গ্রামে। মৃত্যুর দিনটাতে সে কাছাকাছিই ছিল, ভেরিনাগের তিরিশ কিলোমিটারের মধ্যে কোকেরনাগের এক গ্রামে। জঙ্গী হলেও ঘরের ছেলে তো ঘরেরই থাকে। সে অসময়ে চলে গেলে অকাল বার্ধক্য গ্রাস করে তার গ্রামকেও। ভেরিনাগ, কোকেরনাগ, অচাবলসহ অনন্তনাগ জেলার বহু পুরোনো টুরিস্ট স্পটই এখন অতীত গরিমা হারিয়ে জবুথবু হয়ে দিন গুজরান করছে কোনমতে। তবু রজত চেয়েছিল আমাদের কাশ্মীরের দিনগুলো ডাল লেকে শিকারাবিহারের অতিরিক্ত কিছু হয়ে উঠুক। আর আমাদের মত রজতেরও অকুণ্ঠ আস্থা মানুষের ওপর, কাশ্মীরিয়তের ওপর। "বসুধৈব কুটম্বকম" মন্ত্রের উত্তরাধিকার এই উপমহাদেশে কাশ্মীরিদের চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করছে না বলে রজতের বিশ্বাস। ফিরে এসে আমাদের উপলব্ধিও তদ্রূপ। তাই সব সংশয় দূরে সরিয়ে রেখে জেকেটিডিসির বাংলো রিজার্ভ হয়। আরু উপত্যকায় চারদিন কাটিয়ে আমরা একটা গাড়ি নিয়ে ভেরিনাগের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। পথে পড়বে অচাবল আর কোকেরনাগ।

ভেরিনাগ জাহাঙ্গীরের সৃষ্টি। অচাবল নূর জাহানের। অচাবলেও একটি প্রাকৃতিক প্রস্রবণকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে মুঘল গার্ডেন। শ্রীনগর অনন্তনাগের যেকটি মুঘল গার্ডেন আমরা দেখলাম তার প্রতিটিতেই ইরানী কায়দায় চার-বাগ তৈরী করার চেষ্টা হয়েছে। মূল ইরানী নকশায়, বাগানের কেন্দ্রে থাকে প্রধান জলাধার। সেখান থেকে যোগ চিহ্নের মত চারটি নালা কেটে বাগানকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। কাশ্মীরের বাগানগুলো যেহেতু পাহাড়ের ঢালের ওপরে, তাই এগুলোতে মূল জলাধার বাগানের একপ্রান্তে থাকে। সেখান থেকে একটি প্রধান নালা কাটা হয় বাগানের অপরপ্রান্ত পর্যন্ত। তারপর সেই প্রধান নালা থেকে লম্ব বরাবর আরও নালা কাটা হতে থাকে। সাথের ছবিতে ভেরিনাগের মুঘল গার্ডেনের নকশায় ব্যাপারটা ভালো বোঝা যাবে। অচাবলে পৌঁছেছিলাম সাড়ে এগারোটা নাগাদ। আমরাই একমাত্র বহিরাগত। তিনচার জন কিশোর ফোয়ারার জলে হুটোপুটি করছিল। বাগানের মাঝবরাবর একটি বরাদরি (মণ্ডপ) আছে। সাদা টুপি মাথায় একজন ইমাম গোছের মানুষ একটি বাদামী ফিরন পরা অল্পবয়েসী ছেলের সাথে সেখানে বসে বিশ্রম্ভালাপ করছিলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে মূল প্রস্রবণ তৎসংলগ্ন হামাম। সময়টা মে মাস। সদ্য গ্রীষ্ম এসেছে। বাগানজুড়ে অজস্র গোলাপ। চিনার গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। প্রায় জনবিরল বাগানের চবুতরায় বসে নূর জাহান বেগমের মেধা নিঃসঙ্গতাকে ছোঁয়া যাচ্ছিল। বেরোনোর সময় মাটিতে পড়ে থাকা `টি চিনার পাতা কুড়িয়ে নিলাম।

