About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Friday, December 24, 2010

ছায়াপথের কথা - ২

গল্প – ২ (উৎসঃ টোবা ইন্ডিয়ান, আর্জেন্টিনা)
--------------------------------

[ টোবা ইন্ডিয়ানদের দেখা পাওয়া যাবে দক্ষিণ আমেরিকার গ্র্যান চাকো অঞ্চলে। বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে আর আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী এই এলাকা দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণতম অঞ্চলগুলির একটি। টোবারা ছিল যাযাবর। পঞ্চাশ-ষাট জনের ছোট ছোট দলে ঘুরে বেড়াত। খরাপ্রবণ এই অঞ্চলে খাবার খুঁজে পাওয়াই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় চিন্তা। তাদের ছায়াপথের গল্পও তাই খিদের গল্প।

টোবাদের কল্পনায় সূর্য হল এক জরাগ্রস্ত বুড়ি। কচ্ছপের মত খসখসে ভারী শরীর সে অতি কষ্টে বয়ে নিয়ে চলে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। দিন যেন ফুরোতেই চায় না।

দক্ষিণ আমেরিকার ঐ অঞ্চলে গ্রীষ্মের দিনগুলি দীর্ঘ, অগ্নিবর্ষী – তাই কি সূর্যের তুলনা কচ্ছপের সাথে? ]


সেটা ছিল গ্রীষ্মকাল। সূর্যবুড়ি সবে ঘুম ভেঙে উঠেছে। আমাদের গল্পের নায়ক চিন্নি, একটি চাতকপাখী, মন দিয়ে খাদের ওপর বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা নড়বড়ে সাঁকোটা মেরামত করছিল। সাঁকো বলতে কিছুই না – একখানি গাছের গুঁড়ি। যেন আধশোয়া হয়ে ঠেস দিয়েছে এই পাহাড় থেকে ঐ পাহাড়ে। মধ্যিখানে গভীর খাদ। এপার থেকে ওপারের গাছগুলিকে দেখায় ঘন সবুজ। এদিকের মত ঝলসানো নয়। খাবারের আকাল পড়লে ওদিক পানে যাওয়া ছাড়া উপায় কি! অথচ দেখ, পারাপারের ধকল নিতে নিতে কেমন জীর্ণ হয়েছে সাঁকোটা। এখনই না সারালে যে কোন মুহুর্তে ভেঙে পড়বে। এইসব ভাবতে ভাবতে জলদি ঠোঁট চালায় চিন্নি। কারোব গাছের ঝুরি দিয়ে কষে বাঁধতে থাকে সাঁকোটাকে পাথরের সাথে।

এমন সময় হাসির আওয়াজ শোনা যায়। টুকটাক দুয়েকটা কথা। দীর্ঘশ্বাস। চিন্নি দেখতে পায় দশ-বারোটি মেয়ের একটি দল এদিক পানে আসছে। - ‘ সেই সকাল থেকে খুঁজে খুঁজে কি পেলাম দেখ! এক টুকরো কন্দ। তাও আবার পচা। এটা তুই কার মুখে দিবি বল! ’ – ‘ এখনই হাল ছেড়ে দিলি! সূয্যিবুড়ি তো এখনও খাপই খোলে নি ’ । - ‘ চল ঐ কারোব গাছের ছায়ায় জিরৈ দু ’ দন্ড। তারপর ঠিক করা যাবে কোন দিকে যাওয়া যায় ’ । ওরা চিন্নির পাশে এসেই বসে। খেয়ালই করে না চিন্নিকে। গ্রীষ্মকাল। এই সাত সকালেও রোদ্দুর ঠা ঠা করছে। ওরই মধ্যে একটু হাওয়া খেলে। চানার ফলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে সেই হাওয়ায়। - ‘ কি মিষ্টি বাস গো! ’ – মেয়ের দলের সবচেয়ে ছোটটি পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় খাদের দিকে – ‘ ঐ দেখ, ঐ পারে ফল ধরে আছে গাছে! কেমন রাঙা, আগুনরঙা ফল! ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছটা! চল দিদি, ওপারে যাই আমরা ’ । চানার ফলের গন্ধে সকলেরই মরে থাকা খিদে চনমন করে উঠেছে। - ‘ কিন্তু যাবি কি করে? এই গভীর খাদ পেরোব কি করে আমরা? ’ – ‘ আরে! এই দেখ! এই ঝোপের আড়ালে একখানা গাছের গুঁড়ি পাতা রয়েছে এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়ে। আর চিন্তা কিসের? চল চল! ’ – ‘ না না, এখনও কাজ শেষ হয়নি আমার, এখনই উঠো না তোমরা সাঁকোতে ’ – চেঁচিয়ে ওঠে চিন্নি। কিন্তু চিন্নির ভাষা মেয়েরা বুঝতেই পারে না। তাদের চোখে তখন আগুনরঙা ফল, পেটে গনগনে খিদে। সাঁকোর ওপর ছুটতে থাকে তারা। ওপারে পৌঁছতে হবে জলদি! খাদের মধ্যে শোঁ শোঁ করে হাওয়া দেয়। পাথরের দেওয়ালে দেওয়ালে সে হাওয়া পাক খেতে খেতে উল্টো ধাক্কা দেয় জরাজীর্ণ সাঁকোতে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে নড়বড়ে কাঠের গুঁড়ি সবকটা মেয়েকে নিয়ে। তাদের আর ওপারে যাওয়া হল না কোনদিন।

