About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Friday, September 17, 2010

জুলিয়া

জুলিয়ার সাথে যে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তা কিন্তু নয়। জুলিয়াকে যতদিন ধরে চিনি তার পঁচানব্বই শতাংশ সময়ই আমরা আলাদা টিমে ছিলাম। ও অ্যাকুইজিশন। আমি পোর্টফোলিও। এক প্রোজেক্টে কাজ করারও সুযোগ হয় নি সেভাবে। হলওয়েতে বা রেস্টরুমে দেখা হত। টুকটাক কথা। মাঝেসাঝে এক সাথে লাঞ্চেও গেছি। জুলিয়াকে চেনা এভাবেই। তাও কি করে জানি বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কৃতিত্ব অবশ্য ওরই। এমন মিষ্টি মেয়ে – ভালো না বেসে উপায় নেই।

তখন অ্যান্টনি হবে। কাজের চাপ, শরীরের অবস্থা সব কিছু ভেবেচিন্তে আড়াই বছরের সোফিয়াকে রেখে আসা হল চায়নাতে ওর দাদু-দিদিমার কাছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় যেমন পুতুলের মত সুন্দর বাচ্চাদের দেখা যায়, সোফিয়াকে দেখতে একদম তেমনটি। রেস্টরুমে দেখা হলেই জুলিয়ার মুখে তখন সোফিয়ার কথা – জানো, আজ আমার শাশুড়ি ফোন করে বলছে, সোফিয়ার কান বিঁধিয়ে দিলাম, তোমার আপত্তি নেই তো? ভাবো তো, আমার আড়াই বছরের সোফিয়া! ওইটুকু বাচ্চার কান বেঁধালো! আর তারপর কিনা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, আপত্তি আছে কিনা! আপত্তি থাকলেই যেন শুনতো! পরিষ্কার বুঝতে পারতাম সোফিয়াকে আদর করার জন্য জুলিয়ার মনটা ছটফট করছে। ঐ টুকু মেয়ে, কান বেঁধাতে গিয়ে না জানি কত কেঁদেছে। আমরা বলি, জুলিয়া, তুমি ওকে যেতে দিলে কেন? জুলিয়ার মুখ আরও ম্লান হয়। ইচ্ছে করে কি আর মা মেয়েকে ছাড়ে!

তারপর অ্যান্টনি হওয়ার পরেও তো তাকে নিয়ে গেল ওর দাদু-দিদিমা। সোফিয়া তখন ফিরে এসেছিল ওর মা-বাবার কাছে। জুলিয়ার সাথে তখন দেখা হলেই আই-ফোনে অ্যান্টনির ভিডিও দেখাত। এই দ্যাখো, অ্যান্টনির দুটো দাঁত গজিয়েছে। জানো ও কেমন ইন্টেলিজেন্ট! এখন থেকেই সবাইকে চিনতে পারে। কাল ভিডিও চ্যাট করছিলাম, আমাকে দেখে হেসেছে, জানো! আমার মনে হয় ও সোফিয়ার থেকেও তাড়াতাড়ি সব কিছু শিখে যাচ্ছে। সেকেন্ড চাইল্ডরা কি এই রকমই হয়?

তা’বলে ভাবার কোন কারন নেই জুলিয়ার মন সবসময় চায়নাতে পড়ে আছে। ভীষন কাজের মেয়ে জুলিয়া। কখনও অ্যাকুইজিশন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেই জুলিয়ার কাছে গেছি। দেখেছি ওর কাজ কেমন পরিষ্কার, নিখুঁত ভাবে ডকুমেন্টেড। কর্পোরেট জগতে অনেকেই মুখে মিষ্টভাষী হলেও অন্যকে সাহায্য করাটা প্রতিযোগিতার পথে বাধা হিসেবে দেখে। জুলিয়ার মধ্যে সে ধরনের কোন মালিন্য ছিল না। মাসখানেক আগে আমাদের টিম আয়তনে বাড়লো। তখন জুলিয়া আমাদের টিমে এল ক্রেডিট লাইন অ্যাসাইনমেন্টে ওর ছ’বছরের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে। তখনই নিশ্চয় মনে মনে জানতো যে এই কাজ বেশিদিনের জন্য নয়। কারন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই নোটিস এল জুলিয়া চায়নাতে ফিরে যাচ্ছে। ওর ননদের একটা ছোট গারমেন্টসের ব্যাবসা আছে। ওর বর ব্রায়ান ঠিক করেছে দেশে ফিরে গিয়ে বোনের সাথে ব্যাবসাটা বাড়াবে। জুলিয়াও তাই দেশে ফিরছে অ্যামেরিকার পাট চুকিয়ে, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে, আট বছরের প্রবাসকে পিছনে ফেলে।

জুলিয়ার চলে যাওয়ার খবরে মন খারাপ করার সময়টুকুও পেলাম না। যতদিন জুলিয়ার জায়গায় নতুন কেউ না আসছে ততদিন ওর বেশ কিছু কাজ আমাকে দেখতে হবে। এর আগে লাইন অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করি নি কখনও। একেবারে নতুন জিনিসপত্র। ভালো করে বোঝার আগেই হুড়মুড় করে গাদা খানেক প্রজেক্ট ঘাড়ে চেপে গেল। তখন আবার জুলিয়াকে চিনলাম। কি কাজ করতে হবে, কি রকম পড়াশোনা করতে হবে, এমনকি কি ভাবে ভাবা উচিত নতুন স্ট্রাটেজি নিয়ে – সবকিছু জুলিয়া আমাকে মোটে দু’সপ্তাহের ট্রেনিং-এ বুঝিয়ে দিল। একা আমাকে তো না। আমি আর মাইক – দুজনে মিলে ভাগ করে নেবো জুলিয়ার কাজ – দুজনকেই।