||২||

কোকেরনাগের বাগানটা মুঘলদের বানানো নয়। পাহাড়ি ঝরনা থেকে জল এসে যেখানে জমেছে তার আকৃতি মুরগির নখের মত। মুরগি অর্থাৎ কুক্কুট (কুঁকড়া) থেকে এই জায়গার নাম কোকেরনাগ। বাগান বাদ দিলেও জায়গাটা ট্রাউট চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানেও আমরা ছাড়া কোন ট্যুরিস্ট নেই। কিছু মানুষ গোল হয়ে বসে গল্প করছেন। বাগানের ভিতরের দিকে স্ফটিকস্বচ্ছ জলের ওপর একখানি বাঁকা ব্রিজ। একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার দেখা মিলল সেখানে। তাদের নির্জন মূহুর্তটিতে বাধা না দিয়ে আমরা সন্তর্পণে বেরিয়ে এলাম। বাদাম গাছে ঝেঁপে ফুল এসেছে। গাছের তলায় একটু দাঁড়িয়েছিলাম। হালকা গোলাপী ফুল টুপটাপ ঝরেই চলেছে। তাদের সংগ্রহ করি। নখপ্রান্তে ঈষৎ হরিদ্রাভ পরাগরেণু লেগে থাকে।

কিছু স্ন্যাকস কিনে বাগানের বাইরে এসে দেখি ড্রাইভার আসিফ ভাই একজনের সাথে গল্প জুড়েছে। আসিফ একেবারেই বাচ্চা ছেলে, কুড়ি-বাইশ বছরের। নতুন ছেলেটিও তেমনই হবে। আমরা ভেরিনাগ যাচ্ছি শুনে সে বলল – “আমার দাদা তারিক ভেরিনাগের গেস্টহাউসেই কাজ করে। আমি বলে রাখছি দাদাকে তোমরা যাচ্ছ এখন।“ আমরা ওকে সেই সাথে খাবার ব্যবস্থাও করে রাখতে বলে গাড়িতে উঠলাম। ভেরিনাগ খুব বেশি দূর নয় কোকেরনাগ থেকে। কিন্তু রাস্তা পাহাড়ী এবং সরু। আসিফ বলছিল এখানেই কোনো এক জায়গায় বুরহান ওয়ানিকে মারা হয়। কাশ্মীর উপত্যকা আপাত স্থিতাবস্থা থেকে আবার অশান্ত হয়ে উঠেছিল বুরহানের মৃত্যুর পরে। ঘরের ছেলের মৃত্যুতে রেগে গিয়ে সাধারণ মানুষ পাথর ছুঁড়েছে আর্মির দিকে। আর্মিও নির্বিচারে পেলেট গান চালিয়ে জখম করেছে শত শত মানুষকে। বিগত পনেরো দিনে যখনই কোনো সেনা বা আধাসামরিক কর্মীর সাথে কথা হয়েছে, তাঁরা বলেছেন, কবে এখান থেকে বদলী হব তার আশায় আছি। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে আসা এই মানুষেরা কাশ্মীরিদের নিজেদের দেশের মানুষ ভাবতে পারেন না। কাশ্মীরিরাও এঁদের বহিরাগত শত্রু মনে করেন।

ভেরিনাগের সরকারী টুরিস্ট্লজে পৌঁছতে পৌঁছতে আড়াইটে বেজে গেল। সার দেওয় ছয়টি বাংলো। জনা চারেক ছেলে বাংলোর সামনের লনে গুলতানি করছিল। লন থেকেই মুঘল গার্ডেন দেখা যাচ্ছে। তারিক আমাদের ঘর খুলে দিল। বলল – “আমি তোমাদের জন্য ডাল-ভাত রান্না করে রেখেছি। এর বেশি আমি পারি না। বিকেলে ওস্তাদ আসবে। তোমরা মুরগি খেতে চাও তো বল।আমরা আসিফকে বললাম – “তোমার তো আজ শ্রীনগর ফেরা হবে না। তুমিও খেয়ে নাও আমাদের সাথে।“ আসিফ কিছুতেই রাজি হল না। কাছেই তার এক বন্ধু থাকে। তার সাথে কাটাবে সন্ধ্যাটা। খাবার ঘরে গিয়ে আইয়ুব ভাইয়ের সাথে আলাপ হল। মাঝবয়েসী ভদ্রলোক সামান্য খুঁড়িয়ে চলেন। বানিহালের সরকারী টুরিস্টলজে ওয়েটারের চাকরী করেন। ভেরিনাগে যেহেতু বহুদিন কোন লোক আসে না, তাই একা তারিকই ভেরিনাগ সামাল দেয়। আমরা আসব বলে বানিহাল থেকে আইয়ুব ভাইকে পাঠানো হয়েছে। আইয়ুব ভাইয়ের বৌ-মেয়ে ভেরিনাগে থাকে। বিজনেস ট্রিপে ঘরে ফেরাটাও জুড়ে দিতে পারলে সবারই আনন্দ হয়। আইয়ুব ভাইও ব্যতিক্রম নন।

