About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Sunday, May 17, 2020

আরুগ্রামে

 আরু গ্রামের বিশ্রামাবাস থেকে সকাল বেলা হাঁটতে বেরিয়ে মনে হল সামনের সবুজ পাহাড়টায় চড়া যাক। সেবারে ফিরে এসে জেনেছিলাম রক্তের হিমোগ্লোবিন বিপদসীমার নিচে। তখন উপসর্গ বলতে চড়াই উঠতে দমের অভাব। মিঠুন যত্ন করে বিশ্রাম করিয়ে করিয়ে গল্প করতে করতে নিয়ে যায়। মে মাসের নবীন সতেজ উপত্যকা, বুনো ফুল, তিরতিরে নদী সবাই মিলে উতসাহ দেয়। খানিক পথ উঠে একটা ছোট গুহা। একটা ক্ষীনতোয়া প্রস্রবণের মুখ। সেখানে একটা পাথরের ওপর কাওয়ার সরঞ্জাম নিয়ে বসেছে একটা লোক। সেখানেই ছেলেটার সাথে দেখা। এক পাল ভেড়া নিয়ে উপত্যকার নিচে বাসা বাঁধা বকরওয়ালদের গুষ্টি উদ্ধার করছিল চা-ওলার সাথে। আমি সুযোগ পেয়েই বসে পড়ি। মিঠুন গল্প জোড়ে। কাওয়া খেতে খেতে সেই বছর পনেরোর রাখালছেলের সাথে আলাপ। ছেলেটা তার মায়ের প্রথম সন্তান। রীতি অনুযায়ী নাম পেয়েছে মহম্মদ।এরা গুজ্জর। জম্মুর নিচের কোন গ্রাম থেকে শীতের শেষে ভেড়া নিয়ে বেরিয়েছে মা আর চার ভাইবোন নিয়ে। পাহাড়েই কাটবে গ্রীষ্মের মাসগুলো। চিকন সবুজ উপত্যকায় আগের বছরের ফেলে যাওয়া কাঠের ঘরের কাঠামো মেরামত করে পশুপালন চলবে। রোম্যান্টিক জীবন মনে হয় দূর থেকে। কাজাখ সহকর্মীর কথা মনে পড়ে। চীনের বর্ডারে থাকতো তারা। পশুপালন পেশা। গোটা গরমকালটা সবুজ সবুজ উপত্যকায় পশু চরায়। মধু সংগ্রহ করে। জীবনের প্রথম আঠেরো বছর কোনো ওষুধ কোম্পানির তৈরি গুলি খায় নি সে। কাওয়া খেয়ে এই ছেলেটার সাথে হাঁটতে থাকি। কথায় কথায় বলে ইসলামাবাদে গতকাল ঝামেলা হয়েছে। খট করে কানে বাজে। শ্রীনগরকে স্থানীয়রা ইসলামাবাদ বলে। তবে ট্যুরিস্টদের সামনে বলে না। এ ছেলের সে খেয়াল নেই। সিনেমায় অভিনয়ের খুব শখ। মিঠুন কিনা টালিগঞ্জের ছেলে। উত্তমকুমারের পরেই তার নাম। মহম্মদ মিঠুনকে বলে, তোমাদের ওখানে আমার কোনো সুযোগ হয় না? ইংরিজি জানি একটু একটু। তোমাদের ভাষাও শিখে নেবো। আমরা অতি কষ্টে সামলাই। - বকরওয়ালদের ওপর রাগ কেন ভাই? - ওরা নোংরা করে রাখে পাহাড়টা। লোক ভালো না ওরা। হিমালয়ের অবর্ণনীয় ঐশ্বর্যে শিহরিত আমরা জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলি। আমার বিশ্রামও হয়। মহম্মদ ছবি তোলা দেখে। - তুমি তুলবে? সলজ্জ ঘাড় নাড়ে সে। জুম, এক্সপোজার শিখে নেয় সঙ্গে সঙ্গেই। দেখতে দেখতে উপরের উপত্যকায় উঠে আসি। সবুজ মখমলে মোড়া সমতল। দুইখানা কাঠের ঘর। - তোমাদের ঘর নাকি? - না না, আমরা আরও ওপরে উঠে গেছি। এখন কেউ নেই এখানে। ঘরের সামনে একটা বড় পাথরের স্ল্যাব। যেন চেয়ার পাতা আছে উঠোনে। আমি পা ছড়িয়ে বসে হা হা করে নিশ্বাস নিই। আর উঠবো না। রাখাল ছেলে আমাদের ক'টা ছবি তুলে দিয়ে ভেড়ার দল নিয়ে আরও উপরে উঠতে থাকে।