আজ ছিল জুলিয়ার শেষদিন। সকালে কফি নিয়ে ফিরছি, ওর কিউবের মানি প্ল্যান্টটার দিকে চোখ গেল। জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি তো কেটে পড়ছো, মানি প্ল্যান্টটার কি হবে এখন? ও বললো, তুমি নেবে প্লীজ? – নিতে তো পারি। কিন্তু কি ভাবে পরিচর্যা করবো তা তো জানি না। - কিচ্ছু না, সপ্তাহে একবার জল দিও, তাহলেই হবে। নিয়ে এলাম জুলিয়ার মানি প্ল্যান্টকে নিজের কাছে। প্রথমবারের জলটা জুলিয়াই দিল নিজের হাতে। ওর কাছে শেষবারের মত। সব ফার্নিচার বিক্রি হয়ে গেছে। এখন মেঝেতে স্লিপিংব্যাগ পেতে শুচ্ছে ওরা। সোফিয়া বেচারি কিছুই বুঝতে পারছে না, লোকে কেন ওদের বাড়ি থেকে আজকে সোফাটা, কালকে খাটটা, পরশু টিভিটা নিয়ে চলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যখন ওর গোলাপি রঙের মিনির ছবি দেওয়া ডিভিডি প্লেয়ারটাও একজন এসে নিয়ে গেছে তখন খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। জুলিয়া বলছে, ওকে বললাম চলো আমরা চায়না যাই, তারপর আবার সব হবে আমাদের। সত্যি কি সব হয়! যেমনটি ছেড়ে যেতে হয় ঠিক তেমনটি কি আর কখনও ফিরিয়ে আনা যায়!

দুপুরে লাঞ্চ করলাম একসাথে। জুলিয়া শেষবারের মত মনে করিয়ে দিল, তোমার ফোনটা ইনসিওর করিয়েছ? বলা বাহুল্য, করাইনি। ভুলে মেরে দিয়েছি। আসলে ব্রায়ানের আই-ফোনটা ওদের গতবারের চায়না ট্রিপে হারিয়ে গেছে। এদেশে সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে কনট্রাক্টে থাকলে খুব সস্তায় ফোন পাওয়া যায়। কিন্তু কনট্রাক্টের বাইরে ফোনের ভীষন দাম। ব্রায়ানের ফোনে লস্ট অ্যান্ড স্টোলেন ইনসিওরেন্স ছিল না। তাই ফোন হারানোর পর ওকে প্রচুর দাম নিয়ে নতুন ফোন কিনতে হয়েছে। তারপর থেকেই জুলিয়া আমাদের বলে যাচ্ছে ফোন ইনসিওর করিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি যথারীতি ল্যাদ খেয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই করা হয়ে উঠছে না কাজটা। তবে এবারে করে ফেলতে হবে। জুলিয়া তো আর থাকবে না মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

যাওয়ার আগে যেটা করল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। জুলিয়ার টেবিলে একটা বানি ছিল, একটা মিষ্টি মত খরগোস ছানা একটা ছোট ঝুড়ি ধরে আছে বুকের কাছে। ঝুড়িটাকে পেনস্ট্যান্ড বা সেল-ফোন হোল্ডার হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। জুলিয়ার কাছে যখনই যেতাম বানিটার লম্বা লম্বা তুলতুলে কানে একটু আদর করে দিয়ে আসতাম। বেলা তিনটে নাগাদ, জুলিয়ারই কাগজপত্রগুলো তখন আরেকবার রিভিউ করছি, জুলিয়া এল আমার কিউবে। - শুচি, তুমি আমার বানিকে রাখবে? যখন প্রথম ইউ এসে এসেছিলাম, সেই ২০০২ থেকে এই বানিটা আমার কাছে আছে। তুমি নেবে একে? – অনেকদিন এতটা আবেগতাড়িত হই নি। আমি তো এর যোগ্য নই। তোমার আট বছরের প্রবাসকে তুমি আমার হাতে তুলে দিচ্ছো জুলিয়া! কিছুই বলতে পারলাম না। চুপচাপ হাসলাম শুধু।

তারপর আর কি! আমার ডেস্কে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে জুলিয়ার বানি। আমি ভাবছি আমাকেও একদিন দিয়ে যেতে হবে কাউকে। এভাবেই তো চলে রিলে রেস। এভাবেই তো বৃত্তটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। আর ছড়িয়ে পড়তে থাকি পরিধি জুড়ে। কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। অথচ তাও কেমন হাতে ধরা থাকে হাত!

4 comments:

  1. যথারীতি বেশ ভালো লাগলো... প্রবাস ও ভীষণ কিউট !
    জুলিয়া কে আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিয়ো

    ReplyDelete
  2. lekhata bala bahulyo sundor hoyechhe....Bunny k dekhte ichchha korchhe

    ReplyDelete
  3. jabbaba! bunny-r chhobi to lagiyechhi!!

    ReplyDelete