তারিকের যারপরনাই খারাপ রান্না খেয়ে আমরা বাগানের দিকে রওনা হলাম। খাবারের পরিমান বেশ কম। কেউ আসে না। চাল-ডাল বাড়ন্ত। আইয়ুব ভাই বাগানের গেট পর্যন্ত আমাদের সঙ্গ দিয়ে বাজারে গেলেন মুরগি আনতে। বাগানে অনেক লোক। তবে টুরিস্ট বলতে আমরাই। যে নীলকান্তমণির স্বপ্ন দেখে এতদূর ছুটে এসেছি তার কাছে যাওয়ার আগেই চিনার গাছের নিচে একটি শিবমন্দির চোখে পড়ল। মন্দিরের দরজায় তালা দেওয়া। তবে উঁকি মেরে দেখতে পেলাম শিবলিঙ্গে ফুল ছড়ানো আছে। ফুলগুলি তাজা।

শিবমন্দিরের সামনে জলের নালা। তারপর একটি খিলান পেরোলেই সেই সবুজাভ নীল অবিশ্বাস্য জলাধার। জাহাঙ্গীর তাঁর আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন, এই জল এত স্বচ্ছ যে একটা পোস্তদানাকেও দেখা যায় যতক্ষণ না সে অতল স্পর্শ করে। জলে অনেক মাছ খেলা করছে। লোকজন মুড়ি খাওয়াচ্ছে মাছকে। আমরা বাদে সবাই স্থানীয় মানুষ। অষ্টভুজাকৃতি জলাধারকে ঘিরে চব্বিশটি তোরণ। আমরা ডানদিক ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। খুব সম্ভব তৃতীয় তোরণে আরো একটি শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের পিছনে তোরণের দেওয়ালে মাতৃমূর্তি। আইন-ই-আকবরীতে ভেরিনাগ অঞ্চলে হিন্দু মন্দির ও গুহার উল্লেখ আছে। এই মাতৃমূর্তি সে সময়ের কিনা জানা নেই, তবে দেখে মনে হয় বেশ প্রাচীন। এখানেও তাজা ফুল দেখতে পেলাম। আরো 'টি তোরণ পেরোলে পশ্চিম দেওয়ালে দেখা যায় একটি পাথরের ফলক। তাতে ফার্সীতে লেখা আছে হায়দার নামে স্থপতি শাহজাহানের নির্দেশে ১০৩৭ হিজরিতে এই জলপ্রণালী নির্মান করেন। আরো একটি ফার্সীতে লেখা পাথরের ফলক পাওয়া যায় দক্ষিণ দেওয়ালে। সেটা থেকে জানা যাচ্ছে ১০২৯ হিজরিতে আকবরের ছেলে নুর-উদ-দিন জাহাঙ্গীর তাঁর রাজত্বের পঞ্চদশ বছরে ভেরিনাগে আসেন এবং এই জলাধার তৈরী করেন। জাহাঙ্গীরের শুরু করা কাজ তাঁর ছেলে শাহজাহান শেষ করেছিলেন বোঝা যাচ্ছে। আরও শোনা যায়, ভেরিনাগ জাহাঙ্গীরকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তাঁর বাসনা ছিল এখানে সমাধিস্থ হওয়ার, যদিও সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পূর্ব দেওয়ালে চলে আসি। চারশো বছরের পুরোনো কোন প্রাচীন লিপি এই দেওয়ালে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়ত এই দেওয়ালে যা দেখে এসেছি তা আর 'মাস পর মুছেও যাবে। তবুও পাথরের ওপর চকখড়ি দিয়ে লেখা বুরহান নামটা বুকের ভেতর ধাক্কা দিল। "দুর্ভাগা সেই দেশ যেখানে নায়কের প্রয়োজন হয়" দুর্ভাগা সেই দেশ যে দেশের কিশোর সন্ত্রাসবাদী হয়।


