About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, July 11, 2020

আয়া সোফিয়া

 আয়া সোফিয়ার সামনে যতবার দাঁড়িয়েছি একটা কৃতজ্ঞতা বোধ হয়েছে। কারণটা ব্যাখ্যা করি। ইস্তাম্বুল বা কনস্ট্যান্টিনোপল শহর যতদিন পৃথিবীতে আছে, আয়া সোফিয়াও প্রায় ততদিন। মনে করা হয় কনস্ট্যানটাইন খ্রীষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার আগে এখানে মন্দির ছিল যেখানে মূর্তিপুজো হত। কনস্ট্যানটাইন দক্ষ রাজনীতিক ছিলেন। খ্রিস্টান এবং মূর্তিপূজক দুইপক্ষকেই খুশি রেখে চলতেন। তবে মারা যাওয়ার আগে নিজে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে মূর্তিপুজো লোপ পেল। গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হিসেবে আয়া সোফিয়া তৈরি হল। দেখবার মতো স্থাপত্য। চার্চের ভিতরের দেওয়ালে অসাধারণ সব মোজাইকে যীশুর জীবনের নানা ঘটনা আঁকা। কনস্ট্যান্টিনোপলের ইতিহাস ঘটনাবহুল। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে আয়া সোফিয়ারও। একবার এক আইকনোক্লাস্ট পাগলা রাজা এসেছিল। তখন ইসলাম সবে জন্ম নিয়েছে। মুসলিমদের দেখাদেখি তার মনে হল ঈশ্বরের ছবি আঁকা পাপ। তখন তার নির্দেশে ঈশ্বরের পুত্রের সব ছবি মুছে দেওয়া হল আয়া সোফিয়া থেকে। সেই পাগলের যুগ শেষ হলে আবার পরের রাজা এসে ভালো ভালো মোজাইক করিয়ে দিলেন। এইভাবে চলে। চতুর্থ ক্রুসেডের সময় রোমান ক্যাথলিকদের সাথে গ্রীক অর্থোডক্সদের ঝগড়া বাধল। কনস্ট্যান্টিনোপলে ব্যাপক লুঠতরাজ চলল। কিছুদিনের জন্য গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ হল রোমান ক্যাথলিক। তবে রোম থেকে কনস্ট্যান্টিনোপল শাসন করা সহজ ছিল না। বস্তুত সেই কারণেই কনস্ট্যান্টিনোপল শহর তৈরি হয় হাজার বছর আগে। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য শুরু হয়েছিল ইস্টার্ন রোমান সাম্রাজ্য হিসেবে। পরে সুতো আলগা হয়ে যায়। এবারেও চতুর্থ ক্রুসেডের পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই আয়া সোফিয়া আবার গ্রীক অর্থোডক্স হয়ে যায়। আরও দেড়শো বছর পর কনস্ট্যান্টিনোপলে বড়সড় পরিবর্তন আসে। অটোমান রাজারা শহর দখল করে। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য চিরতরে শেষ হয়। আয়া সোফিয়া হয়ে যায় মসজিদ। শহরের নাম ইস্তাম্বুল।

১৯৩৫ সালে কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্কের ভার নেন। সহস্রাধিক বছরের হানাহানির সাক্ষী আয়া সোফিয়াকে তিনি মিউজিয়াম বানিয়ে দেন। সেই মিউজিয়ামে মুসলমান ও খ্রীষ্টান দুই ধর্মের স্মারকই জায়গা পায়।
২০১৪ সালে আমার প্রথম ইস্তাম্বুল যাওয়ার সুযোগ ঘটে। সেই সময় এই মিউজিয়ামটির ইতিহাস আমি জানি এবং আমার মনে হয় আয়া সোফিয়া নামের মর্যাদা এই মিউজিয়ামটি রাখতে পেরেছে। গ্রীক ভাষায় সোফিয়া শব্দের অর্থ প্রজ্ঞা। জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গচিহ্নের জন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা ও বঞ্চনা তো প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে না। অথচ আয়া সোফিয়ার দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এ জিনিস হয়েই চলেছে। কামাল পাশার কথা জেনে মনে হয়েছিল আগে যা হয়েছে সেসব পুরনো দিনের কথা বাক্সবন্দি করে রেখে দেওয়া যায়। নতুন পৃথিবী এমন হবে না। ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতে যারা বিভেদ সৃষ্টি করে নতুন পৃথিবী তাদের বুজরুকি ধরে ফেলে হো হো করে হাসবে। মধ্যযুগের অন্ধকার যাদের মনে বাসা বেঁধে আছে তাদের মোজাইকের ধুলো ঝাড়া অথবা মিউজিয়ামের সামনের সবুজটুকুর পরিচর্যার কাজে লাগিয়ে দেওয়া হবে। বাইজান্টাইন শিল্পীর আঁকা যীশুর করুণাঘন চোখ আর অটোমান ক্যালিগ্রাফিতে ঈশ্বরের নাম পাশাপাশি দেখে তাদের মনে হয় দুজনের প্রতিই প্রেম জন্মাবে অথবা ধর্মের খোলস ছাড়িয়ে তারা নিখাদ শিল্পটুকুকে ভালোবাসতে শিখবে। এইসব ভেবেই কৃতজ্ঞতা জেগেছিল কামাল পাশার প্রতি। এই মাস্টার স্ট্রোক ফেল করতেই পারে না - এমন ভেবেছিলাম। সামনের পৃথিবী পুরনো পৃথিবীকে গোহারান হারিয়ে দেবে এমন ভেবেছিলাম।
আজ বিশ্বাসভঙ্গ হল। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব এরদোগান ধর্মনিরপেক্ষ আয়া সোফিয়া মিউজিয়ামকে আবার মসজিদ করে দিলেন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে অপরাধবোধ জাগছে। লজ্জা হচ্ছে। আর কি বলব!