About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, January 5, 2019

নামহীন

 এই লেখাটা লিখতে একটু ভয়ই পাচ্ছি কারণ ইদানিং যে হারে সেকুলার অ্যান্টিন্যাশনাল বলে মানুষকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঠিক সেই হারেই চলছে চাড্ডি চিহ্নিতকরণ। আমি এবং মিঠুন কোন মতবাদের প্রতিই প্রশ্নহীন আনুগত্য দেখাতে পারছি না। আমাদের "ঘরেও নহে, পারেও নহে" অবস্থা। শবরীমালা নিয়ে পরশু একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। তারপর অন্যত্রও দীর্ঘ আলোচনা হল। আমার মূল বক্তব্যগুলো এক জায়গায় জড়ো করে রাখি।

প্রথমত, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সব হিন্দুর সব মন্দিরে প্রবেশাধিকার আছে। কাজেই সংবিধান অনুযায়ী মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার আটকানো যাবে না। কিন্তু এখানে সংবিধান নিয়ে একটি প্রশ্ন তোলা হয়ত অসঙ্গত হবে না। সংবিধান কেন শুধুমাত্র হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার দিল? কেন ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে নয়? তাহলে কি সংবিধান ধর্মীয় নিয়মকানুনকে নাগরিকের যথেচ্ছ বিচরণের ওপরে জায়গা দিচ্ছে?
এবার তাহলে দ্বিতীয় পয়েন্টে আসা যাক। ধর্মীয় নিয়মকানুন যদি সত্যিই বেশি গুরুত্ব পায় তাহলে দেখতে পাচ্ছি এক্ষেত্রে শবরীমালা মন্দিরের নিয়মানুযায়ী সেখানে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সৈকতদার একটি লেখা পড়ে জানলাম, আরো অন্তত দুটো মন্দির আছে দক্ষিণ ভারতেই যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। ২০১৮-র মে মাসে আমি এবং মিঠুন কাশ্মীর বেড়াতে যাই। শ্রীনগরে পাঁচদিন ছিলাম। তার মধ্যে একটি দিন রেখেছিলাম শ্রীনগরের পুরোনো মসজিদগুলোর জন্য। এই মসজিদগুলো নিয়ে একটা বড় লেখা তৈরী করার ইচ্ছে গত সাতমাস ধরে মনের মধ্যে লালন করছি। নানা ব্যস্ততায় হয়ে উঠছে না। শাহ-ই-হামদিন নামে একটি অপূর্ব মসজিদ আছে ঝিলমের তীরে। মসজিদের বাইরে ও ভিতরে পেপার ম্যাশের অসাধারণ নকশা। আমাদের বাইরেটা দেখেই চলে আসতে হয়েছে। ভিতরে অমুসলিমের প্রবেশ নিষেধ। খাস-বাজার-নকশাবন্দ নামে একটি মসজিদের ভিতরেও অপূর্ব পেপার ম্যাশে নকশা আছে। সেখানে মিঠুন ঢুকতে পেয়েছিল। ইমাম নিজে ওকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমি শুধু গল্পই শুনেছি। মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। দস্তগীর সাহিবে ঢুকেছিলাম। সেও ভারী চমৎকার মসজিদ। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে আমায় আটকে দেওয়া হল। সেই জায়গা শুধুই পুরুষদের প্রার্থনার জন্য। এই জায়গাগুলোয় যে যেতে পারলাম না, তা নিয়ে একটু দুঃখ তো আছেই। ধর্ম আমি মানি না। কোন ধর্মকেই সম্মান করার দায় আমার নেই। কিন্তু যারা মানেন তাদের প্রতি সম্মানবশতই কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলি। দরগায় গেলে মাথা ঢাকি। গ্রীসে একটি চার্চে ঢোকার সময় একটা কাপড় স্কার্টের মত জড়িয়ে নিতে হয়েছিল, কারণ আমি ট্রাউজারস পরেছিলাম। এটা বুঝে নেওয়া জরুরী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে সাম্য নেই। ধর্মকে সম্মান এবং সাম্যপ্রতিষ্ঠা - এইদুটো একসাথে হবে না। শবরীমালায় জোর করে ঢুকতে চাইলে, আরও কিছু গোষ্ঠী জোর করে অন্য ধর্মস্থানে ঢুকতে চাইবে। একজন অবিশ্বাসী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে এতে আমার কিছুই এসে যায় না। কিন্তু যে দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে চলছে সেখানে এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক অবিমৃষ্যকারিতা মনে হয়।
তৃতীয়ত, শবরীমালায় ঢোকার সাথে উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট কিভাবে জুড়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি না। প্রাতিষ্ঠনিক ধর্ম গল্পনির্ভর। গল্পের যুক্তিনির্ভর হওয়ার দায় নেই। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মেরও নেই। উপরন্তু সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই পিতৃতান্ত্রিক। শবরীমালায় ঢুকে সেই পিতৃতন্ত্রের অংশ হতে চেয়ে মেয়েদের অবস্থার কি উন্নতি হতে পারে? যিনি আয়াপ্পার ব্রহ্মচর্যের গল্পে বিশ্বাস করেন তিনি মন্দিরে ঢুকে দেবতার ব্রহ্মচর্যে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইবেন না। যিনি বিশ্বাস করেন না তিনি কোর্টের নির্দেশের সাহায্যে ঢুকতেই পারেন জোর করে। কিন্তু সেখানে আমি দ্বিতীয় পয়েন্টে যা লিখেছি তেমন গোলযোগ হওয়ার সম্ভাবনা। সর্বোপরি, একটি পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পুজো দিতে পারলে মেয়েদের কি উপকার হবে সেটা স্পষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম যেহেতু সাম্যের ধারনায় বিশ্বাস করে না, তাই এর আওতায় থেকে কোনোদিনই উইমেন্স এমপাওয়ারমেন্ট হবে না। সাম্য আনতে গেলে ধর্মবর্জন ছাড়া উপায় দেখি না।
একমাত্র যে জায়গাটা আমার অর্থবহ লাগছে তা হল, এই আন্দোলনের সূত্র ধরে মেয়েদের ঋতুবিষয়ক আলোচনা আরো একবার উঠে আসছে। ঋতুকালীন সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলতে যদি এই আন্দোলন কোনভাবে সাহায্য করে তাহলে সেটা নিশ্চয়ই একটা প্রাপ্তি। সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের মানবীপ্রাচীর মেন্স্ট্রুয়াল হাইজিনের প্রশিক্ষণশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হলে খুব বড় কাজ হত। সেরকম হয়েছে বলে শুনিনি। তবে যারা এত মানুষকে একজায়গায় জড়ো করতে পেরেছেন তারা ভবিষ্যতেও এমন করতে পারবেন আশা রাখি। এবং সেই জনসমাবেশ পুজো করার অধিকারের মত পিতৃতান্ত্রিক সংস্কারে হাওয়া না দিয়ে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কোন কাজে ব্যবহার হলে মেয়েরা বাস্তবিকই সেই সংগঠকদের কাছে ঋণী থাকবে।