|
||৩||

বাগান থেকে ফিরে দেখলাম বাজার এসেছে। আইয়ুব ভাই আর তারিক একটা খাতায় সব জিনিসপত্র এন্ট্রি করাচ্ছেন। আইয়ুব ভাই জিজ্ঞেস করলেন - "চা খাবেন নাকি?" আমরা জানালাম চা পেলে মন্দ হয়না। তারিক চা বসালো। যিনি মুরগি রাঁধবেন সেই ওস্তাদ তখনও আসেন নি। শুনলাম নিচের কোন গ্রাম থেকে এসে রান্না করে আবার ফিরে যাবেন তিনি। কাঁচ ঘেরা ডাইনিং হলে চা-বিস্কুট নিয়ে বসলাম আমরা। একটু পরে আইয়ুব ভাই এসে যোগ দিলেন। আমাদের ইচ্ছা ছিল কিছুটা রাস্তা অন্তত পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার। শ্রীনগরে অটো নিয়ে ঘুরেছি। কিন্তু লম্বা জার্নিগুলোর প্রতিটাতেই পথে একাধিক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা থাকায় প্রাইভেট কার নিতে বাধ্য হচ্ছিলাম। ভেরিনাগে একরাত থেকে পরের দিন বিকেলে জম্মু থেকে ট্রেন ধরার কথা। মাঝে কোথাও দাঁড়ানোর নেই। এই পথটা পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট নেওয়া যেতেই পারে। আইয়ুব ভাই কিছু সুলুক সন্ধান দিলেন। সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন হিলার। ভোরে বাজার থেকে শেয়ারের জিপ ছাড়ে স্টেশনের দিকে। হিলার থেকে ট্রেন ধরে বানিহাল। তারপর বানিহাল থেকে বাস অথবা শেয়ারের জিপ পাওয়া যাবে জম্মুর জন্য। পরামর্শ মনে ধরল। ইতিমধ্যে তারিক এসে গেছে। তারিকের ইচ্ছা আমরা ওর ভাইয়ের গাড়ি রিজার্ভ করে জম্মু যাই। বারবার বলতে লাগল, তোমাদের এভাবে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার অভ্যেস নেই, তোমরা পারবে না। আমরা সেকথায় পাত্তা দিলাম না। হিলার থেকে ভোরের ট্রেন কখন ছাড়ে সেটা আইয়ুব বলতে পারলেন না। আমাদের কাছে না আছে টাইমটেবল, না আছে ইন্টারনেট। খোঁজখবর করতে বাজারে যাওয়া মনস্থ করলাম। আইয়ুব বলে দিলেন বাগানের মধ্যে দিয়ে কিভাবে শর্টকাটে বাজারে যেতে হবে। দুপুরে বাগানে ঢোকার জন্য যে টিকিট কেটেছিলাম সেটা দেখিয়েই বিকেলেও বাগানের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করা যাবে জানা গেল।



