About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Sunday, August 1, 2021

আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ

 বেড়াতে যেতে আমার এত ভালো লাগে তার একটা কারণ হল কোথাও গিয়ে একটু চোখকান খোলা রাখলেই এমন মজার সব জিনিস দেখা যায় যেগুলো জ্ঞানী লোকেরা জানলেও আমার মত সাধারণ পড়াশোনা না করা মানুষের পক্ষে নাগাল পাওয়া কঠিন। তেমনটাই হল পোর্তোরিকো এসে। স্বেচ্ছায় মানুষ অনেক কিছুই করে, কিন্তু বাইরে থেকে সেই জিনিসটাই চাপিয়ে দিলে মন বিদ্রোহ করে। এক বছরের ওপর বাড়ি না গিয়ে আগেও থেকেছি। এবারে যেহেতু কোভিডের চক্করে আর আমেরিকান গভর্নমেন্টের নির্দেশে আসা-যাওয়ায় বাধা পড়েছে, তাই কোনোমতেই ঘরে আর মন টিকছে না। পোর্তোরিকোয় এসে প্রথমেই চোখে পড়ল পথঘাট, পাহাড় কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই চেনা রং মনের ক্লান্তি ঘুচিয়েছে। এদেশে এই গাছের নাম ফ্ল্যামবয়েন। লাল, হলুদ দুই রঙেরই হয়। আজ এক স্যুভেনির শপে ঢুকেছিলাম। উদ্দেশ্য ফ্ল্যামবয়েনের ছবি কেনা। মিঠুন এই ছবিটা হাতে ধরিয়ে দিল। রাঙা কৃষ্ণচূড়া তো রয়েছে, এই তিনজন মানুষ কারা? দোকানের মালিক বললেন এরা হলেন থ্রি কিংস। জানুয়ারীর ছ'তারিখে এই তিনরাজার উৎসব পালন হয়। পাঁচ তারিখে রাতে বাচ্চারা তিনরাজার জন্য খাবার আর জল রেখে দেয়। ছ'তারিখ সকালে উঠে তারা দেখে রাজারা সেসব খেয়ে তাদের জন্য উপহার রেখে গেছেন। গল্পটা সান্তাক্লজের মত। তবে কি এখানে ক্রিসমাস হয় অর্থোডক্স মতে জানুয়ারী সাতে? যেমনটা হয় গ্রীসে, রাশিয়ায়, প্রাক্তন সোভিয়েত দেশগুলোতে? তা-ও নয়। ক্রিসমাস পঁচিশে ডিসেম্বরই হয়, তবে সেদিন উপহার আদান-প্রদান হয় না। হোটেলে এসে সামান্য খুঁজতেই বেরিয়ে গেল এই তিন রাজা আসলে সেই তিন জ্ঞানী মানুষ। মাধ্যমিক আমরা গিফট অফ দ্য ম্যাজাই গল্প পড়েছি। সেই তিন ম্যাজাই। যীশুর জন্মের সময় যাঁরা উপহার নিয়ে এসেছিলেন। পোর্তোরিকো দেশটা বারো মাসে তেরো পার্বনের। তারা সমুদয় আমেরিকার সাথে তাল রেখে পঁচিশে ডিসেম্বরের ক্রিসমাস নিয়েছে, আবার সাতই জানুয়ারীর অর্থোডক্স ক্রিসমাসও কোনোভাবে লৌকিক স্মৃতিতে ঢুকে পড়েছে। এদিকে বরফের দেশের সান্তাক্লজের গল্পটাও এমন ভালোবেসে ফেলেছে যে তার সাথে তিন ম্যাজাই মিলেমিশে একাক্কার। এইসব করতে গিয়ে এদের খেয়ালই নেই জানুয়ারীর ছ'তারিখে ম্যাজাইরা উপহার আনলে, ডিসেম্বরের পঁচিশে যীশুর জন্মদিন উদযাপনে লজিকের একটা বড়সড় গন্ডোগোল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে কি! এভাবেই তো যুগে যুগে দেশে দেশে লোক সংস্কৃতির জন্ম হয়। শেষ যেবার বাড়ি যেতে পেরেছিলাম অজন্তা ঘুরতে গেছিলাম। সেখানে দেখেছি ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বুদ্ধের গুহাচিত্র। কেমন ভালোবাসলে ঈশ্বরের ছবি নিজের গায়ের রঙে আঁকা যায় সে কি আর আমি বুঝব! এই ছবিতেও যেমন দেখা যায় তিন জ্ঞানী মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন থোকা থোকা লাল ফুলে ভরা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। বাস্তবের বেথলেহেমে এ গাছ তো কখনো জন্মায়নি। এর স্থান শুধু শিল্পীর মনোজগতে। যুক্তি আর তথ্যের ভার সরিয়ে সুন্দরের উপাসনা তার কাজ। সুন্দরকে সৃষ্টি করতে না পারলেও, মাঝেমধ্যে তাকে চিনতে পারি। মন তখন ভারী খুশি হয়ে ওঠে। পথে বেরোনো সার্থক হয়।