চিন্নি থুম মেরে বসে আছে খাদের কিনারে। সূর্যবুড়ি আগুন ঢালছে মাথার ওপর। একটু আগে যেখানে সাঁকোটা ছিল এখন সেখানে সেখানে হাঁ হাঁ করছে খাদ। ঝোপের মধ্যে খড়মড় শব্দ হয়। চিন্নি নড়চড়ে বসে। লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে আসে এক সারস। - ‘ কে হে তুমি? কোত্থেকে আসছ? ’ – শুধোয় চিন্নি। - ‘ আসছি বহুদূর থেকে। সেখানে সব খাবার ফুরিয়েছে ’ । - ‘ যাবে কোথায়? ’ – ‘ আর কোথায়! যেখানে খাবার আছে সেইখানে! শুনেছি ওদিকের পাহাড়ে এখনও খরা নামে নি। কিন্তু পেরোব কি করে? কাছাকাছি কোন সাঁকো নেই? ’ – ‘ ছিল হে। এখানেই ছিল ’ – বিমর্ষ চিন্নি বলে – ‘ ভার নিতে পারল না। ভেঙে পড়ল চোখের সামনে। নড়বড় করছিল যখন সারাবার চেষ্টা করেছিলাম। নতুন সাঁকো বানাব এমন কারিগর তো আমি নই! ’ – ‘ কিচ্ছুটি ভেবো না তুমি। আমি বানিয়ে দেব নতুন সাঁকো ’ – বলল সারস। লম্বা শক্ত ঠোঁট দিয়ে কাঠ চিরে তক্তা বানাতে শুরু করে দিল। গাছের ঝুরি দিয়ে কষে বাঁধল তাদের। তারপর পাম গাছের পাতা দিয়ে সুন্দর রেলিং বানিয়ে দিল একখানা। সূর্যবুড়ি ততক্ষণে পশ্চিমে ঢলতে শুরু করেছে। - ‘ কই হে চিন্নি! নতুন সাঁকোটা কেমন হল দেখে যাও একবার! ’ – হাঁক দেয় সারস। – ‘ বাহ! তুমি তো ভারি কাজের মানুষ হে! সাঁকোর মত সাঁকো হয়েছে একটা ’ – তারিফ করে চিন্নি – ‘ চলো যাওয়া যাক তাহলে ওপারে ’ । - ‘ দাঁড়াও, কাজ বাকি থেকে গেছে একটা ’ – বলল সারস – ‘ এখানে বড় ঝোপঝাড়। একটা পথ বানাতে হবে যাতে সবাই সাঁকোটা দেখতে পায়। খাবারের খোঁজে এসে সাঁকো খুঁজে না পেয়ে ফিরে যেতে হলে সে ভারী বিশ্রী ব্যাপার হবে ’ । পশ্চিম আকাশ লাল করে সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে। সারস সেই রঙে রঙ মিলিয়ে ঝোপে আগুন ধরিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ল গাছ থেকে গাছে। মস্ত বড় সাদা ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেতে খেতে উঠতে লাগল আকাশপানে। চিন্নি দেখল অন্ধকার আকাশের বুক চিরে এগিয়ে চলছে একটা উঙ্কÄল সাদা পথ – নাগাইক – সেই পথ ধরে হাঁটলে খাওয়া-পরার আর একটুও অভাব থাকবে না।

No comments:

Post a Comment