About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, August 1, 2009

সেই নীল কেডসের গল্প

একটা ইরানীয়ান সিনেমা দেখছিলাম – Children of Heaven। দুই ভাই-বোন। খুব গরীব তারা। বোনের জুতোটি চুরি যায়। কিন্তু মাসের মাঝখানে নতুন জুতো আসবে কি কোথা থেকে। তাই তারা বাবা-মার থেকে জুতোচুরির কথা গোপন করে। ভাইয়ের জুতো পরে মেয়েটি সকালবেলা তার স্কুলে যায়। ছুটি হওয়া মাত্র সে দৌড়তে থাকে বাড়ির দিকে – যেখানে তার ভাই স্কুলব্যাগ কাঁধে অপেক্ষা করে আছে। বোন এসে পৌঁছানো মাত্র তার পা থেকে জুতো খুলে সে রওনা দেবে তার স্কুলের পথে।

কেন জানিনা ছোটোবেলায় আমার ধারনা ছিল আমরা খুব গরীব। বড়লোক না হলেও জুতো কিনে দেওয়ার মত পয়সা আমার বাবা-মার ছিল। কিন্তু আমি তা জানতাম না। তখন আমি ফোরে পড়ি। আমার একটা গাঢ় নীল রঙের কেডস জুতো ছিল। আমার বন্ধুরা যদিও মাঝে মধ্যেই নিউকাট বা ব্যালেরিনা পরে ফেলতো, আমার স্বপ্নের দৌড় ছিল ঐ নীল কেডস ছাড়িয়ে বড়জোর একটা পালিশ করা কালো রঙের পাম্প। তবে স্বপ্ন ছিল মনেই। প্রকাশ করার সাহস হয়নি কখনো।

তারপর তো সেই মেয়ে ফাইভে উঠলো। অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে ভর্তি হল নতুন স্কুলে। বিশাল বড় বাড়ি। বিশাল খেলার মাঠ। মাঠ ভর্তি সাদা জামা নীল ফিতে বাঁধা মেয়ের দল। আর রাশভারী দিদিমনিরা। প্রথম দিন স্কুলে গেলাম। সাদা জামা। মাথায় ক্লিপ দিয়ে গোঁজা নীল ফিতের ফুল। পায়ে কিন্তু সেই নীল কেডস। সাদা কেডস পরা মেয়েদের এর আগে আমি দেখেছিলাম। আমাদের বাড়ীর সামনে দিয়েই স্কুলের পথে হেঁটে যেতে। কিন্তু আমার বাবা বললেন জুতো পরা নিয়ে তো কথা। সাদা যদি চলে তো নীলও চলবে। অগত্যা আমি ঐ নীল জুতো পরেই দাঁড়ালাম প্রার্থনার লাইনে।

প্রেয়ারের পরেই খেলার টিচার খুশীদি ক্লাস ফাইভের নতুন আমদানীদের সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন মাঠের মাঝে। তীক্ষ চোখ জরীপ করতে লাগলো সদ্য আসা মেষ-শাবকদের। কার মাথায় ফিতে নেই, কার তখনো ব্যাজ কেনা হয় নি, কার নখের কোনে ময়লা, কোন মেয়ে কেডসের ওপরেই নূপুর পরে চলে এসেছে – সব অমার্জনীয় অপরাধীদের আলাদা লাইনে দাঁড় করাতে করাতে খুশীদির চোখ পড়লো আমার পায়ে। সারি সারি সাদা জুতোর আড়ালে আমার অপরাধী পা-কে আড়াল করার যথাসাধ্য চেষ্টা যদিও আমি করেছিলাম – কিন্তু ধরা সেই পড়েই গেলাম। হুকুম হল পরের দিন থেকে সাদা কেডস পরে আসার।

হুকুম তো হল। কিন্তু সাদা জুতো আমি পাবো কোথায়! একটা নতুন জুতোর কত দাম হতে পারে তার কোন ধারনা আমার ছিল না। বাড়িতে বলি কি করে। যদি বাবা-মা না দিতে পারে। যদি তাদের কষ্ট হয়। তাই পরের দিনও ঐ নীল জুতো পরেই আমি স্কুলে গেলাম। তখনো আমার ভগবানে খুব বিশ্বাস। প্রানপনে ঠাকুর ডাকছি। আজ যেন খুশীদি না আসেন। যেন ধরা না পড়ি। হে ঠাকুর পা-টা কেন মাটির মধ্যে ঢুকে যায় না আমার! কিন্তু ঠাকুর সেদিন বধির হলেন। আবার দাঁড়াতে হল আলাদা লাইনে। প্রার্থনার লাইনে দাঁড়ানো সব মেয়ে ক্লাসে ঢুকে গেল। আমি রইলাম পড়ে আরও জনা-পাঁচেকের সাথে মাঠের মাঝে। সেদিনও কেন পায়ে নীল জুতো তার কোন উত্তরই আমার কাছে ছিল না।

এবং তার পরের দিনও। আবার দাঁড়িয়ে থাকা বোবা হয়ে রোদের মাঝে। এবার বোধহয় খুশীদির ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। উনি বললেন কালও যদি তোমায় নীল কেডসে দেখি তা হলে বাবার থেকে চিঠি নিয়ে আসবে। আমার তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জুতোর কথা তাহলে আর আড়াল করা যাবে না বাবা-মার থেকে। জানাতেই হবে ওদের। কিন্তু কি ভাবে কিনবে তারা জুতো মাসের মাঝখানে! খুশীদিকে পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ মনে হতে লাগলো। আর এক রাশ চিন্তার পাহাড় বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম সেদিন স্কুল থেকে।

খুব ভয়ে ভয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললাম জুতোর কথা। মা বললেন একথা আগে বলো নি কেন। সেদিনই চলে এল আমার সাদা কেডস। বাবার চিঠি ছাড়াই স্কুলে গেলাম পরের দিন। দাঁড়াতে হল না আলাদা লাইনেও। আমার গল্পটা কোন সিনেমার গল্প নয়। কোন জীবন সংগ্রামের গল্প নয়। তবে ইরানের একটি গ্রামে বড় হতে থাকা দুই ভাই-বোনের ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ অনেক দিন আগের একটা বাচ্চা মেয়ের বোকামির কথা মনে পড়ে গেল। তাই লিখে রাখা।

1 comment: