আজ ইনি এলেন আমার ঘরে। প্রথম কবে দেখেছিলাম? স্মৃতি বলছে নিউ ইয়র্কে – মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টস – সাল ২০০৭। মেটের লগবুক বলছে – ঐ সময় তো ইনি এখানে ছিলেন না। সেটাই নিশ্চয় সত্যি। অথচ মন বারবার বলছে পিকাসোর ব্লু-পিরিয়ডের এই নিদর্শনটি দিয়েই আমার ছবি ভালোলাগার শুরু। আজ সেই ছবির একটি প্রিন্ট স্থান পেয়েছে আমার ঘরের দেওয়ালে।
কি গাইছে এই বুড়ো গীটারবাদক? কাঠির মত হাত-পা, নুয়ে পড়া ঘাড়, চক্ষু কোটরাগত, ছেঁড়া জামার ফাটল হাঁ করে আছে কাঁধের কাছে – তবু সে গান গায়! কি গান গায়? জীবনের কোন অতল থেকে রস নিঙড়ে আনে সে?
তার কাছে গিয়ে শুনি সে বিড়বিড় করছে – “কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না – মোহ মেঘে – অন্ধ করে রাখে – তোমারে দেখিতে দেয় না – মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?” ধুলোভরা রাস্তার একপাশে বসে সে বারবার অবুঝ আবেগে প্রশ্ন করে – “চিরদিন কেন পাই না?” পথচারী হেঁটে যায়। কেউ উপেক্ষায়, কেউ উপহাসে। মাঝেমধ্যে দয়ার মুদ্রা ছুঁড়ে দেয় কেউ কেউ। তার কোন বিকার নেই। তার যে মস্ত অভিমান। তার মস্ত দুঃখ। সে তো প্রানপনে চায়। কিন্তু সাধ্য কই! হয় না, হয় না। কিছুতেই হয় না। তার চোখের গুহায় নৈরাশ্যের হলকা। তার গালভাঙা শীর্ণ মুখে জমাট অভিমান। “এতো প্রেম আমি কোথা পাবো নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে”। এইটুকু ভাঙাচোরা পাঁজরায় কোথায় রাখবো তোমায়? কোথায় বসাবো? কেমন করে বইবো? তুমি আপনি না এলে? এই গানটুকু সর্বস্ব করে পথে নেমেছি তাই। আমার শরীরে ধুলো, বসনে ধুলো, মরমে ধুলো – ধুলোমাখা আমি ধুলোর মধ্যে তোমায় খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে অন্ধ হয়ে যাই। তবু খুঁজে বেড়াই। নেশাতুরের মত। একটি বার কাছে এসো। নাও আমায়...