আয়া সোফিয়ার সামনে যতবার দাঁড়িয়েছি একটা কৃতজ্ঞতা বোধ হয়েছে। কারণটা ব্যাখ্যা করি। ইস্তাম্বুল বা কনস্ট্যান্টিনোপল শহর যতদিন পৃথিবীতে আছে, আয়া সোফিয়াও প্রায় ততদিন। মনে করা হয় কনস্ট্যানটাইন খ্রীষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার আগে এখানে মন্দির ছিল যেখানে মূর্তিপুজো হত। কনস্ট্যানটাইন দক্ষ রাজনীতিক ছিলেন। খ্রিস্টান এবং মূর্তিপূজক দুইপক্ষকেই খুশি রেখে চলতেন। তবে মারা যাওয়ার আগে নিজে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে মূর্তিপুজো লোপ পেল। গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হিসেবে আয়া সোফিয়া তৈরি হল। দেখবার মতো স্থাপত্য। চার্চের ভিতরের দেওয়ালে অসাধারণ সব মোজাইকে যীশুর জীবনের নানা ঘটনা আঁকা। কনস্ট্যান্টিনোপলের ইতিহাস ঘটনাবহুল। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে আয়া সোফিয়ারও। একবার এক আইকনোক্লাস্ট পাগলা রাজা এসেছিল। তখন ইসলাম সবে জন্ম নিয়েছে। মুসলিমদের দেখাদেখি তার মনে হল ঈশ্বরের ছবি আঁকা পাপ। তখন তার নির্দেশে ঈশ্বরের পুত্রের সব ছবি মুছে দেওয়া হল আয়া সোফিয়া থেকে। সেই পাগলের যুগ শেষ হলে আবার পরের রাজা এসে ভালো ভালো মোজাইক করিয়ে দিলেন। এইভাবে চলে। চতুর্থ ক্রুসেডের সময় রোমান ক্যাথলিকদের সাথে গ্রীক অর্থোডক্সদের ঝগড়া বাধল। কনস্ট্যান্টিনোপলে ব্যাপক লুঠতরাজ চলল। কিছুদিনের জন্য গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হল রোমান ক্যাথলিক। তবে রোম থেকে কনস্ট্যান্টিনোপল শাসন করা সহজ ছিল না। বস্তুত সেই কারণেই কনস্ট্যান্টিনোপল শহর তৈরি হয় হাজার বছর আগে। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য শুরু হয়েছিল ইস্টার্ন রোমান সাম্রাজ্য হিসেবে। পরে সুতো আলগা হয়ে যায়। এবারেও চতুর্থ ক্রুসেডের পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই আয়া সোফিয়া আবার গ্রীক অর্থোডক্স হয়ে যায়। আরও দেড়শো বছর পর কনস্ট্যান্টিনোপলে বড়সড় পরিবর্তন আসে। অটোমান রাজারা শহর দখল করে। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য চিরতরে শেষ হয়। আয়া সোফিয়া হয়ে যায় মসজিদ। শহরের নাম ইস্তাম্বুল।
Saturday, July 11, 2020
আয়া সোফিয়া
Thursday, June 4, 2020
মিঠুন্দার মাস্কতুতো ভাই
স্থানঃ বৈদ্যবাটির একটি পাড়ায় সবজিবিক্রেতার ঠেলাগাড়ি
Sunday, May 17, 2020
আরুগ্রামে
