About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Wednesday, February 13, 2019

মা_বাবাদের_গল্প

 ছোটবেলায় পুরাণের গল্প পড়তে ভালোবাসতাম। সব ঠাকুরদেবতাদের মধ্যে বিষ্ণুর ওপর ভক্তি সবচেয়ে প্রবল ছিল। সেসময় যেহেতু ছাপার অক্ষরে কিছু দেখলে তা অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ছিল না, তাই বিষ্ণু যে জগতের স্রষ্টা তা নিয়ে একেবারে নিঃসন্দেহ ছিলাম। কি কারণে জানি পুরাণের গল্পকে ছোটদের উপযোগী ভাবা হয়, কিন্তু ডারউইনকে নয়! বাবা নাস্তিক না হলেও পুজোআচ্চায় উৎসাহী ছিলনা। বিষ্ণুপ্রেমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে লক্ষ্য করেছিল হয়ত। আমায় একদিন বলল, বিষ্ণুকে কেউ কোনদিন দেখে নি। ঐ নামে কেউ নেই। সূর্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে। সূর্যকে চোখে দেখা যায়। সূর্যই ভগবান। বিষ্ণুকে রাতারাতি বিসর্জন দিতে না পারলেও কথাটা মনে ধরল।

মায়ের ঠাকুরঘরের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বাবার একটা প্রার্থনাস্থান ছিল। খাবার ঘরের দেওয়াল যেখানে ছাদ ছুঁয়েছে সেখানে একটা কুলুঙ্গী। তাতে বাবার সূর্যদেবতা। রোজ চান করে এসে বাগানের একটা জবাফুল তুলে এনে একটা চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে বাবা সেই ফুল সূর্যকে নিবেদন করত। মা চাইত মায়ের ঠাকুরদের আমি পুজো করি। বাবার এমন কোন দাবী ছিলনা। তো স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের ঠাকুরদের একজনেরও মন্ত্র আমার জানা নেই, কিন্তু "জবা কুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম" পুরোটাই বলতে পারি।
মিঠুনকে বিয়ের করার কয়েকমাসের মধ্যেই কাকু-কাকীমা-আমি একবার দূরপাল্লার ট্রেনে চেপে দিল্লী থেকে ফিরছি। তখনও পারস্পরিক চেনা-জানা হয়নি ভালো করে। মহাপুরুষ ছবির সেই দৃশ্যের মত সূর্য উঠল। আমিও খুব খুশি হয়ে "জবা কুসুম সঙ্কাশং" আবৃত্তি করলাম। কাকীমা ভেবে বসল আমার আসলে পুজো-আচ্চায় মন আছে, মিঠুনের ভয়ে করতে পারি না। কত পরিশ্রম করে সে ভুল ভাঙাতে হয়েছে সেসব কথা পরে কোথাও লেখা যাবে, মোদ্দা কথা হল, ছেলেদের সংস্কারমুক্তি যদি বা পরিবার-পরিজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, মেয়েদের বেলায় লোককে বিশ্বাস করানোই কঠিন যে সে কোন পুরুষ অভিভাবকের ছাতা ছাড়াই সংস্কারমুক্ত। প্রায় তেরো-চোদ্দ বছর আগে মিশিগানের এক শহরে কারোর বাড়ি নিমন্ত্রণে গেছি। গৃহকর্ত্রী বলে বসলেন, তুই নিশ্চয়ই বিফ খাবি না? বুঝলাম গোরু ও ছাগল দুরকমের আয়োজন থাকলেও মেয়েদের, বিশেষত গৃহবধুদের থেকে আশা করা হচ্ছে তারা গোমাংস স্পর্শ করবে না। বিভিন্ন মাংসের মধ্যে গোরুর মাংস যদিও আমার পছন্দের তালিকায় নিচের দিকেই, মুর্গির সামান্য ওপরে, তবুও এই "খাবি না"র উত্তরে তো "অবশ্যই খাবো" বলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
এইসব কূটকচালীতে যা পিছিয়ে যাচ্ছে তা হল বাবার সূর্যমূর্তির গল্প। এই ছবিতে যে সূর্যমূর্তি দেখছেন ওটাই। এখন আর ওটা খাবার ঘরের কুলুঙ্গিতে থাকে না। বাবা ইদানিং পাড়ার দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা। সূর্যমূর্তি চলে গেছে মায়ের ঠাকুর ঘরে। কোন এক পুরোহিত তাকে এক খাবলা সিঁদুরও পরিয়ে দিয়েছে।
নাদের আলি কথা রাখে নি।
তাই বলে কি তিনপহরের বিল ছিল না কোনদিনও? সম্ভবত পঁচাত্তর সালে পুরী থেকে কোণার্ক গেছিল দুজনে। আমার মা-বাবা। মন্দিরের দক্ষিণ দেওয়ালে অর্চিষ্মান মিত্র ভগবানের মূর্তি আছে। অক্ষতমূর্তি নয়। হাত ভাঙা। লটারীতে জেতা বারো রিলের একটা ক্যামেরা ছিল বাবার। তাতে ছবি উঠল। পুরী ফিরে এসে খোঁজ করল সূর্যমূর্তির। মিলল না। তার বদলে দেখা হয়ে গেল দ্বারিকার সাথে। দ্বারিকা কারিগর। মূর্তি বানায়। কোণার্ক থেকে তুলে আনা ছবি দিয়ে তাকে মূর্তি বানাতে বলা হল। এই সেই মূর্তি। হাত আছে। দ্বারিকা তার কল্পনায় খোদার ওপর খোদাকারী করেছিল।
ছোটবেলা থেকে শুনে আসা এসব গল্প রোমন্থণ করে মন খুশি লাগে। পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করা তিনপহরের বিলও একদিন দেখতে পাবো মনে হয়।



No comments:

Post a Comment