আরুগ্রামে

 আরুগ্রামে আমরা ছিলাম বিলালভাইয়ের আতিথ্যে। রজত সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। পহেলগাম থেকে বারো কিমি দূরে ছোট্ট গ্রাম আরু। বিলালভাই এর গেস্টহাউস মিল্কি ওয়ের সামনেই বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকা। ঘন পাইন বনের ওপাশে বরফে মোড়া পাহাড়চুড়ো। তিরতির করে বয়ে চলে আরু নদী। বিলাল ভাইয়ের দাদা ফৈয়জ ভাইকে মাইক্রফট হোমসের মত দেখতে। শার্লক হোমসের দাদাকে আমি দেখিনি, কিন্তু বর্ণনা পড়ে মনে হয় তিনি নিশ্চয়ই এমনই লম্বা, এমনই খাড়া নাক তাঁর, এমনই ক্ষুরধার দৃষ্টি। গেস্ট হাউসের কাঁচ ঢাকা বারান্দা থেকেই ইশকুলটা দেখা যায়। গ্রামের একমাত্র ইশকুল। ফৈয়জ ভাই বললেন টিফিনের ছুটির সময় মাস্টারমশাইয়ের সাথে দেখা করা যাবে। ইশকুলে সাকুল্যে চারজন শিক্ষক। দুইজন হিন্দি, উর্দু পড়ান। বাকি দুজন ইতিহাস, ভূগোল। বিজ্ঞান, অঙ্ক, ইংরিজি পড়ানোর কেউ নেই। ছেলেমেয়েরা কিন্তু দিব্যি বুদ্ধিমান। ছেলেরা মোটামুটি সকলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ট্যুরিস্ট সিজনে ঘোড়া ধরে। শুনে শুনেই চমৎকার ইংরিজি শিখে নিয়েছে। মাস্টারমশাই বললেন, কদিন আগে এক রিটায়ার্ড জেনারেল বেড়াতে এসেছেন। তাঁর ঘোড়া ধরেছে একটি বুদ্ধিদীপ্ত সপ্রতিভ ছেলে। জেনারেল রীতিমত অভিভূত হয়ে তার কথা জিগ্যেস করছেন গ্রামে। জানা গেল সে ছেলে পহেলগাম তফশিলে বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।

- ওরা কি আর পড়াশোনা করতে চায় না?
- বাবা-মায়ে ভয় পায় শহরের কলেজে পাঠাতে। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে যদি! ছেলেটাই যদি আর না থাকে!
আর মেয়েগুলো? ঘরের কাজ করছে। সেলাই করছে। দরদাম করে কাশ্মীরী হ্যান্ডলুম কিনে আনছে ট্যুরিস্ট। কলেজে যাচ্ছে কয়েকজন। গেলেই তো হল না। দুমদাম কার্ফিউ জারি হয়। পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বছরের পর বছর নষ্ট হয়।
সন্ধ্যেবেলা ট্যুরিস্টদের প্রকোপ কমলে গেস্ট হাউসের সামনে উপত্যকায় ছেলেগুলো ক্রিকেট খেলে। আমি আর মিঠুন একপাশে দাঁড়িয়ে দেখি। মিঠুনের হাত-পা নিশপিশ করে। আমি বলি - তোর খেলতে ইচ্ছে হচ্ছে? সে হাসে - না না, দেখতেই ভালো লাগছে। একদিন বেলা প্রায় মরে এসেছে। এমন সময় একটা ট্যুরিস্ট বাস এসে দাঁড়ায়। সবাই নামেও না বাস থেকে। মহিলারা বিলাল ভাইয়ের পারিবারিক শালের দোকানে ঢুকে যান। পুরুষেরা সেলফি তোলেন। একজন ভদ্রলোক ইন্ডিজিনাস একটিভিটিতে অংশ নিতে এগিয়ে আসেন।
- তুমলোগ ক্রিকেট খেল রাহে হো? হাম ভি খেলেগা। ব্যাট দো মুঝে। দেখতে হ্যায় কওন মুঝে বোল্ড কর পায়েগা।
ছেলেগুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ব্যাট দেয়। এক বলেই বোল্ড।
- ঠিক হ্যায়, অর এক বার।
আবার বোল্ড। তিন নম্বরটা ঠেকায়। তারপর আবার।
- হা হা! গুড জব। আচ্ছা লাগা তুমসে মিলকে। আচ্ছা, ইধার আও। এক ফটো লে লে? আচ্ছা, ওর এক ফটো। ব্যাট দো মুঝে। বহুত আচ্ছা!
এরপর ভদ্রলোকের খেয়াল হয় পাশেই উত্তরাধিকারী দাঁড়িয়ে। সুতরাং তাঁর ছেলেকেও ব্যাট করতে দিতে হয় যতক্ষণ না বাঁধিয়ে রাখার মত ছবি উঠছে। এইসব করতে করতে পাহাড়ে অন্ধকার হয়ে আসে। ছেলেগুলো খেলা গুটিয়ে ঘোড়া নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। ওদিকে মহিলাদের দোকান থেকে বার করতে হাঁকডাক শুরু হয়। আকাশছোঁয়া বরফচুড়োয় ঘেরা ওই বিস্তৃত উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আমাদের দুই শহুরে মানুষের খুব লজ্জা লাগে। আমরা প্রাণপনে শতাব্দীপ্রাচীন মহাকারুণিক মানবাত্নার ক্ষমাভিক্ষা করতে থাকি।