About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Saturday, July 23, 2016

আহা সে রূপোলী দিন...

 ইলিশের ভরা মরশুমে ফেসবুক জুড়ে শুধু ইলিশের ছবি অথবা ইলিশ নিয়ে রম্যরচনা। আমার যদিও মরশুমের ব্যাপার নেই। তবু এসব দেখে আমার মনটাও ইলিশ ইলিশ করছে। তাই এই লেখার অবতারণা।

ছোটবেলায় আমার ধারণা ছিল মাছ জিনিসটা আমি বিশেষ ভালোবাসি না। পরে বুঝেছি এর কারনটা হল - ট্যাংরা, পাবদা, পার্শে, কাজলি ইত্যাদি পছন্দের মাছগুলো আমাদের বাজারে বেশি পাওয়া যেত না। আড়, ভেটকি, গুর্জালি, বেলে, বোয়াল, শোল - এসবই আমি খুব ভালোবেসে খেতাম। কিন্তু রোজকার মাছ বলতে বাড়িতে রুই-কাতলা-মৃগেলই আসতো। আর পোনা মাছের স্বাদকে আজ এত বড় হয়েও ভালোবাসতে পারলাম না। মা খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট ছিলেন। কোনকিছুই খাবো না বলা যাবে না। এতে একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। আমার যে কোন কিছু খাওয়ার একটাই ক্রাইটেরিয়া - খেতে ভালো হতে হবে। সুস্বাদু হলে সাপ-ব্যাং কিছুতেই আপত্তি নেই। সাপ এখনও চেখে দেখা হয়নি। তবে লিস্টে আছে। তো যেকথা হচ্ছিল, কতদিন গেছে রান্নার গুণে পোনা মাছের ঝোল/ঝাল/মৌলি/কালিয়া/দোপেঁয়াজা বা আরো যা কিছু মায়ের নিজস্ব ইনভেনশন চেটেপুটে খেয়েছি, কিন্তু মাছটা খেতে গিয়ে চোখে জল। কাঁটার জন্য নয়। থিকথিকে কাঁটাওলা অমৃত বাটার সর্ষেবাটা খুশিমনে খেতে পারি। পোনামাছের স্বাদে কিছু একটা আছে। কিছুতেই একবারের পর দুবার মুখে তুলতে ইচ্ছে করে না।

আমার এই দুরবস্থার দিনগুলোতে মা যতই কঠিনমুখে "খেতেই হবে, এক ফোঁটা মাছও ফেলা যাবে না" বলে চলুক না কেন, বর্ষাকালটাতে চেষ্টা করত ইলিশমাছ দেওয়ার। ইলিশমাছ তখনও দামী মাছই ছিল। তবু সারা বছরের রুই খাওয়ার কম্পেনসেশন হিসেবে এই সময়টাতে ঘনঘনই আনা হত। আর যদিও মানুষের স্বভাবই হল "আমারও দিন আছিল মশয়" বলে অতীতে ডুবে যাওয়া, তবু নিতান্ত বাস্তববাদী মানুষও এটা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও দেড়-দুকেজির ইলিশ বাজার জুড়ে থাকতো। নিতান্ত নিরুপায় না হলে খোকা ইলিশকে তখন কেউ খাওয়ার যোগ্য মনে করত না। তো বর্ষার মরশুমটা শুরু হলে প্রায়দিনই এমন একটি দীর্ঘাঙ্গী রূপোলী মাছ আমাদের রান্নাঘরের কাউন্টার টপে শোভা পেত। মা এখনও বলে - স্কুল থেকে ফিরে এসেই দেখতে পেতাম মাছ শোয়ানো আছে রান্নাঘরে আর দেখামাত্র মনটা ভালো হয়ে যেত। অন্যসব মাছ বাজার থেকে কাটানো হলেও ইলিশ আর চিংড়ির ক্ষেত্রে সেটা কখনও চলবে না। কাপড় ছেড়েই মাছ কোটা শুরু হয়ে যেত। কি কি রান্না হবে তা একরকম ঠিক করাই থাকত। আর সব মাছে নানা রকম এক্সপেরিমেন্টাল রান্না করলেও টাটকা ইলিশে মা কোনদিন এক্সপেরিমেন্ট করেনি। মাছের তেল, মাছ ভাজা, ডিম থাকলে সেটাও ভাজা, গাদার পিস দিয়ে কালোজিরে লঙ্কাবাটার ঝোল, পেটির পিসে সর্ষে ভাপে আর মাথা দিয়ে কাঁটা চচ্চড়ি। তখনও এমন সাইজের মাছ সহজেই পাওয়া যেত যাতে গাদা পেটি আলাদা করা যায়। সত্যি বলতে কি তার চেয়ে ছোট মাছ বাড়িতে ঢুকলে সেই দিনটা বাবার পক্ষে খুব একটা ভালো যেত না। সারাদিনই শুনে যেতে হত কত খারাপ মাছ আনা হয়েছে।

