About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Tuesday, June 22, 2021

ক্যাম্পিং

 মাস ছয়েক ধরে একজন ঘ্যানঘ্যান করে চলছে - আমরা কলোরাডো থাকতে থাকতে একবার এসো। কখনো হুমকি দিচ্ছে - আমরাই শুধু যাই, তোমরা আসো না, এবার না এলে আমরাও আর যাবো না। তারপর তো মেসা ভার্দে আর টেলুরাইডে ক্যাম্পসাইট বুক করে ফেলে ঘোষণা করল - আমাদের সাথে না গেলে তোমরা তো কখনো ক্যাম্পিং করবে না, আসতেই হবে তোমাদের। রোজ কানের পোকা নাড়াতে থাকলে কাঁহাতক আর প্রতিরোধ করা যায়! অতএব টিকিট কাটা হল। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে রাত কাটানোর দুশ্চিন্তায় প্রথমে মাড়ি ফুলে গেল, তারপর কোমরে ব্যাথা এবং সেটা চুকতে না চুকতে বগলে ফোঁড়া। হ্যাঁ জানি, শেষেরটি ভদ্রমহিলাদের হওয়া উচিত না। তবু সত্যের পথ বন্ধুর। সবশেষে চেরি অন দ্য কেক যাত্রার দিনে পা মচকানো। ততদিনে আমারও জেদ চেপেছে ক্যাম্পিং না করলেই নয়। বৃহস্পতিবার রাতে কলোরাডো পৌঁছে অভি-পুবালির সিগনেচার ল্যাম্ব বিরিয়ানি দিয়ে ডিনার হল। পরের দিন বিকেলে দুখানা তাঁবু, চারটে স্লিপিং ব্যাগ, এয়ার বেড, খাবারদাবার দিয়ে গাড়ি ভরে বেরোনো। বোল্ডার থেকে মেসা ভার্দে সাড়ে সাতঘন্টা। সেদিন ঘন্টা পাঁচেক গিয়ে একটা মোটেলে রাত্রিবাস করে পরের দিন বাকি পথ যাওয়া হবে। মেসা ভার্দে সত্যি বলতে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে বেশ নিরেস। সাতশো থেকে বারোশো সালের মধ্যে এখানে নেটিভ ইন্ডিয়ানদের একটি বসতি ছিল। সেই সব ঘরবাড়ির কিছু নিদর্শন আছে। খুব অল্প লোক নিয়ে দিনে দুটি রেঞ্জার অপারেটেড ট্যুর হয়। এই ট্যুরে বসতিগুলোর ভিতরে ঢুকে দেখা যায়। দুসপ্তাহ আগে সকাল আটটায় টিকিট রিলিজ হয়। পুবালি আটটা দশে লগিন করে দেখে সব টিকিট শেষ। আমাদের ভাগ্যে তাই মূলত দূর থেকে দেখা, আর কয়েকটি সাইটে ভিতরে ঢোকার সুযোগ। সাঁইত্রিশ ডিগ্রি গরমে সেই অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হচ্ছিল না। নাভাহো ইন্ডিয়ানরা নাকি বারোশো সালে খরার চোটে এই চত্ত্বর ছেড়ে পালায়। ওদের মত কষ্টসহিষ্ণু জাতই পারলো না, আমরা তো তুচ্ছ বাঙালি - এই ভেবে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। পাঁচটা নাগাদ সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হল আর পারা যাচ্ছে না, এবার ক্যাম্পসাইটে গিয়ে জিরোনো যাক। ন্যাশনাল পার্কের লগক্যাবিনে আমরা বহুবার থেকেছি। কিন্তু ক্যাম্পিং এই প্রথম। পুবালি জোর না করলে কোনোদিনই করতাম না। বাথরুম নিয়ে খুব ভয় ছিল এমন না। এখানে তো এমনকি চানের বন্দোবস্তও আছে। মূল সমস্যা ঘুমের। আমি এবং মিঠুন্দা দুজনেই বহু আরাধনা করে কদাচিত নির্বিঘ্ন ঘুমের আশীর্বাদ পাই।