About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Wednesday, October 4, 2017

ধনঞ্জয় প্রসঙ্গে

 কিছুদিন আগে "পিঙ্ক" দেখে কেঁপে গেছিলাম। "ধনঞ্জয়" সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। অরিন্দম শীলকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ছবি বানানোর জন্য। যা নিয়ে মানুষের মূল আপত্তি, সেই বিষয়বস্তুতে পরে আসছি। প্রায় ডকুমেন্টরী স্টাইলে বানানো এই ছবি। টানটান চিত্রনাট্য। দুর্দান্ত কাস্টিং। সত্যজিৎ রায় ছাড়া আর কোন বাঙালী পরিচালক এত ভালো কাস্টিং করেছেন বলে এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। একটা তিরিশ সেকেন্ডের রোলের জন্যও এত যত্নে অভিনেতা নির্বাচন করা যায় এটা বাংলা ছবিতে আমরা ভুলতে বসেছিলাম। তার যোগ্য মর্যাদা রেখেছেন অভিনেতারা। অনির্বাণ ভট্টাচার্য এতটাই ভালো যে এর আগে দুটো সিনেমায় এই অভিনেতাকে দেখা সত্ত্বেও মিঠুন ওকে চিনতে পারেনি। একা অনির্বাণ নয়। প্রত্যেকে অত্যন্ত ভালো অভিনয় করেছেন।

বহু মানুষ এই ছবি দেখতে যাননি বিষয়বস্তুর জন্য। ধনঞ্জয়ের বিচারব্যাবস্থার অসঙ্গতি নিয়ে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাটা আমার পড়া ছিল। প্রবাল চৌধুরী ও দেবাশিস সেনগুপ্তর বইটা এখনও সংগ্রহ করা হয়নি। সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাটা আমি অনেককে পড়ানোর চেষ্টা করেছি। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি যাঁদের মুক্তচিন্তার মানুষ বলে জানি তাঁদেরও এক আশ্চর্য রেজিস্টান্স আছে লেখাটা একবার পড়ে দেখতে। তাঁদের কাছে আমার আবার অনুরোধ রইল - পারলে একবার সিনেমাটা দেখুন ফাস্ট ফরওয়ার্ড না করে। কোন হাইপোথেসিস তৈরী না করে খোলামনে দেখুন।

ধনঞ্জয়ের ঘটনা যখন ঘটেছিল খবরের কাগজ পড়ে আমিও ভেবেছিলাম যে এই লোকটা খুনী এবং ধর্ষক। মীরা ভট্টাচার্য ধনঞ্জয়ের ফাঁসীর দাবীতে জনসভা করেছিলেন। খবরের কাগজে ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিকের সাক্ষাৎকার বেরিয়েছিল। সেইসবই গভীর কৌতূহলের সঙ্গে পড়েছিলাম আমিও। ধনঞ্জয়ের ফাঁসীর পরের দিন, হেতালের স্কুলের মেয়েদের একটি ছবি বেরিয়েছিল কাগজে, তারা আঙুল দিয়ে "ভি" (ভিক্টরি) দেখাচ্ছিল। সেই প্রথম গা সিরসির করেছিল। খুনী এবং ধর্ষক সর্বোচ্চ শাস্তি পেল ঠিক আছে। প্রতিশোধের মৃতুতে হৃদয়ের তাপ জুড়োয়। দ্রৌপদী চুল বেঁধেছিল দুঃশাসনের রক্তে। কিন্তু উল্লাস? সেটা কি কখনও আসা সম্ভব গভীর শোক থেকে?

এর বারো বছর পর সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় জানলাম পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যৌন মিলনের কথা ছিল, ধর্ষণের কথা ছিলই না। মৃতের শরীরে যতগুলো আঘাত সবই দেহের উপরিভাগে, নিম্নাঙ্গে কোন আঘাত নেই। সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্স ছাড়া আর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি ধনঞ্জয়ের অপরাধের। সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্স হিসেবে জমা পড়েছে অপরাধের সময় পরে থাকা জামা, ঘটনাস্থল থেকে খুঁজে পাওয়া ছেঁড়া বোতাম ও একটি গলার চেন। জামাটি বাজেয়াপ্ত হয় অপরাধীর বাড়ি থেকে ঘটনার দুমাস পরে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছেঁড়া বোতামটি নথিভুক্ত হয়েছে জামাটি খুঁজে পাওয়ারও দিন দশেক পরে। চেনটির মালিকানা সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া যায়নি। (দুমাস, দশদিন এই হিসেব গুলো স্মৃতি থেকে লিখছি, সামান্য এদিকওদিক হতে পারে, কিন্তু ক্রনোলজিকাল অর্ডার ঠিক আছে।) সাক্ষীরা বারবার নিজেদের বয়ান বদল করেছেন। এত অসঙ্গতির পরেও একটা মানুষকে ফাঁসীর সাজা দেওয়া যায়?

ছবির শেষে মিনিট দশেকের একটা অংশ আছে যা অনার কিলিং-এর দিকে ইঙ্গিত করে। যাঁরা এই ছবিটি বর্জন করেছেন তাঁরা ছবিটি না দেখেও এই অংশটির কথা জানেন এবং এই অংশটি তাঁদের আপত্তির বড় কারন। প্রবাল চৌধুরী ও দেবাশিস সেনগুপ্তর বইতে অনার কিলিং-এর ইঙ্গিত আছে কিনা আমার জানা নেই। ছবিতেও এটাকে একটা সম্ভাবনামাত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। ছবিটা অনার কিলিং নিয়ে নয়। ধনঞ্জয়ের খুন করা (ধর্ষণ লিখব না, কারন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তা বলে না) যেমন একটা সম্ভাবনা, অনার কিলিংও আরেকটা সম্ভাবনা। ভারতে অনার কিলিং হয় এটা মানেন তো? হেতাল পারেখের খুন কে করেছিল তা জানা যায় নি। ছবিটাও এবিষয়ে কিছু বলছে না। বইটাও বলেনা বলেই জানি। তবে ধনঞ্জয় যে খুন করেনি তা মোটামুটি নিশ্চিত।

আমরা যখন কোনকিছু বিশ্বাস করে ফেলি, তখন সেই বিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলতে হলে নিজের কাছেই বোকা হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকিটা আমরা নিতে পছন্দ করি না অনেকসময়। তবে ঝুঁকিটা নিতে পারলে কিন্তু অনেক অজানা বিষয় জানা যায়। আমি মানুষ হিসেবে নিজের বাউন্ডারী বাড়ানোর জন্য বেশী লালায়িত। তার জন্য নিজেকে ভাঙতে চুরতে আমার লজ্জা নেই।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখার লিঙ্ক রইল আরেকবার:
http://www.guruchandali.com/defa…/…/08/14/1439569396110.html

------------------------------------------------------------------------------------------------------

Mithun Bhowmick-এর রিভিউ:

ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের বিচার ও ফাঁসিকে কেন্দ্র করে অরিন্দম শীলের বানানো ছবি "ধনঞ্জয়" দেখলাম। এবং অনেকদিন পর বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে একটি সৎ ও সাহসী প্রযোজনা দেখলাম। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের বিচার, মিডিয়ার ভূমিকা এবং অসঙ্গতি নিয়ে আগেই লেখালেখি যা হয়েছে ঠিকঠাক পড়া ছিলোনা, সেইদিক থেকেও ছবিটি খুব দরকারি কাজ হয়েছে।
আমার মতে অরিন্দম শীল গত কয়েক বছরে যা ছবি করেছেন এটিই তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, মনে রাখার মত কাজ। অভিনেতা নির্বাচন থেকে মেদবর্জিত স্ক্রিপ্ট, সঙ্গীতায়োজন সবই খুব মাপা ও যথাযথ। অনির্বান ভট্টাচার্য্য, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী ভয়ঙ্কর ভালো অভিনয় করেছেন। বিশেষত অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য (ধনঞ্জয়) এবং আর্যা ব্যানার্জ্জির (চন্দ্রা) কাজ অনেকদিন মনে থাকবে।

কিন্তু "ধনঞ্জয়" তো শুধু একটি ছায়াছবি নয়। "ধনঞ্জয়" আধুনিক ভারতের আইনরক্ষক ও বিচারব্যবস্থার নিখুঁত ছবি, কল্পিত তথ্যপ্রমাণের মেকাপ তুলে ফেলার পর কুৎসিত মিডিয়া ট্রায়ালের দাগের ডিটেল যেখানে আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে। আমাদের মধ্যে যে অন্ধকার বাস করে, যা আমাদের মৃত্যুপথযাত্রীর সামাজিক স্ট্যাটাস দেখতে শেখায়, যা আমাদের সেই ব্যাকগ্রাউন্ডে সেলফি তুলতে উদ্বুদ্ধ করে বা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের অপেক্ষা করতে শেখায় -- "ধনঞ্জয়" সেইসব মূল্যবোধের দলিল। শুনলাম ছবিটি তেমনভাবে লোক টানতে পারেনি। পারার কথাও নয়। যেচে কে আর নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায়।

"সহজ পাঠের গপ্পো" ছবিটি নিয়ে কী হয়েছে আমরা জানি। বাংলায় আর বেশিদিন হয়ত ভালো ছবি করার শাস্তি পরিচালকেরা নেবেন না।