About Me

I am like a pebble lying beside the road for ages. I observe and think. Sometimes I want things to be changed. But I am not an active person at all. So I just lie down and watch the play taking place around me. Somehow I enjoy the solitude I live in. I am happy with the package I came with. This beautiful earth, sunshine and rain…

Sunday, May 23, 2010

The Stoning of Soraya M. (2008)

দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম - সুরাইয়া মানুচেহরির গল্প। ১৯৮৬ সালের ইরানের পটভূমিতে তৈরী ২০০৮ সালের সিনেমা। পরিচালনা করেছেন ইরানিয়ান বংশোদ্ভুত আমেরিকান সাইরাস নৌরাস্তা। কাহিনীসূত্র ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ফ্রিদো সাহেবজামের একই নামের বইটি। সত্যঘটনা অবলম্বনে।

সুরাইয়া ইরানের এক গৃহবধূ। দুই ছেলে আর দুই মেয়ের মা। মধ্যবয়স্ক স্বামী আলি জেলের আধিকারিক। এক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে আলি বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দেয় তার চোদ্দ বছরের মেয়ে মেহরির বিনিময়ে। কিন্ত দুইখানা বিয়ে করে দুই সংসারের বোঝা টানার তার মোটেই ইচ্ছে নেই। তাই সে সুরাইয়াকে তালাক দিতে চায়। দুই ছেলেকে নিয়ে মেহরীকে বিয়ে করে সে আলাদা সংসার পাতবে। সুরাইয়া থাকুক মেয়েদুটোকে নিয়ে। তার কাজে সে সঙ্গে নেয় গ্রামের মৌলবীকে – যে নিজেও ১৯৭৯-র ধর্মীয় আগ্রাসনের আগে ছিল একজন জেল খাটা আসামী। মৌলবী সুরাইয়াকে জানায় একজন ভালো স্ত্রী হিসেবে তার উচিত তার স্বামীর ইচ্ছায় সম্মতি দিয়ে তালাকে রাজি হওয়া। তারপর তার দেখাশোনার জন্য মৌলবী তো আছেই। সুরাইয়া রাজী হতে পারে না তার মেয়েদের কথা ভেবে। বিবাহবিচ্ছিন্ন হলে তাদের ভরনপোষন করবে কে? আলি যে এক ফোঁটাও খোরপোষ দেবে না তা তো তার অজানা নয়!

ইতিমধ্যে মোটর মেকানিক হাসেমের বউ মারা যায়। ঘরে তার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। সুরাইয়া হাসেমের বাড়ির দেখাশোনা, রান্নাবান্নার কাজ নেয়। দুটো পয়সাও হাতে আসে। আরো কিছু জমলে সে হয়তো আলিকে তালাক দিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু আলির সময় নেই অতদিন অপেক্ষা করার। সে অন্য ফন্দি আঁটে। গ্রাম পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানায় সুরাইয়া হাসেমের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। প্রহসনের বিচারে সে অভিযোগ প্রমানও হয়। শরিয়তী আইনে তার শাস্তি মৃত্যু। যেমন তেমন মৃত্যু নয় – পাথর ছুঁড়ে মৃত্যু।

সুরাইয়ার যে একমাত্র বন্ধু – খটখটে স্বভাবের জন্য গ্রামে সব লোকে যাকে একটু সমঝে চলে – সেই পিসি জেহরা তাকে জিজ্ঞাসা করে – ভয় করছে খুব? সুরাইয়া বলে – মৃত্যুর ভয় না, যন্ত্রনার ভয়। পাথরগুলোকে ভয়। মেয়েদুটোকে শেষবারের মত আদর করে খুব। ছোটো ছেলেটা এসে জানতে চায় – মা তুমি কি করেছো যে তোমায় পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে? সুরাইয়া তাকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদে। বড়ছেলে এসে মায়ের কোল থেকে ভাইকে সরিয়ে দেয়। সে ততদিনে পুরুষ হয়ে গেছে। সে জেনে গেছে তার মা আসলে একজন মেয়েমানুষ ছাড়া আর কিছু না। তার সমগোত্রীয় তো নয়ই। কথা না শুনলে তাকে শাস্তি দেওয়ার পূর্ণ হক আছে সমাজের। সুরাইয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বধ্যভূমিতে। একটা গর্ত খুঁড়ে তার শরীরের নিম্নাংশ মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। রক্তপিপাসু জনতা পাথর ছুঁড়ে থেঁতলে দিতে থাকে জেগে থাকা বাকি অর্ধাংশকে।