মূলত এই কারণেই ক্যাম্পিংএ রাজি হতে ভয় ছিল। অভি-পুবালি ক্যাম্প অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র নিয়ে চলল ক্যাম্পসাইট বাছতে। আমাদের দুখানি তাঁবু পড়বে। গাছগাছালি ঘেরা নিরিবিলি একটুকরো জমি বেছে নিয়ে নিমেষের মধ্যে দুই ওস্তাদ তাঁবু খাটিয়ে ফেলল। অভি একছড়া সোলার টুনিবালব কিনে রেখেছিল। তাদেরও ঝুলিয়ে দেওয়া হল গাছের ডালে। আমরা দুইজন এদের জেনারেশন কত স্মার্ট, কত এফিসিয়েন্ট এসব আলোচনা করতে করতে চানে গেলাম। মেইন ক্যাম্প অফিসের কাছে শেয়ারড চানের জায়গা। গাড়ি নিয়ে যেতে হল। টয়লেট অবশ্য ক্যাম্প সাইটেই আছে অনেকগুলো। অল্প দূরে দূরেই। বেশি হাঁটতে হবে না। চান সেরে ফিরে দেখি ওরা নিজেদের তাঁবুও খাটিয়ে ফেলেছে। আমাদের জন্য গাছের ছায়ায় বড় তাঁবু। নিজেরা খোলা আকাশের নিচে ছোট তাঁবু নিয়েছে। আমরা কিনা ওদের তত্ত্বাবধানে গেছি। তাই এসব সর্দারি বিনা প্রতিবাদে মেনে নিলাম। এবার আগুন জ্বালিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা। স্যামন মাছ, পাতলা করে কাটা গরুর মাংস আর আনারস নিয়ে গেছিলাম পোড়ানোর জন্য। অলিভ অয়েল আর গার্লিক সল্টে ভেজানো মাছ-মাংস সেঁকে নেওয়া হল আগুনের আঁচে। তারপর লেবু ছড়িয়ে হুস হাস খাওয়া। শেষপাতে আমাদের অভিভাবকেরা মিষ্টি মার্শমেলো

পুড়িয়ে দিল। মুখে দিলে গলে যায় আহারে কি সৃষ্টি! খাওয়া দাওয়ার পাট তুলে সবে মাদুর বিছিয়ে বসা হয়েছে টপটপ করে বড় বড় ফোঁটায় বর্ষণ শুরু হল। আমাদের জন্য খাটানো বড় তাঁবুটায় চারজনে ঢুকে পড়লাম। এই প্রথম ক্যাম্পিং, তাই মুগ্ধ হয়ে দেখলাম বাইরের ধুলো-বালি, পোকামাকড়, বৃষ্টি - কিছুই তাঁবুর ভিতরে ঢোকে না। এমনকি আমাদের বড় তাঁবুটাতে ছাউনিসহ নেট লাগানো জানলাও আছে। সেই জানলা খুলে দিতেই ভিজে হাওয়া ঢুকে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিল। হাহাহিহি করে কেটে গেল বেশ অনেকটা সময়। ইতিমধ্যে এক বিপত্তি। টয়লেট থেকে ফেরার পথে পায়ে খোঁচা খেয়ে পুবালির কড়ে আঙুল জখম। অভি ঝটিতি ফার্স্ট এইড বক্স এনে ক্ষত মেরামত করল। আরও কিছু রাত এগোলে ঠিক হল ঘুমের চেষ্টা করা যাক। আমরা দুজনেই জানি চেষ্টা যতই করা হোক, তিনি ধরা দেবেন না। অভি-পুবালি ব্যবস্থার ত্রুটি রাখেনি। এয়ার বেড বিছিয়ে দিয়েছে। যে যার স্লিপিং ব্যাগে নিজেদের মুড়ে শুতে গিয়ে দেখি মিঠুন্দা বিছানাসহ ডুবে গেলেন, আর আমি মাস্তুলে বসা ফিঙে পাখিটির মত ভেসে রইলাম। পুলকিত হয়ে খোঁজ নিলাম ইদানিং মিঠুন্দার ওজন কেমন যাচ্ছে। আমি কি এতটাই হাল্কা! জানা গেল দৈর্ঘের