আমেরিকাতে বছর পাঁচ আগেও বড় মাছ পেয়েছি। মায়ের মত কালোজিরে লঙ্কাবাটার ঝোলে প্রথমে স্বাদ আনতে পারতাম না। বেগুন দিতে হত। কুমড়ো দিয়েও করেছি অনেকসময়। আজকাল শুধু কালোজিরের ঝোলটাও বানাতে শিখেছি। মাছটা ভালো হতে হবে। সর্ষের তেলে কালোজিরে আর কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ওর মধ্যেই মাছটা একটু সাঁতলে নেওয়া। এর মধ্যেই একটা কাপে একটু গরম জলে লাল লঙ্কা, হলুদ, কাশ্মিরি লঙ্কা গুলে রাখি। মাছটা হাল্কা ভাজা হলেই সেই গরম জল ঢেলে নিই। তারপর সেই ঝোল কখন নামাতে হবে সেটা করতে করতে অভ্যেস হয়েছে। রেসিপিটা খুবই সহজ। কিন্তু পারফেকশনটা আয়ত্ব করা কঠিন। কাজাখ্স্তানে খুব ভালো স্যামন পেতাম। তাতেও এটা করেছি। ঝোলের রং হবে টুকটুকে লাল। মা সেটা কাশ্মিরী লঙ্কা ছাড়াই আনে। আমি পারি না। আরো পারি না ইলিশ মাছের মাথার কাঁটাচচ্চড়ি। আমি বানাই মাছের মাথার সাথে বেগুন, কুমড়ো, ঝিঙে দিয়ে। খারাপ খেতে হয় না। কিন্তু মা শুধু মাছের মাথা দিয়েই বানায়। আমি সেটা পারিনা এখনও। কে জানে কোনদিন পেরে উঠবো কিনা। সর্ষের ঝোল ঠিকঠাকই নেমে যায়। কিন্তু সর্ষেভাপেতে কিছুতেই আকাঙ্খিত ঝাঁঝটা আসতো না। ভাবতাম মা যেমন বলে তেমনই তো করি, তাও কেন পারি না। কাজাখ্স্তানে থাকার তিনবছর প্রতি গ্রীষ্মে বাড়ি গেছি। একবার মায়ের সামনে থেকে সর্ষেভাপা বানানো দেখলাম। বুঝলাম আমার ঘাটতি তেলের পরিমানে। আমি যা তেল দিই মা দেয় তার চারগুণ। তবে না আসবে সেই লাবণ্যময় ঝাঁঝ! করলাম দুবার মায়ের তত্বাবধানে। উৎরে গেল। আবার করতে চাইলে পারবো না জানি। কারন তেল দিতে হাত কাঁপবে।

তিনবছর পর আমেরিকা ফিরে দেখলাম ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এক কেজির বেশি ইলিশ হলে প্রতি পাউন্ডে দাম $১৪.৯৯। দেড় কেজি ছাড়ালে $১৭.৯৯। কষ্টেসৃষ্টে যে মাছ কিনে উঠতে পারলাম তার দাম পড়ল পঁয়ত্রিশ ডলার। প্রথমে ভাবলাম ঠকালো বুঝি। তারপর খোঁজ নিয়ে দেখি সব জায়গাতেই এইরকমই দাম। আমি আর মিঠুন তাই ঠিক করেছি ইলিশ এবার স্বপ্নেই থাক। থাকুক ইলিশ আমাদের ছোটবেলার স্মৃতি হয়ে, শিমুলতলার জোনাক জ্বলা ইউক্যালিপটাস গাছ হয়ে, আমার মায়ের বাড়ি ফেরা হয়ে। আশুতোষ কলেজ থেকে ফেরার একটা দিনের কথা মনে পড়ছে। স্টেশনে নেমে বাবার সাথে দেখা। সেদিন কিছু একটা রেজাল্ট বেরিয়েছে। বাবাকে বললাম। বাবা বলল - বাড়ি যাও, আমি মাছ নিয়ে ফিরছি। ইলিশ মাছ আসছে। পেটটা একটু খারাপ। সে ঠিক আছে - বাড়ি গিয়েই দুটো এন্ট্রোকুইনল মেরে দেবো - কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। সাইকেলের প্যাডেলে চাপ নিই। আহা কি আনন্দ!