আজকাল ভারী বৃষ্টি পড়ে। এই ছিল শুকনো খটখটে রোদ, ঝলমলে উজ্জ্বল দিন। হঠাৎ করে তার ঠোঁট ফুলে ওঠে। তার টানাটানা দীর্ঘ চোখের পাতা নিবিড় হয়। তার গলার নীল শিরাটা কাঁপতে থাকে। হু হু করে হাওয়া দেয়। নিঃসাড় শরীরে হঠাৎ ব্যথা পাওয়ার মত একটা তীব্র জীবন্ত অনুভূতি তোলপাড় করতে থাকে সারা চরাচর। সেই সাথে উড়ে বেড়ায় ফেলে দেওয়া কোকের বোতল, উপচে পড়া ট্র্যাশক্যানের আবর্জনা, গ্রসারীর বিলের ছেঁড়া টুকরো। আর এদের মাঝেই সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে বৃষ্টি নামে। ধারালো নখের মত হিংস্র তুমুল বৃষ্টি। অবাধ্য মেয়ের মত সে আছড়ে পড়তে থাকে মাটির বুকে। যেন আরেকটু ধাক্কা দিলে মাটিটাও গলে যাবে।
আমি আমার জানলা দিয়ে দেখি বেরি গাছটা আকন্ঠ ভিজছে। লাল লাল ছোটো ছোটো বেরি – বৃষ্টিকণা তার উপর পড়ে এক একটা ম্যাজিক ক্রিস্টাল তৈরী হয়। কাঠের বেড়াটার গায়ে ফুটে ওঠে সবজ়েটে ছবি। ম্যাপল পাতাগুলো ভীষন বৃষ্টি খেয়ে গুটিসুটি চুপচাপ। কতবার ভাবি ক্যামেরাতে তুলে রাখবো এই মুহুর্তটুকু। জলের ছিটে লেগে লেন্সই ভেজে শুধু। সে আর ধরা দেয় না। ভারী রাগ হয় আমার। তাই তো... আসবি কেন আমার কাছে... আমি কি আর তেমন দেখনদার! খাটের ওপর ক্যামেরা ছুঁড়ে ফেলে সবকটা জানলা খুলে দিই। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যেতে থাকে আমার গেরস্থালী, আমার ছেঁড়া পাতার আঁকিবুঁকি। আমার ডায়েরীতে লেখা দিনগুলি বৃষ্টির আদর পেয়ে গলে যেতে থাকে। আকাশের মত নীলচে ধূসর হয়ে ওঠে তারা। আমি বাধা দিই না। ওরা ভিজতে ভিজতে একসময় মেঘেদের মাঝে মিশে যায়।
এমন সময় আকাশ ভরে আলো ফোটে। বৃষ্টিশেষের প্রথম আলো। অপূর্ব এক হলুদ আলো। একফালি মেঘ সরিয়ে দিয়ে ক্ষণিকের জন্য সে দেখা দেয়। লুকিয়ে পড়ে পর মুহুর্তেই। অবিরাম বর্ষণের মাঝে ভারী গোপন এক সুখের মত নরম সেই আলো ছড়িয়ে পড়ে সদ্যস্নাত ম্যাপল পাতায়, বৃষ্টিকাতর পথে পথে, নীলচে ধূসর আকাশের কোণে কোণে। সেই আলোটুকু ছোঁয়ার জন্য আমি বার বার ঘর-বাহির করি।
খন্ডিতাদের যাপিত জীবন
2 years ago
besh valo laglo...
ReplyDeletebhaggis bristita ekhon tor okhane noito ei moner lekhata kali kolome dekhte petam na.. :-) .. bristike ektu eidik paneo pathie dis
ReplyDelete