আবারও একবার বাগানে ঢোকার সুযোগ পেয়ে বেশ ভালোই লাগল। বিকেলবেলা অনেক মানুষ বাগানে এসেছেন। জলপ্রণালীর দুধারে সারি দিয়ে গোলাপ বাগান। তার সামনে পাথরের বেঞ্চি। সন্ধ্যা নামার আগের উষ্ণতাটুকু শুষে নিচ্ছে অশান্ত উপত্যকা। জলধারা যেখানে নদী হয়ে শহরে পড়েছে বাগানের সেই প্রান্তে কার্পেট ধুচ্ছে দুই অল্পবয়েসী ছেলে। তাদের পেরিয়ে শহরে ঢুকছি, দেখি একজন মানুষ সিঙারা ভাজছেন। ট্রেনের কথা জিজ্ঞেস করলাম তাঁকে। তিনি উত্তর দিতে পারলেন না, তবে জিপ স্ট্যান্ডের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। জিপওয়ালারা নিশ্চয়ই ট্রেনের টাইম জানবে। কাশ্মীরের অন্য শহরগুলোর মতই বেশ পরিস্কার রাস্তা। একটা মুদির দোকানের সামনে বসে এক ভদ্রলোক দোকানীর সাথে গল্প করছিলেন। আমাদের দেখে হাসলেন। জানতে চাইলেন কোথা থেকে আসছি। আমরা তাঁর কাছেও ট্রেনের কথা জানতে চাইলাম। দোকানী বললেন - "আমি তো টাইম জানি না, তবে চিন্তার কিছু নেই, এক্ষুনি ফোন করে জেনে দিচ্ছি।" আমরা ভাবিনি দুই অপরিচিত পথচারী, যারা তাঁর দোকান থেকে কিছু কেনেও নি তাদের জন্য উনি ফোন করে কাউকে দিয়ে টাইমটেবিল ঘাঁটাবেন। জানা গেল সোয়া সাতটায় একটা ট্রেন আছে। তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে আসছি, বাইরের বসে থাকা ভদ্রলোক বললেন – “আমার বাড়ি কাছেই, চা খেয়ে যান।“ আতিথ্য নেওয়ার লোভ হচ্ছিল, কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে না করতে হল। জিপ স্ট্যান্ডেও একটা নেমন্তন্ন পেয়ে গেলাম। জিপওয়ালার কাছে জানতে চাইলাম সকালের ট্রেন ধরার জন্য কখন আসতে হবে, তিনি টুরিস্ট দেখে খুব খুশি হয়ে গল্প জুড়লেন। তাঁরও বাড়ি কাছেই। চা খাওয়াতে চাইলেন। বললেন চা খাইয়ে নিজের গাড়িতে করে গেস্ট হাউসে পৌঁছে দেবেন। তাঁকেও ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে ফিরে এলাম। বাগানে ঢোকার মুখে সেই সিঙারওয়ালার সাথে দেখা। তিনি তখন ঝাঁপ তুলছিলেন। আমাদের দেখে জানতে চাইলেন সব খোঁজ পেয়েছি কিনা। সন্ধ্যা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছিল। বাংলোয় ফিরে দেখি ওস্তাদ এসে গেছেন। তবে কারেন্ট অফ। রান্না হচ্ছে এমার্জেন্সি লাইটে।

||৪||

ডাইনিং হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমরা বসলাম। নিচের শহরে আলো আছে। পাওয়ার অফ শুধু গেস্ট হাউসেই। তারিক গল্প করছিল। নব্বইয়ের টালমাটাল সময়ে গেস্টহাউসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। হতাহত হয় নি কেউ। তবে ডাইনিং হল বাদে বাকি সব পুড়ে গেছিল। যে 'টা বাংলোর একটায় আমরা থাকছি সেগুলো সব নতুন তৈরী। তারিককে জিজ্ঞেস করলাম এখন এলাকার অবস্থা কেমন। আসিফ যা বলেছিল তারিকও তাই বলল। বুরহান ওয়ানি মারা যাওয়ার পর পঁয়তাল্লিশ দিন কার্ফিউ ছিল। জনতা পাত্থরবাজি করেছে। পুলিশও নির্মম ভাবে তার উত্তর দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল। কিন্তু শান্তি আসবে এমন আশা কেউই আর করে না। শ্রীনগর, সোনমার্গ, পহেলগাম অঞ্চলে তবু টুরিস্টের আনাগোনা আছে এখনও। কিন্তু অনন্তনাগ সেটাও হারিয়েছে। আরু উপত্যকায় যাওয়ার পথে মার্তন্ড সূর্যমন্দিরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। হায়্দার সিনেমার একটা গানের শুটিং হয়েছিল এই মন্দিরে। আমার ধারনা ছিল হয়তো সে কারণেও ওখানে কিছু ভীড় থাকবে। কিন্তু সেখানেও আমরাই একমাত্র টুরিস্ট। দুজন মানুষ মন্দিরের চাতালে বসে গল্প করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন আমাদের দেখে বললেন - "আমি গাইডের কাজ করি, আপনাদের মন্দির দেখিয়ে দেব।" খুব যত্ন নিয়ে ঘোরালেন। ড্রাইভার আসিফের কাছে জানতে চাইলাম,
- "এখানে আসো না টুরিস্ট নিয়ে?"
সে বলল - "না তো, তোমরা এর সন্ধান পেলে কি করে তাই ভাবছি। আমরা ছোটবেলায় এখানে খেলতে এসেছি। হিন্দুদের কি মন্দির জানি না। পান্ডবেরা এইসব বড় বড় পাথর এনে এখানে রেখেছে, এই আমরা শুনেছি। আমরা একে পান্ড্বল্বাদেন বলি।"
- "এখন তো টুরিস্ট নিয়ে আরু-পহেলগাম-শ্রীনগর করছ। অফ সিজনে কি করবে আসিফ?"
- "মধ্যপ্রদেশে একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করি, শীতে সেখানে চলে যাব।"
তারিক, আইয়ুব ভাইদের মত যারা সরকারী চাকরী করে, তাদের বাদ দিলে টুরিজমের সাথে যুক্ত বহু মানুষের এভাবেই বছর চলে।

