About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Thursday, December 23, 2010

ছায়াপথের কথা - ১

ছায়াপথ নিয়ে পৃথিবীর নানা দেশে নানা গল্প আছে। তারই কিছু অনুবাদ করব।


গল্প – ১ (উৎসঃ সপ্তম শতাব্দীর জাপান। তবে আদতে নাকি গল্পটি চীন থেকে জাপানে এসেছে)
----------------------------------------------------------------

জাপানদেশে কামি নামে এক দেবতা ছিলেন। তিনি হলেন স্বর্গের রাজা। ইন্দ্র বলা চলে, তবে আমাদের ইন্দ্রের মত ফাঁকিবাজ নন মোটেই। পৃথিবীটা নিয়ম মেনে চলছে কিনা, সবাই মন দিয়ে নিজের কাজ করছে কিনা সেসব দিকে কামির কড়া নজর। কামির একটি মেয়ে। তার নাম তানাবাতা। যেমন তার রূপ, তেমনি গুণ। তার মত সুতো কাটতে আর কাপড় বুনতে আর কেউ পারত না। তার বোনা কাপড় ছাড়া কামির মনই উঠত না। রোজ ভোরে সূর্যের প্রথম আলোটি যে মুহুর্তে স্বর্গপূরীর দুয়োরে এসে কড়া নাড়ে, তানাবাতা অমনি তার তাঁতটি নিয়ে কাজে লেগে যায়। সারাদিন ধরে সূর্য চলে আকাশপথে, তানাবাতার তাঁত থামে না। সুতো ঘুরতে থাকে সামনে পিছে, তার থেকে নামে ছন্দ, ছন্দ থেকে আসে কবিতা। দিনের শেষে সূর্য যখন পরিক্রমা শেষ করে, সবাই দেখে তানাবাতা তার বাবার জন্য বানিয়ে ফেলেছে সবচেয়ে সূক্ষতম কাপড়, আর নিজের জন্য আস্ত একখানি কবিতা।

একদিন তানাবাতা নিজের ঘরে বসে তাঁত বুনছে, এমন সময় এক মানুষ এসে দাঁড়ায় তার দুয়োরে। মানুষটি বড় রূপবান। একপাল গরু-মহিষ নিয়ে সে চরাতে যাচ্ছে কোথাও। তানাবাতাকে সে বলল, ‘ আমি রোজ যাই এই পথে আর তোমাদের উঠোনে কাপড় শুকোতে দেখি। এত সুন্দর কাপড় আমি আর কোত্থাও দেখি নি। তুমি বুঝি এই কাপড় বোনো? ’ তানাবাতা ভারী লাজুক মেয়ে। সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। মানুষটি এবার বলল, ‘ আমার নাম হিকোবুশি। তোমার নামটি তো বললে না? ’ তানাবাতা চোখ তুলে হিকোবুশির দিকে তাকাল আর দেখা মাত্র মানুষটিকে খুব পছন্দ হয়ে গেল তার। কোনমতে নিজের নামটি বলল তাকে। হিকোবুশিরও ভারী ভালো লেগেছে এই মেয়েটিকে। সে সাহস করে বলল, ‘ আমি যাচ্ছি এই গরু-মহিষ চরাতে সামনের সবুজ মাঠে। হাঁটবে একটু আমার সাথে? ’ যদিও সারাদিন ধরে কাপড় বোনাই তানাবাতার কাজ, তবু তার খুব ইচ্ছে হল এই মানুষটির সাথে খানিক ঘুরে আসে। সে তার তাঁত রেখে হিকোবুশির সাথে বেরোল। সবুজ মখমলের মত মায়াবী মাঠে খরগোস ছুটে বেড়াচ্ছে, কাঠবেড়ালী তিড়িং-বিড়িং করছে ইতি-উতি, একটি ইঁদুর গর্ত থেকে মুখ বার করেই আবার লুকিয়ে পড়ল – তানাবাতা বহুদিন এভাবে বাইরে বেরোয় নি। হিকোবুশি তার কোমরবন্ধ থেকে ছোট্ট বাঁশিটি বার করে বাজাতে লাগল। সুর ভাসছে আকাশে-বাতাসে। গুচ্ছ গুচ্ছ উঙ্কÄল রঙীন ফুল ফুটে আছে। তানাবাতা ভারী যত্ন করে হিকোবুশির জন্য বুনোফুলের কোমরবন্ধ বানিয়ে দিল। কবিতা জন্মাল আবার – হিকোবুশির সুরে, সেই মায়াভরা মাঠের উঙ্কÄলতায় আর তানাবাতার যত্নে।

সন্ধ্যে নামে। হিকোবুশিকে নিয়ে তানাবাতা ঘরে ফিরল। কামির কাছে গিয়ে বলল, ‘ বাবা, আমি হিকোবুশিকে বিয়ে করতে চাই ’ । কামি অরাজি হলেন না। তানাবাতা আর হিকোবুশির বিয়ে হল। কাছেই একটি ছোট্ট কুটিরে নতুন সংসার পাতল তারা। তানাবাতার তাঁত বসল বসার ঘরে। হিকোবুশির গরু-মহিষের পাল সবুজ মাঠে চরে বেড়াতে লাগল। নবদম্পতি নিজেদের নিয়ে মগ্ন। হিকোবুশি বাঁশিতে সুর তোলে, তানাবাতার মনে কবিতারা জন্ম নেয়। সূর্যদেবতা কতবার আকাশ এপার-ওপার করল – হিকোবুশির সুর থামল না, তানাবাতার কবিতারা পথ ভুলল না। আর এদিকে তাঁতে জমল ধুলো, গরু-মহিষের দল কে কোথায় ছিটকে গেল কে জানে!