আরু গ্রামের বিশ্রামাবাস থেকে সকাল বেলা হাঁটতে বেরিয়ে মনে হল সামনের সবুজ পাহাড়টায় চড়া যাক। সেবারে ফিরে এসে জেনেছিলাম রক্তের হিমোগ্লোবিন বিপদসীমার নিচে। তখন উপসর্গ বলতে চড়াই উঠতে দমের অভাব। মিঠুন যত্ন করে বিশ্রাম করিয়ে করিয়ে গল্প করতে করতে নিয়ে যায়। মে মাসের নবীন সতেজ উপত্যকা, বুনো ফুল, তিরতিরে নদী সবাই মিলে উতসাহ দেয়। খানিক পথ উঠে একটা ছোট গুহা। একটা ক্ষীনতোয়া প্রস্রবণের মুখ। সেখানে একটা পাথরের ওপর কাওয়ার সরঞ্জাম নিয়ে বসেছে একটা লোক। সেখানেই ছেলেটার সাথে দেখা। এক পাল ভেড়া নিয়ে উপত্যকার নিচে বাসা বাঁধা বকরওয়ালদের গুষ্টি উদ্ধার করছিল চা-ওলার সাথে। আমি সুযোগ পেয়েই বসে পড়ি। মিঠুন গল্প জোড়ে। কাওয়া খেতে খেতে সেই বছর পনেরোর রাখালছেলের সাথে আলাপ। ছেলেটা তার মায়ের প্রথম সন্তান। রীতি অনুযায়ী নাম পেয়েছে মহম্মদ।এরা গুজ্জর। জম্মুর নিচের কোন গ্রাম থেকে শীতের শেষে ভেড়া নিয়ে বেরিয়েছে মা আর চার ভাইবোন নিয়ে। পাহাড়েই কাটবে গ্রীষ্মের মাসগুলো। চিকন সবুজ উপত্যকায় আগের বছরের ফেলে যাওয়া কাঠের ঘরের কাঠামো মেরামত করে পশুপালন চলবে। রোম্যান্টিক জীবন মনে হয় দূর থেকে। কাজাখ সহকর্মীর কথা মনে পড়ে। চীনের বর্ডারে থাকতো তারা। পশুপালন পেশা। গোটা গরমকালটা সবুজ সবুজ উপত্যকায় পশু চরায়। মধু সংগ্রহ করে। জীবনের প্রথম আঠেরো বছর কোনো ওষুধ কোম্পানির তৈরি গুলি খায় নি সে। কাওয়া খেয়ে এই ছেলেটার সাথে হাঁটতে থাকি। কথায় কথায় বলে ইসলামাবাদে গতকাল ঝামেলা হয়েছে। খট করে কানে বাজে। শ্রীনগরকে স্থানীয়রা ইসলামাবাদ বলে। তবে ট্যুরিস্টদের সামনে বলে না। এ ছেলের সে খেয়াল নেই। সিনেমায় অভিনয়ের খুব শখ। মিঠুন কিনা টালিগঞ্জের ছেলে। উত্তমকুমারের পরেই তার নাম। মহম্মদ মিঠুনকে বলে, তোমাদের ওখানে আমার কোনো সুযোগ হয় না? ইংরিজি জানি একটু একটু। তোমাদের ভাষাও শিখে নেবো। আমরা অতি কষ্টে সামলাই। - বকরওয়ালদের ওপর রাগ কেন ভাই? - ওরা নোংরা করে রাখে পাহাড়টা। লোক ভালো না ওরা। হিমালয়ের অবর্ণনীয় ঐশ্বর্যে শিহরিত আমরা জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলি। আমার বিশ্রামও হয়। মহম্মদ ছবি তোলা দেখে। - তুমি তুলবে? সলজ্জ ঘাড় নাড়ে সে। জুম, এক্সপোজার শিখে নেয় সঙ্গে সঙ্গেই। দেখতে দেখতে উপরের উপত্যকায় উঠে আসি। সবুজ মখমলে মোড়া সমতল। দুইখানা কাঠের ঘর। - তোমাদের ঘর নাকি? - না না, আমরা আরও ওপরে উঠে গেছি। এখন কেউ নেই এখানে। ঘরের সামনে একটা বড় পাথরের স্ল্যাব। যেন চেয়ার পাতা আছে উঠোনে। আমি পা ছড়িয়ে বসে হা হা করে নিশ্বাস নিই। আর উঠবো না। রাখাল ছেলে আমাদের ক'টা ছবি তুলে দিয়ে ভেড়ার দল নিয়ে আরও উপরে উঠতে থাকে।
আরুগ্রামে