গল্প করতে করতে ওস্তাদের রান্না হয়ে গেছে। ওস্তাদের নাম ফৈয়জ ভাই। রেঁধেছেন চিকেন তেহরাওয়ালা। গর্বভরে এক টুকরো মাংস আর ঝোল আমাদের টেস্ট করতে দিলেন। সত্যি বলতে কি দশে 'য়ের বেশি ওনার প্রাপ্য হয়না, তবে যেভাবে তাকিয়েছিলেন তাতে দশের কম দিতে সাহস পেলাম না। ভদ্রতাভরে রেসিপিও জেনে নিলাম। ভুলে গেছি যদিও। ইতিমধ্যে আলো এসেছে। আইয়ুব ভাই তার মেয়ের ছবি দেখালেন মোবাইলে। স্কুলে পড়ছে মেয়ে।
- "কলেজে পাঠাবেন তো আইয়ুব ভাই?"
- "নিশ্চয়ই পাঠাবো। যতদূর চায় পড়বে।"
মনে পড়ল নার্গিস আর শবনমের কথা। কার্গিল থেকে সাংকো গ্রামে গেছিলাম তিরিশ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি দেখতে। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার পর পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা অতিকায় বুদ্ধ আর তিনটে পড়ে রয়েছে পৃথিবীতে। তিনটেই লেহ অঞ্চলে। ফেরার পথে দেখলাম দুটো মেয়ে ব্যাকপ্যাক কাঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের গাড়ি দেখে হাত দেখাল। ড্রাইভারকে বললাম তুলে নিতে। দুজনেই কলেজে পড়ে। একজন আর্টস। অন্যজন সায়েন্স। জিজ্ঞেস করলাম কলেজ শেষ করে চাকরিবাকরি করবে কিনা। বলল,
- "এখানে তো তেমন সুবিধে নেই। বাবা-মা বাইরে ছাড়বে না। জানোই তো কাশ্মীরের অবস্থা। তবু দেখি চেষ্টা করে।"
- "দ্যাখো হয়ত একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাদের আর কতদিন বাকি যেন?"
- "সেটাও তো জানি না ঠিক করে। এখানে অনেক সময় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায় ঝামেলার জন্য। এভাবে কত স্টুডেন্টের যে বছর নষ্ট হয়েছে! কে জানে আমাদের কি হবে!"
ভেরিনাগ আসার আগে আরু গ্রামে ছিলাম 'দিন। সেখানে একটাই স্কুল। স্কুলের এক শিক্ষকের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন এখন বাবা-মায়েরা ভয় পায় ছেলেমেয়েকে শহরের কলেজে পাঠাতে। বিশেষ করে ছেলেদের নিয়ে বেশি ভয়। পাছে কলেজে গিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। কেই বা চায় তার সন্তান মৃত্যুভয় নিয়ে ঘুরুক! কিছুদিন আগে কোন রিটায়ার্ড জেনারেলের সাথে এই শিক্ষকের কথা হচ্ছিল। জেনারেল বেড়াতে এসেছেন আরুতে। দেখেন ঘোড়াওলা ছেলেটি ভারী সপ্রতিভ, বুদ্ধিমান, ঝরঝরে ইংরিজিতে কথা বলছে। শিক্ষকের কাছে ছেলেটি সম্পর্কে জানতে চান। সে ছেলে বোর্ড পরীক্ষায় পহেলগাম তহশিলে প্রথম হয়েছিল। তারপরে আর পড়ে নি। আরুর স্কুলে সাকুল্যে চারজন মাস্টারমশাই। দুজন উর্দু। বাকি দুজন ইতিহাস-ভূগোল ইত্যাদি। অঙ্ক, ইংরিজি এবং বিজ্ঞানের কোন শিক্ষক নেই। আরুতে যে চারদিন ছিলাম, রোজ সন্ধ্যায় আমাদের গেস্টহাউজের সামনের মাঠে ঘোড়াওলা ছেলেদের ক্রিকেট খেলা দেখতাম। তাদের বেশিরভাগই টুরিস্টদের সাথে কথা বলতে বলতেই দিব্যি ইংরিজি শিখে ফেলেছে। ব্যবহার অত্যন্ত ভদ্র। ভারতের যে কোন স্কুল এই ছেলেদের ছাত্র হিসেবে পেলে গর্বিত হবে।