অনেকদিন আগে একটা সিনেমা দেখেছিলাম – দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অফ ক্রাইস্ট। সেখানেও পাথর ছুঁড়ে মারার একটা দৃশ্য ছিল। সেখানেও অপরাধী একজন নারী – নগরগণিকা মেরি ম্যাগডালিন। তফাত একটাই – সেদিন মেরিকে রক্ষা করেছিল এক ইহুদী যুবক – যার নাম যীশু। এখানে কোন যীশু আসে না। রক্তাক্ত মুখে সুরাইয়া অর্ধপ্রোথিত অবস্থায় দেখতে থাকে তার বড়ছেলে পাথর ছুঁড়ছে তার দিকে। কি জানি কি ছিল তার দৃষ্টিতে! বিস্ময়? নাকি হতাশা? নাকি সেই প্রচণ্ড শারীরিক যন্ত্রণায় মৃত্যুভয় ছাড়া আর কোন অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে না? ঠিক কতখানি যন্ত্রণা মানুষকে সহ্য করতে হয় অচেতন হওয়ার আগে? ঠিক কতখানি শক্তি মানুষের মধ্যে থেকে যায় তার অজান্তে, তার অনিচ্ছায়?

কখনও ভাবিনি এই শতাব্দীর পটভূমিতে তৈরী কোন ছবিতে পাথর ছুঁড়ে মারার দৃশ্য দেখতে হতে পারে। অথচ এ তো শুধু ছবি নয়, এটা সত্য। হয়তো এই ছবি দুনিয়ায় ক্রমাগত বেড়ে চলা ইসলাম বিদ্বেষকে আরো একটু বাড়িয়ে দেবে। সভ্য মানুষের দল “জানতামই তো, ওরা তো ওইরকমই” বলে আত্মতৃপ্তিতে পাশ ফিরবেন। কিন্তু এ কাহিনী কি এতই সরল? দুর্বলের ওপর অত্যাচার পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম অনুমোদন করেছে। বিশেষ করে মেয়েদের ওপর অত্যাচার। তার কারন কি এই যে মেয়েরা কখনো সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারে নি? জৈবিক নিয়মেই তাদের পুরুষকে প্রয়োজন হয়েছে। ঘৃণা, অপমান, ছলনা সহ্য করার পরেও তার শরীর আর তার মনের মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে লুকিয়ে থাকা ঘর বাঁধার সুপ্ত ইচ্ছা পুরুষের ডাকে দুর্বল হতে বাধ্য হয়েছে। এই ছবিটা দেখতে দেখতেই মনে হচ্ছিল গ্রামের প্রতিটা মেয়ে যদি সেদিন সুরাইয়াকে ঘিরে থাকতো তাহলে কি সম্ভব হত পাথর ছুঁড়ে মারা? কতগুলো মানুষকে পাথর ছুঁড়ে মারা যায়? কিন্তু জেহরা ছাড়া আর কেউ সেদিন প্রকাশ্যে প্রতিবাদটুকুও করে নি। তারা গোপনে কেঁদেছে। কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় নি। যারা পাথর ছুঁড়ছে তারা যে তাদেরই ঘরের পুরুষ। অন্যায় হচ্ছে জেনেও ঘরের মানুষের প্রতি এই দায়বদ্ধতা এটার কারন কি শুধুই ভয়? শুধুই অর্থনৈতিক নির্ভরতা? তাহলে তথাকথিত সভ্যসমাজে – আমাদের সমাজে – যেখানে পাথর ছুঁড়ে মারার মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা ইতিহাসের বইয়ে পড়া গল্পের মত শোনায় – সেখানেও কেন উপেক্ষা করতে হয় নিজের পুরুষটির পাপ? এক অলীক শান্তির লোভ কেন বারবার দুর্বল করে মেয়েদের?

কোন নারীবাদী দলিল হয়ে ওঠা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আঙুল তোলা তো নয়ই। একটি মেয়ের একদম অকারণে নৃশংসতম মৃত্যু হল। খুব সাধারণ একটি মেয়ে। জোয়ান অফ আর্কের মত কোন আগুন তার বুকে ছিল না – যার জোরে সে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা কাপুরুষদের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দিতে পারে। তার চিন্তা ছিল শুধু তার মেয়েদুটিকে নিয়ে। সে চলে গেলে তাদের কে দেখবে। চেতনার শেষ সীমায় চলে গিয়েও তার রক্তমাখা আধবোজা চোখে স্বপ্নের মত, হয়তো বা স্বর্গের ফরিস্তার মত ভেসে উঠেছিল তার দুই মেয়ের মুখ। ঠিক কতখানি অর্থহীন অপচয়ের পর মানুষ জীবনের মূল্য বোঝে? ঠিক কতখানি বিষে নীল হলে তার খেয়াল হয় যে সে আসলে অমৃতের সন্তান? ছবির শেষ দৃশ্যে ফরাসী-ইরানীয়ান সাংবাদিক ফ্রিদোকে সুরাইয়ার কাহিনী বলার পর আকাশের দিকে দু’হাত তুলে জেহরা বলেন – নাউ দ্য ওয়ার্ল্ড উইল নো। নাহয় জানলো পৃথিবী। তারপর?