মত ভারেও এখনো মিঠুন্দাই এগিয়ে। উনি অবশ্য বললেন ওজনটা কারণ নয়, তাঁবু ঢালু জমিতে খাটানো হয়েছে বলেই আমার এমন ফিঙে বিভ্রম। প্রস্তাব দিলাম - পরীক্ষা করেই দেখা যাক। স্থান পরিবর্তন হল। অধ্যাপকের পর্যবেক্ষণ মিথ্যে নয়। এবার মিঠুন্দা ফিঙে, আমি জগদ্দল পাথর। তিনি মাস্তুল আঁকড়ে পড়ে রইলেন। আমিও ঢালের বিপরীত মুখে নিজেকে আটকে রাখার চেষ্টা করলাম প্রাণপণ। একটু চোখ লেগে এসেছিল। স্বপ্ন দেখছিলাম আমার মাস্টার্স স্টুডেন্ট বলছে - আমি তো ফাইল সেভ করতে জানি না, আমি মুখে মুখে বলে যাচ্ছি, তুমি কি কোডটা লিখে নেবে? আতঙ্কে ঘুম ভেঙে দেখি মিঠুন্দা জ্যাকেট পরে বসে আছেন। বললেন টয়লেট যাবেন। আমিও সাথে যাবো বলে বেরোলাম। দেখি সারাদিনের মেঘ কেটে গিয়ে আকাশ তারায় ঝলমল করছে। চাঁদ ডুবে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে বয়ে চলেছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। আমরা দুটিতে কথা হারিয়ে আমাদের ক্লান্ত চোখে সেই রূপসুধা মেখে নিলাম। ঠিক করলাম বাকি রাতটুকু বাইরে বসেই কাটিয়ে দেব। আমাদের নড়াচড়ায় অভি-পুবালিরও ঘুম ভেঙে গেছে। ওরাও বেরিয়ে এল। আকাশ পরিস্কার না থাকার জন্য সারাদিন ধরেই মন খারাপ ছিল। শেষরাতে এমন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে কে আর জানতো! কিছুক্ষণ গল্প করে আবার ঘুমের চেষ্টা করা হবে ঠিক হল। এবার ভাবলাম এয়ার বেডের হাওয়া বার করে দিয়ে দেখা যাক। খুব একটা উপকার হল না। মিঠুন্দা গাড়িতে শুতে গেলেন। আমি ভুমিশয্যায় এপাশ ওপাশ করে বাকি রাতটা কাটিয়ে দিলাম। নিজস্ব ঘর, এটাচড টয়লেট - এসব যে প্রিভিলেজ তা দিব্যি বুঝি। ঘুমের মধ্যে এপাশ ওপাশ করাও যে প্রিভিলেজ, তার জন্য যে পুরু গদি লাগে তা ভুলে ছিলাম অনেকদিন। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না যদিও। পনেরো বছর বয়েসে যে তোষক নিয়ে প্রথম হোস্টেলে ঢুকি, যা আমি ব্যবহার করেছি বাইশ পর্যন্ত এবং আমার পরে আমার ভাই - তার পুরুত্ব অভি-পুবালির দেওয়া স্লিপিং ব্যাগের চেয়ে বেশি ছিল না। এমনকি বিদেশে ছাত্রাবস্থাতেও অফিসে স্লিপিং ব্যাগ পেতে রাত্রিবাসে বাধ্য হয়েছি। সেও সুদূর অতীতের কথা নয়। কিন্তু কে না জানে আরামে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে না। অতএব আমার গেছে যে দিন তা একেবারেই গেছে। খোলা আকাশের নিচে নিশ্চিন্ত ঘুম বিদায় নিয়েছে জীবন থেকে। আমাদের তরুণ দুজন সাথী - এখনও জং ধরেনি ওদের পায়ে, এখনও ওরা ফুসফুসে ভরে নিতে পারে তাজা হাওয়া - ওদের মুগ্ধ হয়ে দেখি। পাখিডাকা ভোরে উঠে পড়েছে ওরা। তাঁবু গুছিয়ে গাড়ি ছুটবে পরের গন্তব্যের পথে।