ইতিমধ্যে তারিক খবর এনেছে পরের দিন ট্রেনের স্ট্রাইক। হিলার থেকে ট্রেনে বানিহাল যাওয়ার প্ল্যান বাতিল করতে হল। তারিক চাইছিল আমরা ওর ভাইয়ের গাড়িতে যাই। কিন্তু আমাদের পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের বাসনা প্রবল। আইয়ুব ভাই বললেন জিপস্ট্যান্ড থেকে শেয়ারের জিপ বানিহাল যায়। সকালে সেই জিপে তুলে দেবেন আমাদের। ওদিকে মুরগি ঠান্ডা হচ্ছিল। খালিপেটে বকবক করার চেয়ে চারজনে খেতে খেতে গল্প করার প্রস্তাব সকলেরই পছন্দ হল। খাওয়া শেষ হতে না হতে আবার লোডশেডিং। আইয়ুব ভাই গোটা চারেক মোমবাতি দিয়ে বললেন রাতে আলো নাও আসতে পারে। অন্ধকারে সারি দেওয়া 'টি বাংলো। সবার শেষেরটি আমাদের। বাংলোর পিছনে ঘন জঙ্গল। মাথার ওপর ঝকঝক করছে তারা। ঘরে এসে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিজেদের দীর্ঘ ছায়াগুলো দেখে কেমন গা ছমছম করল। হঠাৎ করে মনে পড়ল তারিক বলছিল নব্বইতে এই বাংলো পুড়িয়ে দিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। আমরা মেনল্যান্ড ইন্ডিয়ার লোক। আমাদের রাজ্য, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য থেকে সেনা পোস্টিং হয় এখানে। তাদের পেলেট গানে অন্ধ হয়েছে এমন ছেলের কথা একটু আগেই তারিকের মুখে শুনেছি। তারা যদি সেই অপরাধের জন্য আমাদের শাস্তি দিতে চায়? মনের ভাব মুখে আনার আগেই লজ্জা পেলাম। মাত্র 'ঘন্টা আগে বাজারে গিয়ে অভাবনীয় আতিথেয়তা পেয়েছি। পাঁচ মিনিটের পরিচয়ে মানুষ চায়ের নেমন্তন্ন করেছে। মূলত ব্যবসাসূত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে কাশ্মীরে নানা জাতি, নানা ধর্মের মানুষের আনাগোনা। এখানকার মানুষ মিষ্টভাষী, আন্তরিক, আমুদে। রাজনৈতিক দুর্যোগ অঞ্চলে এই প্রথম নয়। স্বাধীনতার আগেও অত্যাচারী মুসলিম শাসক, হিন্দু শাসক এই উপত্যকাকে শোষন করেছে ক্রমান্বয়ে। সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় কাশ্মীর চেয়েছিল একটা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। ভারত বা পাকিস্তান কারোর সাথেই সে যেতে চায়নি। তারপর কি হল, সে আলোচনার উপযুক্ত স্থান এই লেখা নয়। গত তিরিশ বছর ধরে অশান্তির আগুন নেভার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মূলত ব্যবসা নির্ভর অতিথিবৎসল একটি জাতি ক্রমশঃ তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। শ্রীনগরে থাকাকালীন সেখানকার পুরোনো মসজিদগুলো আমরা ঘুরে দেখেছিলাম। শাহ--হমদিন, মাখদুম সাহিব, আখুন্দ-মুল্লা-শাহর মত সুফি সাধকদের উত্তরধিকার বহন করছে এই অনবদ্য স্থাপত্যগুলি। সেই উদার সুফি ইসলামের পীঠস্থান কাশ্মীর ক্রমশ চরমপন্থী রক্ষণশীল ইসলামের দিকে ঝুঁকছে। নেহেরুর প্রতিশ্রুত গণভোট দেশভাগের সত্তর বছর পরেও হয়নি। কোনদিন হবে এমনও আশা নেই। জওহর টানেলের দক্ষিণে ভারতের মূল ভূখণ্ডের মানুষ একরাশ ঘৃণা আর অবিশ্বাস নিয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। এদিকের মানুষও তাই। এমনকি আমিও, পনেরো দিন ধরে কাশ্মিরী আতিথেয়তা গ্রহণের পরেও অন্ধকার জনশূন্য বাংলোয় ভয় পেয়েছি একটু আগেও। দুর্ভাগা সেই দেশ যেখানে সহনাগরিকের প্রতি অবিশ্বাস বুকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে হয়।