আরুগ্রামে আমরা ছিলাম বিলালভাইয়ের আতিথ্যে। রজত সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। পহেলগাম থেকে বারো কিমি দূরে ছোট্ট গ্রাম আরু। বিলালভাই এর গেস্টহাউস মিল্কি ওয়ের সামনেই বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকা। ঘন পাইন বনের ওপাশে বরফে মোড়া পাহাড়চুড়ো। তিরতির করে বয়ে চলে আরু নদী। বিলাল ভাইয়ের দাদা ফৈয়জ ভাইকে মাইক্রফট হোমসের মত দেখতে। শার্লক হোমসের দাদাকে আমি দেখিনি, কিন্তু বর্ণনা পড়ে মনে হয় তিনি নিশ্চয়ই এমনই লম্বা, এমনই খাড়া নাক তাঁর, এমনই ক্ষুরধার দৃষ্টি। গেস্ট হাউসের কাঁচ ঢাকা বারান্দা থেকেই ইশকুলটা দেখা যায়। গ্রামের একমাত্র ইশকুল। ফৈয়জ ভাই বললেন টিফিনের ছুটির সময় মাস্টারমশাইয়ের সাথে দেখা করা যাবে। ইশকুলে সাকুল্যে চারজন শিক্ষক। দুইজন হিন্দি, উর্দু পড়ান। বাকি দুজন ইতিহাস, ভূগোল। বিজ্ঞান, অঙ্ক, ইংরিজি পড়ানোর কেউ নেই। ছেলেমেয়েরা কিন্তু দিব্যি বুদ্ধিমান। ছেলেরা মোটামুটি সকলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট সিজনে ঘোড়া ধরে। শুনে শুনেই চমৎকার ইংরিজি শিখে নিয়েছে। মাস্টারমশাই বললেন, কদিন আগে এক রিটায়ার্ড জেনারেল বেড়াতে এসেছেন। তাঁর ঘোড়া ধরেছে একটি বুদ্ধিদীপ্ত সপ্রতিভ ছেলে। জেনারেল রীতিমত অভিভূত হয়ে তার কথা জিগ্যেস করছেন গ্রামে। জানা গেল সে ছেলে পহেলগাম তফশিলে বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
Wednesday, April 8, 2020
শিভ্যলরি ইন দ্য টাইম অফ করোনা
মাসখানেক একটানা রান্নাবাটি করে আজ অন্তরাত্মা বিদ্রোহ করলো। কিছুতেই রাঁধবো না। বার্গার কিং, ওয়েন্ডিস, এমনকি ম্যাকও চলবে। সাথের লোকটি এই সংকল্পে ঘাবড়ে গিয়ে সুড়সুড় করে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করল। আমি ঘরের পাজামাতেই একখানি মাস্ক সাথে নিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। ও হ্যাঁ, আমার চীনে বন্ধুর বাড়ি থেকে মাস্ক এসেছে, সে আবার তার সঞ্চয় থেকে আমায় পাঠিয়েছে কয়খান। হুঁ হুঁ বাবা, বন্ধু ভাগ্য নিয়ে কেউ কম্পিট করতে এসো না। রাস্তায় গাড়ি প্রায় নেই। নিরিবিলি শহর। ম্যাক বা বার্গার কিংএর দুর্ভাগ্য পোহাতে হল না। একখানি আর্বিস খোলা পাওয়া গেল। ড্রাইভ থ্রুতে খাবার নেবো। তাকে বললাম, পেমেন্ট করা আর অর্ডার ডেলিভারি নেওয়ার সময়ে মাস্ক পরিস, তাহলেই হবে। সে স্বাস্থ্য সচেতন। রিমোট অর্ডার প্লেসিংএর সময়েই মাস্ক পরে নিল। তারপর প্রতীক্ষা পেমেন্ট উইন্ডোর সামনে।
Thursday, March 5, 2020
৮ই মার্চের গল্প
৮ই মার্চের গল্প (আজ সময় পেয়েছি, তাই আজকেই)