কামি বহুদিন ধরে দেখছিলেন আর ক্রমশই তাঁর রাগ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত আর ধৈর্য রইল না। ‘ দিনের পর দিন কাজে অবহেলা করেছ তোমরা। তাই তোমাদের আলাদা করে দেব চিরকালের মত ’ – এই বলে কামি স্বর্গের বাঁধ খুলে দিলেন আর তক্ষুনি সাপের ফণার মত উন্মত্ত জলরাশি আছড়ে পড়ল হিকোবুশি আর তানাবাতার মাঝখানে। তানাবাতা দেখল হিকোবুশি বহুদূরে সরে যাচ্ছে। আবছা হতে হতে শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে গেল সে। তাদের দুজনের মধ্যে যোজনবিস্তৃত অনন্ত জলধারা বয়ে চলল আজীবন। পৃথিবীর মানুষেরা তাকেই চেনে ছায়াপথ বলে।

তবে দুঃখের গল্প আমার ভালো লাগে না। জাপানীদেরও লাগত না। এই গল্পও তাই এখানেই শেষ নয়। তানাবাতার দিন চলে আগের মত। সূর্য এসে ঘুম ভাঙায়। সে তার তাঁতটি নিয়ে বসে কামির জন্য কাপড় বানাতে। হিকোবুশির কথা ভেবে মন ভারী হয়ে ওঠে, হাত চলে না। দিনের শেষে কামি এসে দেখেন তাঁর নতুন বানানো কাপড় মেয়ের চোখের জলে ভেজা। তানাবাতা বলে, ‘ বাবা, আমার কাজে ভুল হচ্ছে। আমি জানি আমার শাস্তিই প্রাপ্য। তোমার জন্য তিনভুবনের সেরা কাপড় বানাতাম আমি। কিন্তু সে কাপড় আমি আর বুনতে পারছি না। হিকোবুশি চলে যাওয়ার পর আমার মন ভেঙে গেছে। যদি আমাকে আবার আগের মত কাপড় বুনতে হয়, তাহলে এটুকু আশা অন্তত আমায় দাও যে একদিন না একদিন সামান্যতম সময়ের জন্যও আবার হিকোবুশির সাথে আমার দেখা হবে ’ । কামি দেখলেন এই প্রার্থনা মঞ্জুর করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তিনি বললেন, ‘ বেশ তাই হবে। বছরে একবার, সপ্তম মাসের সপ্তম রাতে তুমি হিকোবুশিকে দেখতে পাবে। তবে হ্যাঁ, যদি সেই রাত মেঘমুক্ত থাকে তবেই। আমার নির্দেশে এক হাজার পাখি এসে তখন সেতু বেঁধে দেবে নদীর ওপর। সেই সেতুর ওপর দেখা হবে তোমার আর হিকোবুশির ’ ।

সেই থেকে প্রতি বছর অগাস্ট মাসের সপ্তমীতে হিকোবুশি আর তানাবাতা অপেক্ষা করে থাকে মেঘমুক্ত আকাশের জন্য। আগেকার দিনে অগাস্ট মাস পড়লেই জাপানীরা কচি সবুজ বাঁশের একটি টুকরো সাজিয়ে রাখত তাদের বাগানে। বাঁশের গায়ে রঙীন কাগজ ় এ কবিতা লিখে ঝুলিয়ে দিত। এই উৎসবের নাম ছিল তানাবাতা-সামা। অগাস্ট মাস তারাখসার মাস। গ্রীক পুরাণে যাকে আমরা পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ বলে জানি, আকাশের সেই প্রান্ত থেকে অগাস্ট মাসে উল্কাবৃষ্টি হয়। সপ্তমী তিথিতে যদি আকাশ পরিস্কার থাকে, যদি তারাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এদিক-ওদিক তাহলে জাপানীরা জানে কামির নির্দেশে হাজার পাখির দল সেতু গড়ছে আকাশ-নদীতে। একটু পরেই দেখা হবে হিকোবুশি আর তানাবাতার। আর যদি মেঘে ভরা থাকে আকাশ? তাহলে আবার অপেক্ষা এক বছরের জন্য। হিকোবুশি ফিরে যাবে তার গরু-মহিষের কাছে। তানাবাতা আবার বসবে তার তাঁতে। আর দিন গুনবে পরের বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনটির জন্য। জাপানী গৃহস্থ বাগানে সাজিয়ে রাখা সবুজ বাঁশটি ভাসিয়ে দেবে নদীতে। ঢেউয়ের দোলা খেতে খেতে সেটা ক্রমশ হারিয়ে যাবে চোখের আড়ালে।

No comments:

Post a Comment