পরের দিন ভোরে বাজারে গিয়ে শেয়ারের জিপ ধরি। আইয়ুব ভাই সাথে আসেন। আসার পথে ভেরিনাগের বাগান থেকেও একটি চিনার পাতা তুলে নিই। আমার বইয়ের ভাঁজে জাহাঙ্গীর নূর জাহানের দুই বাগানের দুটি পাতা পাশাপাশি শুয়ে থাকে। ব্যক্তিজীবনে ব্যবস্থা তাঁদের পছন্দ হত কিনা জানার কোন উপায় নেই। ইতিহাস তো মনের খোঁজ রাখে না। আজ থেকে পাঁচশো বছর পরে এই দিনগুলো সম্পর্কে ইতিহাস বইতে 'লাইন লেখা থাকবে কল্পনা করার চেষ্টা করি। পঁয়ষট্টি, একাত্তর, নিরানব্বইয়ের যুদ্ধের কথা তো থাকবে জানি। কার্গিলের ছাত্রীটির কথা লেখা হবে কি? পরীক্ষা পাশ করা নয়, ঠিক সময়ে পরীক্ষা হবে কিনা নিয়ে যার সংশয় ছিল? অথবা আরুর সেই ঘোড়াওলা ছেলে? বোর্ড পরীক্ষায় খুব ভালো করেও যাকে কলেজে পাঠানোর সাহস পেল না তার বাপ-মা? ভেরিনাগের মানুষগুলো, যারা যতটুকু সময় রইলাম অকুণ্ঠ আতিথেয়তা দিল, যদিও তাদের চোখে আমি সেই অঞ্চলের মানুষ যেখানকার লোকেরা যখন তখন তাদের ঘর থেকে বার করে চিরুনীতল্লাসী করতে পারে? ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠা ভারতে আসিফ কি পারবে সামনের শীতেও মধ্যপ্রদেশে গিয়ে কাজ করতে? মুঘল বাগানের ভিতরে থাকা প্রাচীন মাতৃমূর্তি, যাকে ২০১৮তেও পুজো পেতে দেখে এসেছি, অসহিষ্ণু সময় তাকে কি উৎপাটন করবে তার সহস্রাধিক বছরের আসন থেকে? বাইরে বেরোলে, মানুষকে দেখলে বোঝা যায় কত সহজেই আমরা নিজেদের মনগড়া ভাবনায় রাশি রাশি শত্রু বানিয়ে রাখি। অন্নসংস্থান আর সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার - এর বেশি মানুষ আর কি চায়? এটুকু পেলে কোন মূর্খ নিজের জীবন-যৌবন বিসর্জন দেয়? আর এটুকু যে পেল না, সে প্রতিবাদ করবে না এমন আশাই বা করে কোন মূর্খের স্বর্গের বাসিন্দা? সত্যদ্রষ্টা ঋষির ভবিষ্যৎবাণী মনে করে ভয় হয় - "সবারে না যদি ডাক, এখনো সরিয়া থাক, আপনারে বেঁধে রাখ চৌদিকে জড়ায়ে অভিমান- মৃত্যুমাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান।"













1 comment:

  1. ভালো লাগলো পড়ে। ভাব, বর্ণনা মন ছুঁয়ে যায়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এরকম লেখার প্রয়োজন অপরিসীম।

    তবে ভাষার মিশ্রণটা আরেকটু সরল প্রকৃতির হলে ভালো হতো। ইংরেজি, চলিত বাংলা আর জটিল, অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত বাংলা শব্দের মিশ্রণে হোঁচট খেতে হয়।

    ReplyDelete